শনিবার   ০৫ এপ্রিল ২০২৫   চৈত্র ২২ ১৪৩১   ০৬ শাওয়াল ১৪৪৬

যমুনায় ডুববে ইউনূসের অর্জন!

মনোয়ারুল ইসলাম

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৪:৫৮ এএম, ৫ এপ্রিল ২০২৫ শনিবার


যমুনার কর্মকান্ড বাংলাদেশের সাধারন মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে। অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. ইউনূসের কার্যালয় যমুনা। আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তায় তিনি। ১৮ কোটি মানুষের ভরসার নামটি ইউনূস। পতিত শেখ হাসিনা সরকারের দূর্নীতি ও অর্থপাচার করে তলাবিহীন ঝুড়ির দেশটিকে মেরামতের ভার পড়েছে তার ওপর। আইনশৃংখলা ব্যতিত দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক পরিমন্ডলে তার ক্যারিশমা ঈর্ষনীয়। ৮০ বছর বয়সে লড়াই করছেন দেশটিকে এগিয়ে নেবার। প্রতিবেশি বৃহৎ রাষ্ট্র ভারতের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও আশা জাগানিয়ার আলোকবর্তিকা নিয়ে এগিয়ে চলেছেন।
প্রশ্ন উঠছে ২৪’র বিপ্লবের সফলতা নিয়ে। একটিই সফলতা হচ্ছে ১৭টি বছর গণতন্ত্রহীনতা ও পৈশাচিক শাসন ও নির্যাতনের অবসান। যার মধ্যমণি ছিল ছাত্রনেতৃত্ব।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে হাসিনা পতনের এক দফা আন্দোলনের টার্গেট ছিল স্বৈরশাসনের অবসান । বাংলাদেশে সুস্থ রাজনৈতিক ধারার প্রত্যাবর্তন, একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে জবাবদিহিমূলক নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর। রাজনীতি ও গনতন্ত্রহীনতার যে সংস্কৃতি হাসিনা চালু করেছিলেন তা থেকেই মুক্তিই ছিল বিপ্লবের চেতনা।  নির্বাচিতরাই দেশের জনগনের সেবক হিসেবে কাজ করবেন। অনর্বিাচিত সরকার মানেই কিছু ক্ষমতালিপ্সু ব্যক্তি ও সুশীলের আনাগোনা। যাদের কোন জনভিত্তি নেই। তাদের ভাষা মানুষ বুঝে না। তারা আমেরিকা কিংবা বিলেতের ভাষায় কথা বলতে চান। বাংলার সাধারন মানুষের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। নির্বাচনের নাম শুনলেই তাদের জ্বর চলে আসে। সংস্কার সংস্কার করে পাগল হয়ে যান। যেমনটি ১৭ বছর চেতনা চেতনা বলে হাসিনার পাইকপেয়াদাররা জিকির তুলতেন। আর এর পেছনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্ষমতা দির্ঘাায়িত করা।। বেনিফেসিয়ারি হিসেবে ফায়দা লোটা।
নির্বাচনের পথকে এড়িয়ে বেনিফেসিয়ারি কিংবা সুবিধাভোগীরা রসদ ভোগে মরিয়া। একটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে যাদের বিজয়ী হবার সামর্থ্য নেই তারা আজ রাজা উজির বনে গেছেন। বাসা বেঁধেছেন যমুনায়। গত ১৭টি বছর শত প্রতিকুলতার মধ্যে দিনে দিনে মানুষ হাসিনার ‘বন্দোবস্ত ’ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগঠিত হতে চেষ্টা করেছে। ২৪  সালে তাদের ঘুরে দাঁড়াবার সুযোগে বিপ্লব হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে। কিন্তু এখন নতুন করে বন্দোবস্ত ব্যবস্থা আঁকড়ে ধরে থাকার খায়েশ জেগেছে অনেকের। তাই নির্বাচনের কথা শুনলেই তারা আঁতকে উঠেন।
প্রধান উপদেষ্টার যমুনাকে ঘিরে নতুন করে গড়ে উঠেছে বন্দোবস্ত ব্যবস্থা। লক্ষ্য একটাই তা দির্ঘায়িত করে যতদিন পারা যায় সুবিধাভোগ করা। নির্বাচন হলে তাদের টিক্কিটাও পাওয়া যাবে না। যমুনার ভেতরেও এক ধরনের অসনীয় পরিবেশ বিরাজ করছে। চাকর বাকরদের লম্পঝম্পে মনে হয়, ইউনূস দেশ চালাচ্ছেন নাকি চাকরবাকররা দেশ চালাচ্ছেন। তাদের আচারআচরন ও কথাবার্তা অনেক সময় ইউনূসের ভাবাদর্শের সাথে অসংগতি মনে হয়। দৃশ্যত: যমুনার কর্মচারিরা সমন্বয়কদের ক্রিড়ানক হিসেবে কাজ করছে। তার মানে দাড়ায় এনসিপি নামক রাজনৈতিক দলটির একটি শাখা হচ্ছে যমুনা। উভয়েরই স্বপ্ন হচ্ছে যতদিন অনির্বাচিত সরকারের ছত্রছায়ায় বনেয়াদী সুবিধাভোগ করা যায়। মরহুম বরেণ্য সাংবাদিক এবিএম মূসা, আওয়ামী সরকারের লোকজনকে দেখলেই চোর বলে আখ্যায়িত করার আহবান জানিয়েছিলেন। কিন্তু এই সরকারের সুবিধাভোগী অংশটি কোটি টাকার নীচে বন্দোবস্ত করেন না। সেটা একজন ‘ওসি’ থেকে পিয়ন পর্যন্ত পোষ্টিং বানিজ্য পর্যন্ত। এরা চোর নয়। ডাকাতের প্রতিমূর্তি। আগে কোন অফিসে গিয়ে প্রকাশ্য চাঁদাবাজির মহড়া হতো না। এখন প্রতিটি অফিসে প্রতিদিন চাঁদাবাজির উৎসব চলছে। তা যেন এনসিপি ও বিএনপির কথিত নষ্ট নেতৃত্বের মহায়োৎসব। যাদের এক সময় একজোড়া স্যান্ডেল কেনার পয়সা থাকতো না। তারা এখন প্রতিদিন হেলিকপ্টারে চড়ে রাজনৈতিক সভা করে বেড়ান। এটাই আজ নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ব্যবস্থার সুফল।
  বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এডভোকেট ফজলুর রহমানতো জনসভায় বলেই ফেলেছেন, নির্বাচনে ৩ টি আসনে বিজয়ের যোগ্যতা নেই তারা আজ দেশ চালাচ্ছে। ২৪ এর অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে একটি স্বৈরাচারের মুখ পরিবর্তন হয়েছে। নিপীড়িত মানুষের বিপ্লব হাতাছাড়া হয়েছে। গুটিকতক ব্যক্তিবর্গের কাছে জনক্ষমতা বন্দী হয়েছে নতুন করে।  এই বন্দোবস্ত থেকে জাতিকে মুক্ত করা এখন সময়ের দাবি। আরো একটি ঝরের অপেক্ষায় বাংলাদেশ। জনগনের ক্ষমতা জনতার হাতে ফিরে দেবার লড়াইটা এখনও শেষ হয়নি। আর এ কাজটি করতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকেই। সাথে রাখতে হবে দেশ বরেণ্য ড. ইউনূসকেও। ৯০’র গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় বাংলাদেশ পেয়েছিল বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদকে। এবার দেশ পেতে চায় ড. ইউনূসকেই। যমনা থেকে তাকে উদ্ধার করে নতুন স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। ডুববার আগেই জাগতে হবে ১৮ কোটি মানুষকে। নতুবা চক্রটি পুরো দেশটাকে নিইে যমুনায় ভাসিয়ে দেবে। মাঝিমাল্লা সাবধান!