সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫   বৈশাখ ৮ ১৪৩২   ২২ শাওয়াল ১৪৪৬

গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের অর্থ সহায়তা দিচ্ছে ফেসবুক

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:৩৯ এএম, ২১ এপ্রিল ২০২৫ সোমবার

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অবৈধ কর্মকাণ্ডকে ঘিরে নতুন বিতর্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ফেসবুকে একদিকে যেমন পশ্চিম তীরে অবৈধ ইসরায়েলি বসতির আবাসন বিক্রির বিজ্ঞাপন প্রচার হচ্ছে, তেমনি গাজায় মোতায়েন সেনাদের জন্য অর্থ সহায়তা সংগ্রহের আহ্বান জানানো বিজ্ঞাপনও প্রকাশ পেয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব বিজ্ঞাপনের বেশিরভাগই ছিল উগ্র ডানপন্থি জায়নবাদী গোষ্ঠী ও রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানের। মোট শতাধিক বিজ্ঞাপনের মধ্যে অন্তত ৫০টি সরাসরি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সহায়তায় অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে প্রচার করা হয়। আর প্রায় একই সংখ্যক বিজ্ঞাপন ছিল পশ্চিম তীরে দখলদারিত্ব বৈধ করার চেষ্টায় পরিচালিত বসতি প্রকল্পের পক্ষে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব বিজ্ঞাপন আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। পশ্চিম তীরের রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান ‘রামাত আদেরেত’ ও ‘গাবাই রিয়েল এস্টেট’ এসব বিজ্ঞাপন চালিয়েছে। তাদের প্রকল্পগুলো দখলকৃত ভূখণ্ডে গড়ে উঠেছে, যেগুলো আন্তর্জাতিকভাবে অবৈধ হিসেবে বিবেচিত।

সবচেয়ে বিতর্কিত বিজ্ঞাপনগুলোর মধ্যে ছিল ‘রেগাভিম’ নামের একটি ডানপন্থি প্রতিষ্ঠানের প্রচারণাসমূহ। এসব বিজ্ঞাপনে ফিলিস্তিনি স্কুল ধ্বংসের প্রশংসা এবং অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এমনকি একটি বিজ্ঞাপনে ওয়াটার পার্ক ভাঙার দাবি জানিয়ে বলা হয়, আমাদের টাকায় ফূর্তি করছে ফিলিস্তিনিরা।

এমন বৈষম্যমূলক বার্তার বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। ব্রিটিশ সংসদ সদস্য ব্রায়ান লেইশম্যান অভিযোগ করেন, ফেসবুক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

মেটা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, এটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির ত্রুটি। তবে ডিজিটাল নীতিনির্ধারক ও গবেষকরা বলছেন, এসব বিজ্ঞাপন সাধারণ বিজ্ঞাপনের ছদ্মবেশে নীতিমালার ফাঁক গলে চলে এসেছে।

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, দখলদার শক্তির নিজ দেশের নাগরিকদের দখলকৃত ভূখণ্ডে বসতি স্থাপন করানো যুদ্ধাপরাধ। আর সেই কাজের প্রচার মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক ব্যবহৃত হওয়ায়, প্রতিষ্ঠানটি যুদ্ধাপরাধে পরোক্ষভাবে সহযোগী কি না, সেই প্রশ্নও এখন উঠছে।

যুক্তরাজ্যের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক নেভ গর্ডন বলেন, ফেসবুক শুধু এই অপরাধ থেকে মুনাফা করছে না, বরং যুদ্ধাপরাধকে স্বাভাবিক ও বৈধ করার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখছে।