এবিপিসি’র সেমিনার অনুষ্ঠিত
আজকাল রিপোর্ট -
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:০৪ এএম, ১২ এপ্রিল ২০২৫ শনিবার

নিউইয়র্কঃ আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ‘অবৈধ অভিবাসীদের বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে আয়োজন করেছিল ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি সেন্টারে। সেমিনারে প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর প্রবন্ধ লিখেন মিডিয়া কর্মী ও অভিনেতা শামীম শাহেদ এবং প্রবন্ধটি পাঠ করেন সাংবাদিক দর্পণ কবীর। আলোচ্য বিষয়ের ওপর প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ইমিগ্রেশন বিষয়ক অ্যািটর্নি অশোক কর্মকার। সেমিনারে বক্তব্য রাখেন মূলধারার রাজনীতিবিদ গিয়াস আহমেদ, প্রবাস পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, মানবাধিকার কর্মী রাসেল আহমেদ, ট্রাভেলস ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম, প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি মনজুরুল হক মন্জু প্রমুখ। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন প্রেসক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক।
সেমিনারের প্রবন্ধে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন যাবত অভিবাসন দ্বারা গঠিত এক জাতি। এরপরও এর নির্বাসন ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত নীতিগুলো গভীরভাবে বিতর্কিত। যেখানে এখন অবধি ৩০ লক্ষাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে, সেখানে নতুন করে গ্রেফতার অভিযান পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক করে তুলছে। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ব্যবস্থা বিভিন্ন সময়ে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে।
প্রবন্ধের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ইমিগ্রেশন বিষয়ক এটর্নী অশোক কর্মকার বলেছেন, এ সংক্রান্ত নতুন কোন আইন হয়নি। প্রচলিত আইনেই আইস (ইমগ্রেশন এন্ড কাষ্টমস এনফোর্নম্যান্ট) গ্রেফতার করছে। তবে আইনের প্রয়োগ জোরালো এবং কঠোরভাবে করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আনডকুমেন্টেড যারা রয়েছেন, এখন তাদের সতর্ক ও নিরাপদে থাকতে হবে। আইস-এর আগ্রাসী গ্রেফতার অভিযান একটা সময় স্থিমিত হয়ে আসবে বলে মনে করি। তবে অভিবাসীদের সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে তারা যেন ছোট বা বড় কোন ধরনের অপরাধ কাজে লিপ্ত না হন। এটর্নী অশোক কর্মকার আরো বলেন, যারা স্থায়ীভাবে বাসবাসের জন্য গ্রীনকার্ড পেয়েছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রে অল্পদিন থেকে নিজের দেশে অধিকাংশ দিন থাকাটা শর্ত ভঙ্গের শামিল। এসব বিষয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আগে উপেক্ষা করতো, এখন কঠোর ভূমিকার অবতীর্ণ হয়। তিনি বলেন, যে কোন বন্দর দিয়ে প্রবেশ করার সময় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ অভিবাসীদের সব বিষয় দেখতে পান। অপরাধ করে থাকলে এখন ঐ বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখিন হচ্ছেন তারা। এটর্নী অশোক কর্মকার অভিবাসীদের যে কোন পরিস্থিতিতে ভুল তথ্য না দেয়ার প্রতি অনুরোধ করেন। এ ছাড়া (রাজনৈতিক আশ্রয়) মামলা করার আগে বিষয়টি যথাপোযুক্ত কিনা এবং এটর্নীর ওপর ভরসা রেখে উদাসীন না থাকার কথাও বলেন তিনি। অভিবাসীদের অফিশিয়াল কাজে এক ঠিকানা ব্যবহার করে অন্য ঠিকানায় বাস করার বিষয়টি এড়িয়ে চলার কথাও তিনি বলেন।
মার্কিন মূলধারার রাজনীতিবিদ গিয়াস আহমেদ বলেন, আজকের পরিস্থিতির জন্য ডেমক্রেটরা দায়ী। একটা সময় যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত খুলে রাখা হতো। অবাধে লক্ষ লক্ষ অভিবাসী প্রবেশ করেছে। এটা মার্কিনীরা পছন্দ করে না। ফলে ট্রাম্প প্রশাসন কঠোর ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সকলকে সতর্ক থাকতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে এখানে বাস করতে হবে। আর মিথ্যা তথ্য দেয়া চলবে না। বিপদগ্রস্থরা কমিউনিটির নেতা ও সংগঠনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
ট্রাভেলস ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, ভয়-ভীতি ছড়ানো হচ্ছে। যা ঘটছে, এরচেয়ে বেশি প্রচারণা করা হচ্ছে। এতে আমাদের ট্রাভেলস ব্যবসায় মন্দা শুরু হয়েছে। আপনারা সঠিক তথ্য পরিবেশন করুন। গ্রীনকার্ড নিয়ে দেশে গিয়ে অনেকে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন। আমরাও বিপাকে পড়েছি।
সভাপতির ভাষণে আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি শওকত ওসমান রচি বলেন, এক ধরনের দায়বদ্ধতা থেকে প্রেসক্লাব এই সেমিনারের আয়োজন করেছে। অভিবাসীদের কাছে সঠিক তথ্য ও আইনী পরামর্শ পৌঁছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য। আমরা বিভিন্ন সময় এ ধরনের সেমিনারের আয়োজন করব।
সেমিনারের শেষ পর্বে ছিল প্রশ্ন-উত্তর। উপস্থিত সমবেতদের একাধিকজন প্রশ্ন করেন। এক প্রশ্নের জবাবে এটর্নী অশোক কর্মকার বলেন, স্টুডেন্ট ভিসায় আসতে ভয় ও বাধা নেই। তবে এই ভিসা প্রদানের আগে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক হতে পারে। এ বিষয়টি ছাত্রছাত্রীদের লক্ষ্য রাখতে হবে। এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মী রাসেল আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বসবারত স্টুডেন্টরা কোন আন্দোলনে জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইস বা অন্য কোন সংস্থার জেরার মুখে পড়তে পারেন। ইতিমধ্যে কিছু ছাত্রছাত্রী এই হেনেস্থার শিকার হয়েছে বলে তিনি জানান।(প্রেস বিজ্ঞপ্তি)