রোববার   ১৩ এপ্রিল ২০২৫   চৈত্র ২৯ ১৪৩১   ১৪ শাওয়াল ১৪৪৬

ভূমি অফিস যেন টাকার খনি প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেন

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:৪৫ এএম, ১১ এপ্রিল ২০২৫ শুক্রবার

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে সেবাগ্রহীতাদের লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা আদায়ের দৃশ্য। প্রত্যেক সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে ২০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। ঘুষের টাকা আদায়ের বিষয়ে অফিস সহায়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সারা দেশের সব সাব-রেজিস্ট্রার অফিসেই এভাবে ঘুষ নেওয়া হয়। এটা কোনো ব্যাপার না। ৩০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি নিয়েছি, এমনি এমনি তো না। এ ছাড়া দুজন লোক সাব-রেজিস্ট্রারের অনুমতি নিয়ে এ কাজে রাখা হয়েছে। এত কথা বলার সময় নেই।’ তবে নিউজ না করার অনুরোধ জানিয়ে সাব-রেজিস্ট্রার সাদেকুর রহমান বলেন, ‘এবারের মতো মাফ করে দেন। ঘুষ আদায় বন্ধ করতে চেষ্টা করা হবে।’ রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা ভূমি অফিসের মিউটেশন কাম সার্টিফিকেট অ্যাসিস্ট্যান্ট জীবন নেসা এক সেবাগ্রহীতার কাছে ২ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে বলেন, ২ হাজার টাকার কম হলে নিতে পারবেন না। এ সময় তার সঙ্গে থাকা অফিস পিয়ন মোকলেসুর বলেন, ‘আপনার টাকা কি আমরা পকেট থেকে দিব। নাজির সাহেবের কাছে প্রত্যক ফাইলের জন্য ২ হাজার করে টাকা দিতে হয়।’ চেইনম্যান আবুল হোসেন আরেক সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে নেওয়া ঘুষের টাকা গুনতে গুনতে বলেন, ‘এখানে ২ হাজার কম আছে। এটা হবে না। তোমাকে যেভাবে বলছি, সেভাবে টাকা দিলে সম্পত্তি এমনি পাবা।’ ভূমি অফিস যেন টাকার খনি। রাজশাহী জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস থেকে দিনাজপুর সেটেলমেন্ট অফিসে সদ্য বদলি হওয়া সার্ভেয়ার গোলাম মর্তুজা চাকরি জীবনের ১২ বছরের মধ্যেই বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। সম্প্রতি রাজশাহী নগরীর প্রাণকেন্দ্র বহরমপুর এলাকায় প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ টাকায় তিন তলা বাড়িসহ চার কাঠা জমি কিনেছেন। এর বাইরেও তার বিপুল সম্পদ রয়েছে নামে বেনামে। তিনি জানান, মাটির বাড়িসহ জমি কিনেছেন। তার অন্য দুটি জমি বিক্রি করে এবং জমানো টাকা দিয়ে এই বাড়ি ও জমি কিনেছেন।

রাজশাহী জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে ব্রেঞ্চ ক্লার্ক রেজাউল করিম স্ত্রী খাদিজাতুল কোবরার নামে নগরীর মিরেরচক এলাকায় প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের জমি কিনে চার তলা বাড়ি নির্মাণ করছেন। বিপুল ব্যয়ে মেয়েকে পড়াচ্ছেন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তবে তার ও তার স্ত্রীর দাবি গহনা বিক্রি করে গড়েছেন এসব সম্পত্তি। রেজাউল করিম বলেন, স্ত্রীর গহনা এবং শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়দের থেকে টাকা ধার করে এই জমি কিনেছেন। বাড়ি করেছেন পেনশনের টাকা আগেই তুলে নিয়ে। তার স্ত্রী খাদিজাতুল কোবরা বলেন, গহনা বিক্রি ও বাবার বাড়ির সহায়তায় জমি কিনেছেন। নগরীর বহরমপুর বাজারে বিশাল বাড়ি বানাচ্ছেন তানোর উপজেলা ভূমি অফিসের আরেক ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা তানভির আহমেদ সজীব। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাহাল উদ্দীন বলেন, ‘অনিয়ম, জালিয়াতি ও দুর্নীতি বন্ধে ভূমি প্রশাসনের তিন বিভাগ একটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসতে হবে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’