নিউইয়র্কে ডিমের ডজন ১২ ডলার
হাসান মাহমুদ
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৮:১২ এএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ শনিবার

নিউইয়র্কের বাজারে ডিমের আকাশচুম্বি দাম ও ডিম সংকটের কারণে হাহাকার শুরু হয়েছে। খুচরা বাজারে এক ডর্জন সাধারণ ডিমের দাম কোন দোকানে ১০ ডলার আবার কোন দোকানে ১২ ডলার। অর্গানিক ডিমের দাম ১৩ ডলারের বেশি। তাও পর্যাপ্ত পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানা যায়। এ কারণে অনেক সুপারমলে ডিম চুরির ঘটনা ঘটতে শুরু হয়েছে বলে জানা যায়। এদিকে ডিমের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে অনেকে বাসায় ডিম মজুদ শুরু করছেন। একই চিত্র এখন পুরো যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বলে জানা যায়। বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ অন্যান্য কমিউনিটির মানুষ ডিমের এমন সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে হতবাক। বার্ড ফ্লু প্রকোপের কারণে লাখ লাখ মুরগি মেরে ফেলায় বাজারে ডিমের এই ব্যাপক সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়। যুক্তরাষ্ট্র রেকর্ড পরিমাণে ডিম ইমপোর্ট করে কানাডা এবং নেদারল্যান্ডস থেকে। ট্রাম্প প্রশাসন কানাডা থেকে পণ্য আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার ঘোষণার পর সেই থেকে বাজার গরম হয়ে আছে। শুল্ক আরোপ সাময়িক স্থগিত করার পরও সেই বাজার আর স্বাভাবিক হয়নি বরং অচিরেই স্বাভাবিক হবার কোন আভাসও নেই বলে ব্যবসায়িরা মনে করছেন। দেশের বাজারে ডিম উৎপাদন বাড়াতে হলে আগামী এক বছর ধরে অপেক্ষা করতে হবে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভাইরাসে আক্রান্ত মুরগির সংখ্যা বাড়তে পারে। গত নভেম্বরে প্রায় ৭ মিলিয়ন, ডিসেম্বরে ১৮ মিলিয়ন এবং জানুয়ারিতে ২৩ মিলিয়ন মুরগি ফ্লু আক্রান্ত হয়েছে। বার্ড ফ্লুর প্রকোপে ব্যাপক মড়ক লেগেছে পোল্ট্রি খাতে। হাঁস-মুরগির সংখ্যা কমতে থাকায় ডিম বিক্রি সীমিত করে দিয়েছে সুপার স্টোর ও গ্রোসারিগুলো। এতে ডিমের সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম হওয়ায় হওয়ায় আশঙ্কাজনক হারে চুরি বেড়েছে দোকানগুলোতে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে চুরির তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ।
মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) তথ্য অনুসারে, ২০২২ সাল থেকে বার্ড ফ্লুতে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যে ১৫০ মিলিয়নেরও বেশি পোল্ট্রি মুরগি মারা গেছে। ভাইরাসটি মোকাবেলায় হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।
ইউএসডিএর প্রাণী ও উদ্ভিদ স্বাস্থ্য পরিদর্শন পরিষেবা বলছে, গত ৩০ দিনে বিপুল সংখ্যক মৃুরগিতে বার্ড ফ্লু পজিটিভ পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় গ্রাহকদের জন্য ডিম সরবরাহ সীমিত করে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সুপার স্টোর ও মুদি দোকান মালিকরা। একজন গ্রাহকের কাছে এক ডজনের বেশি ডিম বেচতে রাজি হচ্ছেন না অনেক বিক্রেতা। কোন কোন দোকানে আবার একটি পরিবারের সদস্যপ্রতি তিনটি ডিম বিক্রির সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। অনেক জায়গায় আবার দুটি ডিমের বেশি ক্রয় করতে পারছেন না গ্রাহকরা। সেইসঙ্গে ডিমের দামও বেড়ে গেছে অস্বাভাবিক হারে।
মার্কিন শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ প্রকাশিত কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স অনুযায়ী, এক বছর আগের তুলনায় এ বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে ৩ শতাংশ দাম বেড়েছে নিত্যপণ্যের। কিন্তু শুধু ডিমের দাম বেড়েছে ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। এদিকে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কমে যাওয়ায় আশঙ্কাজনক হারে চুরির ঘটনা বেড়েছে মুদি দোকান এবং সুপারমার্কেটগুলোতে।
চলতি মাসে প্রায় ৪০ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের এক লাখ অর্গানিক ডিম চুরির ঘটনা ঘটেছে পেনসিভানিয়ার গ্রীণ ক্যাসল থেকে। টাকার অভাবে এসব ডিম চুরি হচ্ছে তা নয়; অনেকে পরিবারের সদস্যদের খাওয়ানোর জন্য চুরির আশ্রয় নিচ্ছেন বলে জানা যায়। আগামী কয়েক মাসেও ডিমের বাজারের এই চিত্র পরিবর্তন হবার কোন সম্ভাবনার চিত্র কারো কাছে নেই।