নির্বাচনী ট্রেনে বাংলাদেশ
মনোয়ারুল ইসলাম, ঢাকা থেকে
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৬:৩০ এএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ শনিবার

# ৬ ডিসেম্বর নির্বাচনের সম্ভাবনা
# বিএনপি আশ্বস্ত হলেও নিশ্চিত নয়
# শতাধিক আসনে জামায়াতের প্রার্থীতা ঘোষণা
বিজয়ের মাসেই নির্বাচন। তা ৬ ডিসেম্বরেই হবার সম্ভাবনা। এই ডিসেম্বরেই পাকহানাদার বাহিনী ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মসর্মপন করেছিল। বাঙ্গালী স্বাধীণতা প্রাপ্তি ও বিজয় উল্লাসে মেতে উঠেছিল। আরেকটি যুদ্ধের বিজয় ছিল ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর। ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত বাংলার জনগন লড়াই করেছে স্বৈরাচারি এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে। টানা ৮ বছর লড়াই ও ছাত্রজনতা আন্দোলনে ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচারি এরশাদ পদত্যাগ করে। ২০২৪ এর ৫ আগষ্ট ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনার শাসনের অবসান ঘটে। গঠিত হয় ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার। যাদের প্রধান কাজ হচ্ছে, একটি স্বচ্ছ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী দল বা জোটের কাছে দেশের শাসনভার ন্যস্ত করা। সাথে সংযুক্ত হয়েছে নির্দিষ্ট কিছু সেক্টওে সংস্কার। সংস্কার ও নির্বাচনী আয়োজন পাশাপাশি চালানোর পক্ষে অধিকাংশের মতামত। সে পথেই এগুচ্ছেন ইউনূস। জাপানের এনএইচকে টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়কেও ডিসেম্বরে নির্বাচন করার ব্যাপারে অভিমত জানিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনও জানিয়েছে, ডিসেম্বরে নির্বাচনের আয়োজন সম্ভব। বাংলাদেশ নির্বাচনী ট্রেন উঠে পড়েছে। তা বলাই যায়।
ড. ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোকে আশস্ত করে বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি আশস্ত হলেও নিশ্চিত হতে পারছে না। বাইরের তৎপরতা দেখে অনেকে মনে করতে পারেন, কেবল বিএনপিই নির্বাচনের বিষয়ে বেশি তোড়জোড় করছে। আসলে তা নয়। ভেতরে ভেতরে সব দলই প্রস্তুতি নিচ্ছে। হিসেব করছে, কখন ভোট হলে কার বেশি লাভ।
বিএনপির নেতারা চলতি বছরের মাঝামাঝি নির্বাচনের কথা বললেও ডিসেম্বরকেই ডেটলাইন হিসেবে ধরে নিয়েছে। যে কারণে নির্বাচন প্রশ্নে চাপ বজায় রাখছে সরকারের ওপর। তাদের ধারণা, যতদ্রুত নির্বাচন হবে ততই দল ও দেশের জন্য মঙ্গল। অন্যদিকে অন্যতম গোছানোর রাজনৈতিক দল ধীরগতিতে চলার পক্ষপাতি। তারা কৌশলে দল গোছানোর পাশাপাশি প্রশাসনের ভেতরে তাদের আধিপত্য গড়ে তুলতে নজর রাখছে। তাদেও যুক্তি, সংস্কারের পর নির্বাচনই মঙ্গল। কিন্তু নির্বাচন প্রশ্নে ধীরগতির মনোভাব থাকলেও ভেতওে ভেতওে ভোট যুদ্ধেও প্রস্তুতি সেওে ফেলছে। ইতোমধ্যেই জাতীয় সংসদেও ৩০০টি আসনের মধ্যে শতাধিক আসনে প্রার্থীতা ডিক্লার করেছে। ঐসব আসনে দলীয় প্রার্থীরা মানুষের মন ও আস্থা অর্জন করতে মাঠে নেমে পড়েছে। এর মধ্যে সিলেট বিভাগে ১৯টি, চট্টগ্রামের ১৬ আসনে, ফেনী-৩ (দাগনভূঞা-সোনাগাজী), বান্দরবান আসন, পটুয়াখালীর চারটি, পিরোজপুরে তিনটি, ঠাকুরগাঁওয়ে তিনটি, শরীয়তপুরের তিনটি, নাটোরের চারটি, ফরিদপুরের সব আসনে, দিনাজপুরের ছয়টি, কিশোরগঞ্জে পাঁচটি, ঝিনাইদহের সব আসনে, চুয়াডাঙ্গা-১, সিরাজগঞ্জের পাঁচটি ও সুনামগঞ্জের পাঁচটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। জামায়াতের আমির অবশ্য বলেছেন, এটা প্রাথমিক তালিকা, চূড়ান্ত নয়।
বিএনপি বা অন্য কোনো দল প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে বিএনপি দলীয় সূত্র জানিয়েছে, প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে তারা ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ ও ২০১৮-এ দলীয় প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের পাশাপাশি তরুণ প্রার্থীদের কথাও বিবেচনা করবেন। তবে নির্বাচনের আগে আন্দোলনের মিত্র দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির আসন ভাগাভাগি কিংবা সমঝোতা হতে পারে বলেও মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। অন্যান্য ইসলামী দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টা করছে বিএনপি ও জামায়াত উভয়ই।
সরকারের কর্মকান্ডে সাধারন মানুষ আস্থা রাখতে পারছে না। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কথাবার্তা ও আচরনে মানুষ উদ্বিগ্ন। আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সরকারও কখনো কঠোর আবার কখনো নিয়ন্ত্রনহীন। বিভিন্ন প্রেসার গ্রুপের কারনে সরকারকে দুর্বল সরকার বলে অভিহিত করছেন অনেকে । সিদ্ধান্ত নিতে ধীর গতি লক্ষনীয়। দেশের সিংহভাগ মানুষের মতামত নির্বাচনের পক্ষে। তাদের অভিমত নির্বাচন যত দ্রুত হবে ততই মঙ্গল। রাজনৈতিক সরকারই রাষ্ট্রযন্ত্রের নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে।