রোববার   ২০ এপ্রিল ২০২৫   বৈশাখ ৬ ১৪৩২   ২১ শাওয়াল ১৪৪৬

শাহরিয়ার আলমের হাসপাতালে অবরুদ্ধ চার সমন্বয়ক, পরে উদ্ধার

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:০৬ এএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ বুধবার

সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের মালিকাধীন রাজশাহীর বারিন্দ মেডিকেল কলেজে গিয়ে অবরুদ্ধ হয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক এক কেন্দ্রীয় সমন্বয়কসহ চারজন।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে তাদের উদ্ধার করে পুলিশ। এরআগে দুপুরে তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলা হয়েছিল।

তারা হলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মেশকাত চৌধুরী মিশু। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী। বাকিরা হলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠনের জেলা কমিটির মুখ্য সংগঠক সোহাগ সরদার, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল বারী ও রাবির শিক্ষার্থী আল-সাকিব। এ ছাড়া আব্দুল বারী ও সোহাগ সরদার রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী।

জানা গেছে, বারিন্দ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মালিক আওয়ামী সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন। হাসিনা সরকার পতনের পরে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। তবে শাহরিয়ার আলমের বাবা শামসুদ্দিন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বর্তমানে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানা গেছে।

বারিন্দ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. বেলাল উদ্দীন জানান, তারা সোমবার এসে সচিবের সঙ্গে কথা বলে গিয়েছিলেন। আজ তারা (ডা. বেলাল) সঙ্গে বসার কথা ছিল। কিন্তু তার সঙ্গে না বসে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কক্ষে যান তারা। বিভিন্ন কথাবার্তা বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। কলেজে অনুষ্ঠান চলছে। তাই আগে থেকেই পুলিশ ছিল। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পুলিশ সেনাবাহিনীকে খবর দেই। পরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কুইক রেসপন্স টিমের (সিআরটি) সদস্যরাও আসেন। তারা চার জনকে থানায় নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে, সন্ধ্যায় ওই চার ছাত্রনেতাকে নগরীর চন্দ্রিমা থানা থেকে অন্য ছাত্রনেতাদের জিম্মায় দেওয়া হয়।

আরএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের মেডিকেল কলেজ থেকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তাই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।”

ঘটনার বিষয়ে সন্ধ্যায় সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মিশু গণমাধ্যমে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠিয়েছেন। এতে তিনি লেখেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে দেশের ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের আশ্রয় প্রশ্রয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। বেশ কয়েকদিন ধরে বারিন্দ মেডিকেল কলেজ থেকে আমাদের কাছে বেশকিছু অভিযোগ আসতে থাকে। সেখানে আওয়ামী লীগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাবার (যিনি শাহরিয়ার আলমের অবর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন) আশ্রয়ে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী কর্মরত রয়েছেন।”

তিনি আরও লেখেন, “চলমান অপারেশন ডেভিল হান্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে আমরা সেখানে তথ্য সংগ্রহ করতে যাই। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত সচিব তাজুল ইসলাম রনির সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনায় বসি। আলোচনার একপর্যায়ে সেখানে কর্মরত বেশ কয়েকজন অফিস স্টাফ (যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত) এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী ঢুকে পড়েন এবং আমাদের বাগবিতণ্ডা শুরু করেন। এর মধ্যে রুম এবং প্রতিষ্ঠানটির বাইরে মব তৈরি করে আমাদের আটকে ফেলা হয় এবং ইচ্ছাকৃতভাবে চাঁদাবাজ বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়।”

মিশু লেখেন, “আমরা এই ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছি। অনতিবিলম্বে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তরের দাবি জানাচ্ছি।”