ইউনূস ম্যাজিক: ট্রাম্প মোদিতে হতাশ আওয়ামী লীগ
আজকাল রিপোর্ট -
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৪:৫৪ এএম, ৫ এপ্রিল ২০২৫ শনিবার

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিতে হতাশ আওয়ামী লীগ। ট্রাম্প নির্বাচনে জয়লাভ করায় বেজায় খুশি হয়েছিল ক্ষমতাচ্যুত দলটি। তাদের ধারণা ছিল ভিসা নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ আরোপ করে ইউনূস সরকারকে কুপোকাত করবে ট্রাম্প। মোদি ও ভারতের মন্ত্রণায় ট্রাম্প গদগদ হয়ে বাংলাদেশে বিরুদ্ধে অবস্থান নিবেন। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি হয়েছে। ট্রাম্প ক্ষমতায় এলেই সদ্য পতিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য সুবাতাস বইতে এমন বিশ্বাস ও আস্থা ছিল তাদের মধ্যে। তারা ধরেই নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা এলেই সব কিছুই ম্যাজিকের মতো কাজ করবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সেই বিশ্বাস ও আস্থায় মারাত্মকভাবে চির ধরেছে।
বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে গিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হতে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলিসংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমানও কথা বলেছেন। অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হবে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এই বৈঠকের জন্য সরকারিভাবে অনুরোধ করেছি। আমাদের আশা করার সংগত কারণ আছে যে বৈঠকটি হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।’
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি শুভেচ্ছাবার্তা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব অব্যাহত রাখার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র। ওই শুভেচ্ছাবার্তায় ট্রাম্প বলেছেন, আমেরিকার জনগণের পক্ষ থেকে আমি আপনাকে (ড. ইউনূস) ও বাংলাদেশের জনগণকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই রূপান্তরের সময় বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নিরাপত্তা বৃদ্ধির সক্ষমতা গড়ে তোলার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আগামীতে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব অব্যাহত রাখার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র।
শেষ ভরসা ছিল ভারতের মোদিতে। বিমসটেক বৈঠকে মোদি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সাথে বৈঠক করবেন না এমন খবরে আওয়ামী মহলে খুশবো ছড়াচ্ছিল। কিন্তু বুধবার ভারত জানিয়েছে, থাইল্যান্ডে ইউনূস-মোদি বৈঠক হবে। এতে আওয়ামী মহল শংকিত হয়ে পড়েছে। শেষ ভরসার স্থল মোদিও ইউনূস ম্যাজিকে মজে যাবেন? উইকেটগুলো এভাবে পড়তে দেখে ভীষন শংকিত তারা। তাদের ধারণা ছিল, ইউনূসের চীন সফরের পর ভারত ইউনূস বয়কটের ঘোষণা দেবেন। এখন হচ্ছে তার উল্টো। বরং ভারত কুটনৈতিক ধারায় বাংলাদেশকে কাছে পেতে যাচ্ছে। এতে কপালে ভাঁজ পড়েছে হাসিনা অনুগতদের। আওয়ামী লীগের এক কট্রর সর্মথক প্রতিবেদককে বলেন, ভারত নিতে জানে। দিতে জানে না। ৭৫ ও ২০২৪ তার প্রমাণ।
গেল মাসেই চীন সফর করে ফিরলেন ইউনূস। মর্যাদাপূর্ন এই সফর নতুন মাত্রায় পৌছে গেছে। সফল বৈঠক করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের সাথে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এর আওতায় চীন বাংলাদেশকে মোট ৪০ বিলিয়ন ডলারের একটি প্যাকেজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যার মধ্যে ২৬ বিলিয়ন ডলার বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য এবং ১৪ বিলিয়ন ডলার যৌথ বিনিয়োগ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ থাকবে। তবে এখন পর্যন্ত চীন ৩৫টি প্রকল্পের জন্য ৪ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি বিআরআইয়ের আওতায় ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ বাস্তবায়িত হয়, তাহলে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রায় ৪% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে এই সফরে বিআরআই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।