রোববার   ২০ এপ্রিল ২০২৫   বৈশাখ ৬ ১৪৩২   ২১ শাওয়াল ১৪৪৬

ওয়াকার-ইউনূস সম্পর্কে নতুন মোড়

বিশেষ রিপোর্ট

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৪৬ এএম, ১ মার্চ ২০২৫ শনিবার


 

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্যে এখন সর্বত্র তোলপাড় চলছে। এ কীসের ইঙ্গিত দিলেন তিনি! চারপাশের ঘটনা প্রবাহে সেনাবাহিনীর অস্বস্তির কথাটা এতটা স্পষ্টভাবে সাধারনত বলতে দেখা যায় না। অলঙ্কার বর্জিত উপায়ে ইউনূসের নাম উচ্চারণে সম্পর্কেও জটিল রসায়নের বার্তা দিয়েছেন। সুশৃঙ্খল বাহিনীর ফোর স্টার জেনারেলের কথায় ও আচরণের মর্ম বোঝার সক্ষমতা অনেকের থাকে না। তবে এবার জেনারেলের খোলামেলা মন্তব্যে একটা ঝড়ের পূর্বাভাস স্পষ্ট। তিনি সেটা বলেছেনও। ‘আমি সতর্ক করলাম। সতর্ক না করলে বলবেন সতর্ক করিনি কেন !’ এমন ডায়লগ সেনাপ্রধানের মুখে খুব বেশি শোনা যায় না। তিনি বারবার ‘ড. ইউনূস’ নাম বললেও নামের আগে ‘মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা’ শব্দ বলেননি। এসবই ওয়াকার ও ইউনূসের সম্পর্কের জটিল সমীকরণের আভাস দেয়।
এমনি টানাপোড়নের মধ্যে ড. ইউনূসের আমন্ত্রনে জাতিসংঘের মহাসচিব এন্থোনিও গুঁতেরাস ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রামের দক্ষিণহস্ত ইলন মাস্ক বাংলাদেশ সফরে যাচ্ছেন। বিশ্ব মোড়লদের আঙ্গিনায় দৃঢ় অবস্থানের জানান দিচ্ছেন ড. ইউনূস। প্রশ্ন উঠেছে, এক বনে ২ বাঘের সহাবস্থান কতদিন?
সেনাবাহিনীর সঙ্গে অর্ন্তবর্তি সরকার প্রধানের মতের অমিল সাম্প্রতিক কর্মকান্ডে ক্রমশ প্রকাশ্য হচ্ছে। ডিজিএফআইয়ের ইন্টারগেশন সেল যা ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত, সেটি দেখতে গেছেন প্রধান উপদেষ্টা বিদেশী সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে। গোয়েন্দা সংস্থার ইন্টারগেশন সেল নতুন কিছু নয়। পৃথিবীর সকল দেশেই এমন সেল আছে। কিন্তু বাংলাদেশে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থাটি রাজনৈতিক এমন কি ব্যক্তি বিশেষের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। এটা যেমন সত্য, পাশাপাশি এটাও সত্য যে, প্র্রধান উপদেষ্টা নিজে ‘আয়নাঘর’ দেখতে গিয়ে বিশে^র সামনে সেনাবাহিনীর নিপীড়ক হয়ে ওঠার চরিত্রটিও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শান্তিরক্ষায় সুনাম অর্জনকারী সেনাবাহিনীর নামে এমন কলঙ্ক কাম্য নয়। আয়নাঘর দেখতে না যাওয়ার জন্যে সেনাবাহিনী প্রধান উপদেষ্টাকে  পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু আখেরে প্রধান উপদেষ্টার ইচ্ছাই সবকিছু। তা নিয়ে উত্তরপাড়া ও সরকারের মধ্যে টানাপোড়েন রয়েছে।
অধিকার কর্মি এবং রাষ্ট্র পরিচালনা এক কথা নয়। এটা মেনেই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। আমাদের পাশের দেশ মিয়ানমারে নোবেল বিজয়ী অং সান সূ চি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে দেশটির সেনাবাহিনীর অনেক কলঙ্ক নিজের কাঁধে নিয়েছেন। এমন কি সেনা নির্যাতনে রোহিঙ্গাদের নিজ বসত-বাড়ি এবং দেশ ছেড়ে চলে যাবার পর আন্তর্জাতিক আদালতে সু চি নিজের সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। এত কিছুর পরও মিয়ানমারে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি-কে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে। এটা হয়েছে সেনাপ্রধানের সঙ্গে সরকার প্রধানের মত-পার্থক্যে এমন ঘটনা ঘটেছে। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা চলে না। মিয়ানমারের ইতিহাস সেনা শাসনের ইতিহাস। কিন্তু বাংলাদেশে সেনাশাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের ইতিহাসে সেনারা ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। অনির্বাচিত সরকারকে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা করেছে।
ব্যতিক্রমও আছে। রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিনের সময় একটা ঘটনা ঘটেছিলো। বঙ্গভবনে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আইনি তর্কে জড়িয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা সম্পন্ন সাংবাদিক ও রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোখলেসুর রহমান চৌধুরী। সেখানে তিনি কিছুটা লাঞ্চিত হয়েছিলেন বলে জানা যায়। তারপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার বদলে যায়।
জেনারেল ওয়াকার রাষ্ট্র পরিচালনায় যেসব বিষয়ে তার অস্বস্তি আছে সেগুলো সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তথা গোয়েন্দা সংস্থার নামে অপপ্রচার, পুলিশকে মামলা দেওয়া, পরস্পরের বিরুদ্ধে কাঁদা ছোড়াছুড়ি, সর্বোপরি স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা পর্যন্ত ব্যক্ত করেছেন। জেনারেলের মনের ভেতরে কী আছে সেটা জানা সম্ভব নয়। তবে এটা ঠিক যে, পরিস্থিতি যথেষ্ঠ ঘোলাটে। কারণ রাওয়া ক্লাবে সতর্ক বার্তা উচ্চারণের আগে রেডিসন হোটেলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের নিরাপত্তা উপদেষ্টার এক অনুষ্ঠানে তিন বাহিনী প্রধানের উপস্থিত হওয়া নিয়ে আলোচনা চারদিকে। নির্বাচনের দিনক্ষণ এগিয়ে এলেও ভোটের কোনও রোডম্যাপ এখনও ঘোষণা হয়নি। সেনাপ্রধান ‘ফ্রি, ফেয়ার, ইনক্লুসিভ’ নির্বাচন চলতি বছরেই করতে বলেছেন।
সেনাপ্রধানের বডি ল্যাঙ্গুয়েজে অনেক বার্তায় পাওয়া যায়। ফলে সামনে কী ঘটবে শুধু আগামীই বলতে পারে।