জন্ম নাগরিকত্ব বাতিল আদেশ আটকে দিল আদালতে
আজকাল রিপোর্ট -
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৬:৪২ এএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ শনিবার
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত অভিবাসিদের সন্তানকে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকারকে রদ করতে এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। তৃতীয় ফেডারেল বিচারপতি সেই নির্বাহি আদেশকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি আটকে দিয়েছেন। গত সপ্তাহে সিয়াটল ও মেরিল্যান্ডের বিচারপতিদের দুজনের একইরকম রায়ের পর নিউ হ্যাম্পশায়ারের ডিসট্রিক্ট জাজ জোসেফ এন ল্যাপলান্ট এই রায় দিয়েছেন। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের দায়ের করা এক মামলায় দাবি করা হয়, ‘ট্রাম্পের আদেশ সংবিধানকে লঙ্ঘন করছে এবং আমেরিকার সংবিধানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক মূল্যবোধকে পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
ট্রাম্পের রিপাবলিকান প্রশাসন জোর দিয়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন, এমন বাবা-মার সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রের ‘এখতিয়ারের অধীন’ নয়, তাই তারা নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকারী নয়। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, ১৯ ফেব্রুয়ারির পর যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া কোনো শিশুর মা-বাবার কেউই মার্কিন নাগরিক বা বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা না হলে সেই শিশুর নাগরিকত্বের স্বীকৃতি না দিতে মার্কিন সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম দিনেই এই আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যা তাঁর কঠোর অভিবাসন নীতির অংশ।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশকে সিয়াটলের বিচারপতি বাধা দেওয়ার পড় ট্রাম্প প্রশাসন রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করেছে। তিনটি মামলার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী যা গৃহযুদ্ধ ও সুপ্রিম কোর্টের ড্রেড স্কট বিষয়ক সিদ্ধান্তের পর ১৮৬৮ সালে অনুমোদিত হয়; সুপ্রিম কোর্টে রায় দেওয়া হয়েছিল, যেখানে দাস প্রথা নিষিদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের এমন রাজ্যে বাস করা সত্ত্বেও স্কট নামের ক্রীতদাস সে দেশের নাগরিক নয়।
১৮৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র বনাম ওং কিম আর্ক হিসেবে পরিচিত এক মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট জানতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্ম নেওয়ার পরেও যে শিশুরা স্বাভাবিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পায়নি তারা কূটনীতিকদের সন্তান, যাদের অন্য সরকারের প্রতি আনুগত্য রয়েছে, বিরোধীদের দখলদারির সময় যুক্তরাষ্ট্রে থাকা শত্রু, বিদেশি জাহাজে জন্ম নেওয়া শিশু ও সার্বভৌম নেটিভ আমেরিকান জনজাতি সদস্যদের সন্তান।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থে আইনের শাসন অবজ্ঞা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের সিয়াটলের একজন ফেডারেল বিচারক। জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার বাতিল করে ট্রাম্পের স্বাক্ষরিত নির্বাহী আদেশকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেছেন তিনি।
মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট বিচারক জন কফেনোর দুই সপ্তাহ আগে ট্রাম্পের ওই নির্বাহী আদেশকে সাময়িক স্থগিত করেছিলেন। এবার সেটিকে দেশজুড়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করে একটি আদেশ জারি করেছেন তিনি।
রিপাবলিকান দলের সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ১৯৮১ সালে জন কফেনোরকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। এই বিচারক বলেন, ‘এটি ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, আমাদের প্রেসিডেন্টের কাছে আইনের শাসন তাঁর নীতি বাস্তবায়নের পথে একটি বাধা ছাড়া আর কিছুই নয়। রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্যই হোক না কেন- ট্রাম্পের কাছে আইনের শাসন পাশ কাটিয়ে যাওয়া বা শুধু উপেক্ষা করা সাধারণ একটি বিষয়।’
গত ৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ট্রাম্প প্রশাসন ওই বিচারকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে যাচ্ছে বলে একটি নোটিস দাখিল করে। তবে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও হোয়াইট হাউস থেকে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া পাওয়া যায়নি।
ডেমোক্র্যটিক শাসিত অঙ্গরাজ্য ওয়াশিংটন, অ্যারিজোনা, ইলিনয় ও ওরেগনের কর্তৃপক্ষ এবং বেশ কয়েকজন গর্ভবতী নারীর মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক এই আদেশ দিয়েছেন। এই আদেশ মামলাটিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মামলার বাদীদের যুক্তি, ট্রাম্পের ওই নির্বাহী আদেশ মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত একটি অধিকারের লঙ্ঘন। যেখানে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী যে কেউই দেশটির নাগরিক হিসেবে গণ্য হবে।