শুক্রবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৫   বৈশাখ ১২ ১৪৩২   ২৬ শাওয়াল ১৪৪৬

বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ হতে পারে ভারত

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:২৭ এএম, ২৫ এপ্রিল ২০২৫ শুক্রবার

মার্কিন ট্রেজারি সচিব বা অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক এড়াতে প্রথম দেশ হিসেবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি করবে ভারত। বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক পোস্টের বরাতে এক প্রতিবেদনে ইন্ডিয়া টুডে এ তথ্য জানিয়েছে।

ভারতের পণ্যের ওপর আগে আড়াই শতাংশ মার্কিন শুল্ক বসানো ছিল। তার ওপর ২৬ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বসায় যুক্তরাষ্ট্র। যদিও বর্তমানে তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রয়েছে, যার মেয়াদ শেষ হবে ৮ জুলাই। তবে অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ রয়েছে।

নিউইয়র্ক পোস্টের মতে, স্কট বেসেন্ট প্রায় এক ডজন সাংবাদিকের সঙ্গে বৈঠকে বলেছিলেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার প্রস্তাবিত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি একটি সফল সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর ‘খুব কাছাকাছি’। কারণ বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটিতে এত বেশি শুল্ক নেই।

এর আগে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক্সপ্লেইনারে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি করতে চায়, যা একধরনের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। দেশ দুটি এই প্রস্তাবিত বাণিজ্য চুক্তি দুটি ধাপে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা এ বছরের শরৎকালের (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মধ্যে প্রাথমিক চুক্তি করার সময়সীমা নির্ধারণ করেছে।

এই প্রাথমিক চুক্তির লক্ষ্যে উভয় পক্ষ সীমিতসংখ্যক পণ্যের বাজারসুবিধা বৃদ্ধি এবং অশুল্ক বাধা হ্রাসের মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারে। সেটা হলে পরবর্তী পর্যায়ে আরও জটিল আলোচনার (যেমন সরকারি ক্রয় ও ডিজিটাল বাণিজ্যের মতো বিষয়) ভিত্তি তৈরি হতে পারে। তবে উভয় পক্ষের জন্যই লাভজনক হলেই কেবল আগেভাগে চুক্তি করা সম্ভব হবে।

ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভারত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করেছে। ভারত-অস্ট্রেলিয়া অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাণিজ্য চুক্তি (ইসিটিএ) ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর কার্যকর হয়। এখন তারা ইসিটিএর পরিসর সম্প্রসারণ করে আরও বৃহৎ বাণিজ্য চুক্তি করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা করছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল ভারত, চীনসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যে পারস্পরিক শুল্ক (বা আমদানি শুল্ক) আরোপ করেন। যদিও ৯ এপ্রিল তিনি এই শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন, যার মেয়াদ চলতি বছরের ৮ জুলাই পর্যন্ত। তবে এই স্থগিতের আদেশ চীন ও হংকংয়ের জন্য প্রযোজ্য নয়। এর মধ্যে প্রায় ৭৫টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আগ্রহ জানিয়েছে। চীনের পণ্যে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে ২ এপ্রিল ঘোষিত ১০ শতাংশ ন্যূনতম শুল্ক কার্যকর থাকবে। এ ছাড়া ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও গাড়ির সামগ্রীতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আছে।

২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৫০০ বিলিয়ন বা ৫০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করতে চায় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। যদিও বর্তমানে দেশটির মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য মাত্র ১৯১ বিলিয়ন বা ১৯ হাজার ১০০ কোটি ডলারের।

মোট ১৯টি অধ্যায় নিয়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি করা হবে। পণ্য, সেবা, শুল্ক সহজীকরণ, বিনিয়োগসহ আরও নানা বিষয় থাকবে এতে। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে শুল্ক উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ভারতের বাজারে তাদের উৎপাদিত বৈদ্যুতিক গাড়ি, বিভিন্ন শিল্প পণ্য, মদ, দুগ্ধজাত পণ্য, পেট্রোকেমিক্যাল, আপেলসহ বিভিন্ন পণ্যের শুল্ক হ্রাস করা হোক। এর বদলে ভারত চায় টেক্সটাইল, পোশাক, গয়না, রত্ন, চামড়াজাত পণ্য, রাসায়নিক, চিংড়ি, তেলবীজ ও হর্টিকালচার পণ্যের প্রবেশাধিকার।