তারেককে নিয়ে নানামুখি ষড়যন্ত্র
মাসুদ করিম, ঢাকা থেকে
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:০৪ এএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ শনিবার

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্ররা এখন দল গঠনে ব্যস্ত। এ মাসেই দল ঘোষণা করা হবে। এই নিয়ে বিএনপি’র মধ্যে আপত্তি প্রবল। বিএনপি বলছে, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দল গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেওয়া গ্রহনযোগ্য নয়। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বিএনপি অনেকটা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে, বিএনপি’র ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদি ছাত্রদলের সঙ্গে জামায়াতের ইসলামী ছাত্র শিবিরের মধ্যে মারামারি পর্যন্ত হচ্ছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক মেরুকরণ স্পষ্ট হচ্ছে। প্রেক্ষপটেও বদল হচ্ছে যথেষ্ঠ। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা সেই প্রশ্নও সামনে আসছে। পরিস্থিতি সামনে এমনভাবে অগ্রসর হচ্ছে যে, একটা অনিশ্চয়তা চারদিকে ঘিরে আছে। কঠিন এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এখন বাংলাদেশ।
ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে সংগঠিত লড়াই চলার সময়ে সবাই ছিলো ঐক্যবদ্ধ। এখন সেই ঐক্যে ফাটল ধরেছে। সরকার জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সবাইকে এক সঙ্গে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কিস্তু বাস্তবে ঐক্য নেই। ছাত্র এবং বিএনপি মুখোমুখি হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা সবচেয়ে বেশি। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নেওয়াদের মধ্যে বিভাজন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা যাদের বেশি; তারা ছাত্র এবং বিএনপি’র মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনার উপায় খোঁজছেন। অভ্যূত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সুযোগ নিয়ে কোনও কোনও মহল দেশের ভাবমূর্তির জন্যে ক্ষতিকর কাজে লিপ্ত হয়েছেন। মাজারে হামলা, বইমেলা, লালন উৎসব এমনকি নাটকের মতো সাংস্কৃতিক উৎসব হুমকি দিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছে। এসব উগ্র-ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর তৎপরতা বন্ধে ছাত্র ও বিএনপি’র মধ্যে ঐক্য খুবই জরুরি। ছাত্রদের দলের ঘোষণা দেবার পর বিরোধ আরও চরম আকার ধারণ করতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষমতার ভাগাভাগি ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। আগামী নির্বাচনে ছাত্রদের জন্যে বিএনপি কিছু আসন ছেড়ে দিলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তাদেরকে কিছু মন্ত্রি দেবার কথাও ভাবতে পারে বিএনপি। বিএনপিপন্থী এক বিশ্লেষক বলেছেন, ছোটবেলা থেকে বসন্ত উৎসব করে আসছি। এখন বসন্ত উৎসব বন্ধ করে দিচ্ছে। সামনে পহেলা বৈশাখ। মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনেস্কোর স্বীকৃত উৎসব। এসবও বন্ধের চেষ্টা হতে পারে। আমাদের নিজস্ব কৃষ্টি-সংস্কৃতি রক্ষার স্বার্থে বিএনপি ও ছাত্রদের মধ্যে ঐক্যের কোনও বিকল্প নেই বলে ওই বিশ্লেষকের অভিমত। তবে এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও অগ্রগতি নেই।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা নিস্পত্তির বিষয়ে যথেষ্ঠ অগ্রগতি আছে। নাইকো মামলা থেকে খালাসের পর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বড় কোনও মামলা নেই। ছোটখাট দুইটি মামলা রয়েছে। এগুলোও দ্রুত নিস্পত্তি হবে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা এখনও রয়ে গেছে। চারটি মামলা নিস্পত্তি হলে তারেকের বিরুদ্ধে আর কোনও মামলা থাকছে না। ফলে তার বাংলাদেশে ফিরে আসার পথ সুগম হবে। তবে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার আগে তারেক রহমান দেশে নাও ফিরে আসতে পারেন। তারেক রহমান আসা মানেই ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হওয়া। পাল্টে যাবে রাজনীতির প্রেক্ষাপট। কিন্তু এখনই তারেক দেশে ফিরলে তাকে নিয়ে একটি মহল নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবে। বিএনপিও নির্বাচনী ট্রাম্পটি তারেককে নিয়েই খেলতে চান। সময়ের অপেক্ষায় রয়েছে তারা। সরকারের একটি অংশ তারেককে নিয়ে ষড়যন্ত্রেও লিপ্ত। তারেককে আটকাতে কিংবা বির্তকিত করতে ষড়যন্ত্র থেমে নেই। ইচ্ছাকৃতভাবে তার বিরুদ্ধে সাবেক সরকারের মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে ধীর গতিতে যাচ্ছে অর্ন্তবর্তী সরকার। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমন্বয়কদের একটি অংশ তারেকককে নিয়ে এক ধরনের অস্বস্তি ভোগ করছে। আগে আসলে নির্বাচন পর্যন্ত জোয়ার টেনে নেওয়া কঠিন। তাই নির্বাচনের সময়ে জোয়ার সৃষ্টি করতে চাইবেন তিনি। শারিরিক সুস্থতা ফিরলে খালেদা জিয়াও দেশে ফিরবেন। বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করার পর বিএনপিপন্থী একজন শিক্ষাবিদ বলেছেন, শারিরীক অসুস্থতা সত্ত্বেও বেগম জিয়ার ব্রেইন কাজ করছে।
এদিকে, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার পক্ষে জামায়াতে ইসলামী অভিমত ব্যক্ত করার পর চাঞ্চল্যেও সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি এই ধরনের ধারণার ঘোর বিরোধিতা করে বলেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আর কোনও নির্বাচন তারা চায় না। জামায়াতে ইসলামীর এখনও কোনও নিবন্ধন পায়নি। আশা করা যায়, জামায়াত শিগগিরই নিবন্ধন ফিরে পাবে। নিবন্ধন ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেয়া যায় না। জামায়াতের বি-টিম খ্যাত এবি পার্টির নিবন্ধন রয়েছে।
অওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা তা নিয়ে ধোয়াশা রয়েছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, আওয়ামী লীগের ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশ নেবার সুযোগ দিতে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের মধ্যে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। নির্বাচনের বিষয়ে ডামাঢোলের মধ্যে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, এমনকি ধর্ষণের মতো আপরাধ বেড়ে চলেছে। পুলিশ অনেকটাই নীরব দর্শক। এসব বিষয় নিয়ে জনমনে ক্ষোভ রয়েছে।
ছাত্রদের দল ঘোষণার পর মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আসতে পারে। নাহিদ ইসলামের নাম নতুন দলের সভাপতি হিসাবে ভাবা হচ্ছে। ফলে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে হবে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন দফতরবিহীন মন্ত্রী মাহফুজ আলম।
বাংলাদেশের রাজনীতির উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যে ভারতের সেনাপ্রধান অভিযোগ করেছেন যে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধান সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করা নিয়ে ভারত খুবই উদ্বিগ্ন। তবে তারা নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার দায়িত্ব নেবার পর পরিস্থিতি নতুন রুপ ধারণ করতে পারে বলে মনে করে ভারত। বাংলাদেশ ও ভারতের সেনাবাহিনীর মধ্যে যোগাযোগ স্বাভাবিক আছে বলে জানান ভারতীয় সেনাপ্রধান। যদিও ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে মাসকাটে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে তারা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাবার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। সম্প্রতি ওভাল অফিসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৈঠক করেছেন। এ বৈঠকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে মোদি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।