স্ক্যামার আতঙ্ক কমিউনিটিতে
হাসান মাহমুদ
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:৪৪ এএম, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ শনিবার
নিউইয়র্কে ২ মিলিয়ন ডলার ক্রিপ্টো চুরির দায়ে মামলা
বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ব্যাপকভাবে ‘স্ক্যামার আতঙ্ক’ দেখা দিয়েছে। স্ক্যামারদের নানা প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে সাধারণ মানুষ তাদের অর্থ হারিয়েছেন এবং নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এধরনের ভিকটিমদের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেয়া এবং বিভিন্ন ম্যাসেজ দিয়ে লোভনিয় লিংক পাঠিয়ে মোবাইল ও ব্যাংক একাউন্টটের তথ্য হাতিয়ে নিয়ে ডলার নিয়ে যাওয়ার মতো অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। এদিকে নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিটিয়া জেমস স্ক্যামারদের বিরুদ্ধে ২ মিলিয়ন ক্রিপ্টোকারেন্সি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। তারা এই অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা যায়।
বাংলাদেশি কমিউনিটিতে গত একমাসে স্ক্যামাররদের হাতে অনেকেই শিকার হয়েছেন। হারিয়েছেন হাজার হাজার ডলার। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস-এ একজন টিভি সংবাদকর্মীর (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) দুটি ব্যাংকের একাউন্ট থেকে পরপর দুইদিন এক হাজার ডলার এবং অন্য হিসাব থেকে চার হাজার ডলার হাতিয়ে নেয় স্ক্যামাররা। তিনি জানান, জ্যাকসন হাইটস ৭৪ স্ট্রিটের মাথায় ওই ব্যাংকে অভিযোগ জানালে তারা প্রথমে কোন সাড়া দেয়নি। এ জন্য সারাদিন তাকে এর পেছনে ঘুরতে হয়েছে। পরদিন সকালে দেখতে পান একই এলাকায় থাকা আরেকটি ব্যাংকের একাউন্ট থেকে আবার ৪ হাজার ডলার হাতিয়ে নেয় স্ক্যামাররা। দুইদিকে দৌড়াতে গিয়ে তার কাজে অনুপস্থিতি এবং চরম মানসিক ধকল যায় বলে তিনি জানান। গতকাল এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি কোন টাকা ফেরত পাননি বলে জানিয়েছেন। জ্যাকসন হাইটস ৩৫ এভিনিউতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন নারী অভিযোগ করে জানান, তার ব্যাংক একাউন্ট থেকে কিছুদিন আগে ১ হাজার ডলার নিয়ে যায় স্ক্যামাররা। তিনি সারাদিন এর পেছনে ঘুরেছেন টাকা উদ্ধারের জন্য। তিনি জানান, ‘বড় সমস্যা হলো আমি নিরাপত্তা পাচ্ছিলাম না। বারবার মনে হয় স্ক্যামাররা আবার আক্রমণ করতে পারে।’ জ্যাকসন হাইটস এর একটি সেলুনে কর্মরত একজন কর্মী জানান, গত মাসে তার একাউন্ট থেকে দুই হাজার ডলার স্ক্যামাররা চুরি করেছে। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার পর নিরাপত্তার জন্য মোবাইল সিম পরিবর্তনসহ যা যা করা দরকার সবই করেছি। তারপরও আমি স্কেমার আতঙ্কে রয়েছি।’ জ্যামাইকার একজন গ্রাফিকস ডিজাইনার অভিযোগ করে জানান, ব্যাংক থেকে স্কেমাররা তার আড়াই হাজার ডলার নিয়ে গেছে। তিনি পুলিশসহ ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। তারপরও তিনি আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানান।
এপি’র কাছে নিউইয়র্ক অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে জানানো হয়েছে, টেক্সট মেসেজিং স্ক্যামাররা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সির ২ মিলিয়ন ডলার চুরি করেছে। নিউইয়র্ক অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় বলেছে, স্ক্যামাররা একটি বিস্তৃত স্কিমের অংশ হিসাবে এমন লোকদের খুঁজছেন যাদের কাছ থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সিরে লক্ষ লক্ষ ডলার চুরি করেছে।
নিউইয়র্ক অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিটিয়া জেমস বলেছেন, তিনি নিউইয়র্কবাসী এবং সারা দেশের অন্যদের কাছ থেকে চুরি হওয়া ২ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি পুনরুদ্ধারের জন্য একটি মামলা দায়ের করেছেন। জেমস বলেন, স্ক্যামারদের অজ্ঞাত নেটওয়ার্ক থেকে এমন লোকদের লক্ষ্য করে লোভনিয় বার্তা পাঠানো হয় যাতে তারা সাড়া দেয়। পরে তাদের কাছ থেকে স্ক্যামাররা সব অর্থ হাতিয়ে নিয়ে যায়।
জেমসের কার্যালয় জানিয়েছে, তারা ভুক্তভোগীদের বলে যে, মার্কেটিং তথ্য তৈরিতে সহায়তা করার জন্য অনলাইনে পণ্য পর্যালোচনা করা এই কাজের সাথে জড়িত। কিন্তু ভুক্তভোগীদের বলা হয়েছিল যে, তাদের ক্রিপ্টোকারেন্সি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং তারা যে পণ্যগুলি পর্যালোচনা করছে তার দামের সমান বা তার চেয়ে বেশি ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে, তারা তাদের বিনিয়োগ এবং কমিশন ফেরত পাবে, তবে সব অর্থ স্ক্যামারদের ক্রিপ্টো ওয়ালেটে চলে গেছে বলে জেমসের অফিস জানিয়েছে।
মামলাটিতে নিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়া এবং ফ্লোরিডায় বসবাসকারী ছদ্মনাম দ্বারা চিহ্নিত সাতজন ভুক্তভোগীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মামলা অনুসারে, নিউইয়র্কের একজন ভুক্তভোগী ১০০,০০০ ডলারের বেশি অর্থ হারিয়েছেন। ফ্লোরিডার এক মহিলার ৩,০০,০০০ ডলারেরও বেশি অর্থ লোকসান হয়েছে।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘স্ক্যামাররা নিউ ইয়র্কারদের কাছে টেক্সট বার্তা পাঠিয়ে তাদের ভাল বেতনের ও নমনীয় কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যাতে তারা প্রতারিত হয়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনতে পারে এবং তারপরে তাদের কাছ থেকে চুরি করতে পারে।’
কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি মেলিন্ডা কাটজ বলেছেন, তার অফিস থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সি ইউনিট চুরি হওয়া ক্রিপ্টোতে ২ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি সন্ধান পেয়েছে। ডিজিটাল ওয়ালেটগুলি তারা সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন যেখানে মুদ্রাগুলো রাখা হয়েছিল। অ্যাটর্নি জেনারেল জেমসের অফিসের সঙ্গে কাজ করে তারা ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে অর্থ ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত কারেন্সিগুলো ‘ফ্রিজ’ করতে সক্ষম হয়।