ইমিগ্রেশন নিয়ে সোসাইটির বিশেষজ্ঞ সভা
আজকাল রিপোর্ট -
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৮:০৪ এএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ শনিবার

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত সাম্প্রতিক তৎপরতায় আতঙ্কিত প্রাবসী বাংলাদেশিদের আতঙ্কিত না হওয়েয় সচেতন ও সতর্কতার সঙ্গে চলাচলের পরামর্শ দিলেন ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে এ ধরনের কোন পরিস্থিতিতে পড়লে দ্রুত আইনজীবির সঙ্গে যোগাযোগের কথা বলেছেন তারা।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযোগিতায় সোসাইটি বিভিন্ন পদক্ষেপের পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক পরামর্শ সভায় ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা এসব পরামর্শ দেন। গত ১০ ফেব্রুয়ারি জ্যাকৎস হাইটসের নবান্ন হলে আয়োজিত সভায় তিনজন ইমিগ্রেশন এটর্নী খায়রুল বাশার, অ্যাটর্নি স্ট্যানলি ওয়াইন, অ্যাটর্নি সুজান স্কোইয়্যার উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রদের পরামর্শ দিয়ে খায়রুল বাশার বলেন, ২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের বিশেষ আদেশ জারির পর জেএফকে এয়ারপোর্টে অবতরণ করে অনেক বাংলাদেশি ও ভারতীয় স্টুডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারেনি। এয়ারপোর্ট থেকেই তাদেরকে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। অনেক সময় স্টুডেন্ট ভিসাধারীদের টুকটাক কাজ করেন। ব্যাংকে অনেকের ডলারও জমা হয়। কেন এত ডলার জমা হয়েছে? কোত্থেকে এসেছে এই অর্থ? এমন প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়।
তিনি আরও জানান, একজন ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট সেমিস্টার পরবর্তী ছুটি শেষে বাংলাদেশ থেকে ফেরার সময় জেএফকে এয়ারপোর্টে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন। জিজ্ঞাসাবাদকালেই তার ফোন নিয়ে পরীক্ষা করে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস কর্মকর্তারা অনেক তথ্য পান যাতে বুঝা যায় তিনি ভিসার বিধি লংঘন করে কাজ করেছে। এরপরই তাকে আটক করা হয়। দু’ঘণ্টার মধ্যেই আটক শিক্ষার্থী আমার সাথে যোগাযোগ করেন এবং আমাকে তার অ্যাটর্নি হিসাবে নিয়োগ দেন। তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। তবে সে সময়েই তাকে মুক্তি দেয়া হয়নি। সপ্তাহখানেক কাটাতে হয়েছে প্যারলে মুক্তির আদেশ পাওয়া পর্যন্ত। তাই সাথে ফোন না রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। এছাড়া ঠিকমতো হোটেল বুকিংসহ অন্যান্য তথ্য ঠিক মতো রাখতে হবে।
অ্যাটর্নি স্ট্যানলি ওয়াইন বলেন, ট্রাম্পের টার্গেট হচ্ছে ক্রিমিনাল অবৈধ অভিবাসীরা। এছাড়া যাদের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন নাকচ হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও বহিষ্কারের আদেশ জারি হয়। তেমন লোকজনকে খুঁজে পেলেই গ্রেফতার করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের জন্যে। তাই সবাইকে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। বরং সতর্ক থাকতে হবে। এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেই নিজের আইনজীবীকে ফোন করতে হবে। এছাড়া, আইসের এজেন্টের কোন কথার জবাব না দিয়ে বলতে হবে আইনজীবী ছাড়া আমি কথা বলবো না। এছাড়া যাদের গ্রিনকার্ড বা যারা ওয়ার্ক পারমিট পেয়েছেন তারা সবসময় তা সাথে রাখবেন। আরা যারা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন, কিন্তু ওয়ার্ক পারমিট পাননি, তারা আবেদনের রশিদটি সাথে রাখবেন। সেটিও আইসের অভিযান থেকে আপনাকে রক্ষা করতে সহায়ক হবে।
বাশার বলেন, এক্ষেত্রে যদি কারো বাসায় আইস (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) এর এজেন্ট আসে এবং দরজা নক করেন, তাহলে কখনোই দরজা খোলা উচিত হবে না। আইসের এজেন্ট যদি বহিষ্কারাদেশের নথিও দেখায়, তবুও দরজা খুলবেন না। তবে তারা যদি আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখায় তাহলে ভিন্ন কথা। গ্রেফতারি পরোয়ানা ব্যতিত কোন বাসায় জোরপূর্বক প্রবেশের অধিকার কোন সংস্থারই নেই। এছাড়া যাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নাকচ হয়েছে এবং বহিস্কারের আদেশ জারি হয়েছে, তারা এখন ঐ আবেদন পুনরুজ্জীবিত করতে পারবেন। কারণ বাংলাদেশের পরিস্থিতি পাল্টেছে। দেশে ফিরলেই প্রাণনাশের মারাত্মক হুমকি অথবা গ্রেফতার-নির্যাতনের প্রবল আশংকা তৈরী হয়েছে-এমন যুক্তির অবতারণা করে। মামলাটি যদি পুনরুজ্জীবিত হয় তাহলে ট্রাম্পের এই অভিযান থেকে নিজেকে রক্ষার একটি সুযোগ তৈরী হবে। বর্তমানের ভীতিকর পরিস্থিতির কারণে সপ্তাহে একদিন তিনি ফ্রি পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যে নিজের অফিস খোলা রাখেন বলে জানালেন অ্যাটর্নি খায়রুল বাশার।
এই পরামর্শ সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সোসাইটি’র সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম। সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলীর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা, আজকাল সম্পাদক শাহ নেওয়াজ। উপস্থিত ছিলেন সোসাইটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মহিউদ্দিন দেওয়ান, ভাইস প্রেসিডেন্ট কামরুজ্জামান কামরুল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অনিক রাজ, প্রচার সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ, স্কুল ও শিক্ষা সম্পাদক হাসান জিলানী, নির্বাহী সদস্য জাহাঙ্গীর সোহরাওয়ার্দী, সোসাইটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী, জ্যাকসন হাইটস এলাকা থেকে সিটি কাউন্সিল মেম্বার প্রার্থী শাহ শহিদুল হক সাঈদ, কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, জ্যাকব মিল্টন, নীরা রাব্বানী প্রমুখ ছিলেন ।