ছাত্র রাজনীতিকে লাল কার্ড
আজকাল রিপোর্ট -
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:১৬ এএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ শনিবার
সন্ত্রাসী, ভিসি এবং রাজনীতিকে ‘লাল কার্ড’ দেখিয়েছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা । একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের অবিলম্বে বহিষ্কার দাবি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে শিক্ষার্থীরা কুয়েটের দুর্বার বাংলা প্রাঙ্গণে লাল কার্ড প্রদর্শনের এ কর্মসূচি পালন করেছেন।
এছাড়া ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এসময় কুয়েটের বিভিন্ন সাইনবোর্ড, দেয়ালসহ অন্যান্য স্থানে লাল রং দিয়ে ‘রক্তাক্ত কুয়েট’সহ বিভিন্ন লেখা লিখে গ্রাফিতি অঙ্কন করেছেন তারা।
বিক্ষোভে ‘শিক্ষা-সন্ত্রাস একসঙ্গে চলে না’; ‘আমার ভাইকে মারল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’; ‘সন্ত্রাসীদের ঠিকানা, এই কুয়েটে হবে না’; ‘শিক্ষার্থীর রক্ত ঝরে, প্রশাসন তামাশা করে’; ‘ঝড়ছে আমার ভাইয়ের রক্ত, সন্ত্রাসী তোদের পরিণাম তিক্ত’; ‘কুয়েটে যখন রক্ত ঝরে, আবরার তোমায় মনে পড়ে’; ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও কুয়েটের দুর্বার বাংলায় স্থাপিত ভাস্করে্যর চোখ কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, কুয়েট একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। কুয়েটে কোনো রাজনৈতিক কর্মকা- হবে না। কুয়েট সাধারণ শিক্ষার্থীদের। এখানে কেউ রাজনীতি করতে চাইলে তাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্রমৈত্রীসহ সকল ছাত্র সংগঠনের নাম উল্লেখ করে তাদের লাল কার্ড দেখানোর ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরে কুয়েট শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া চলছিল। সোমবার তারা ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ করেন। মঙ্গলবার সকালে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে। পরে উপাচারে্যর কার্যালয় ঘেরাও করলে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাগবিত-া হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা ‘এই ক্যাম্পাসে হবে না, ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা’; ‘ছাত্র রাজনীতি ঠিকানা, এই কুয়েটে হবে না’; ‘দাবি মোদের একটাই, রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস চাই’ -সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে হলগুলো প্রদক্ষিণ করেন। পরে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে ছাত্রদের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া কুয়েটের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। নগরীর রেলগেট, তেলিগাতিসহ আশপাশের বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের সঙ্গে এবং সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের অধিকাংশের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত লক্ষ করা গেছে।
সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্র হাতে বেশ কয়েকজনকে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে দেখা যায়। সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্র (রামদা) হাতে অবস্থান নেওয়া দৌলতপুর থানা যুবদলের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমানকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ব্যর্থতার দায় স্বীকার এবং নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের পদত্যাগসহ ৫ দফা দাবিতে বুধবার দুপুর দেড়টায় প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) একাডেমিক কার্যক্রম আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। বুধবার ১৯ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেটের ৯৮তম বিশেষ জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।