বুধবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৫   বৈশাখ ১৬ ১৪৩২   ০২ জ্বিলকদ ১৪৪৬

বাংলাদেশের সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো কী

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:১২ এএম, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ বুধবার

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে একটি ‘হিউম্যানিটারিয়ান প্যাসেজ’ বা মানবিক করিডর স্থাপনের প্রস্তাবে নীতিগতভাবে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। মার্চ কিংবা এপ্রিলে গৃহযুদ্ধে জর্জরিত রাখাইনে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা থাকায় জাতিসংঘ মানবিক সহায়তা পাঠাতে এই করিডরের প্রস্তাব দেয়। তবে এ সিদ্ধান্ত ঘিরে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত নানা ঝুঁকির প্রশ্ন তুলছেন বিশ্লেষকরা। বিবিসি বাংলায় গতকাল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

গত রবিবার এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানান, বাংলাদেশ নীতিগতভাবে করিডরের বিষয়ে সম্মত হয়েছে। তবে কিছু শর্ত রয়েছে, যা এখনও প্রকাশ করা হয়নি। শর্তগুলো পূরণ হলে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সঙ্গে সহযোগিতা করবে বলেও তিনি জানান। বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় নিরাপত্তা ও কৌশলগত বিষয়ের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক ঐকমত্য ও আঞ্চলিক সমন্বয় ছাড়া একটি অন্তর্বর্তী সরকারের এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ যুক্তিসঙ্গত নয়। বিশেষ করে মিয়ানমারের জান্তা সরকার, আরাকান আর্মি এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর অবস্থান না বুঝে পদক্ষেপ গ্রহণ ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য সামরিক ও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

সাবেক কূটনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলো বঙ্গোপসাগরের মিয়ানমার উপকূল বা সিতওয়ে বন্দর ব্যবহার করতে পারলেও বাংলাদেশকে করিডরে জড়ানো রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে। এমনকি পশ্চিমা চাপের ফলেও এ সিদ্ধান্ত হতে পারে। তাদের আশঙ্কা, করিডরটি মানবিক সহায়তার বাইরেও অস্ত্র, মাদক পাচার বা সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে, যেমনটি অতীতে মধ্যপ্রাচ্য বা আফ্রিকার যুদ্ধক্ষেত্রে দেখা গেছে।

গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেছেন, জাতীয় নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট এমন সিদ্ধান্তে জনগণ ও রাজনীতিবিদদের অন্ধকারে রাখা উচিত নয়। তিনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের নিশ্চয়তা না থাকলে করিডরের কোনো প্রয়োজন নেই

বলেও মন্তব্য করেন। অন্যদিকে সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ মনে করেন, করিডরের মাধ্যমে সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সুযোগ থাকলে বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী হবে। তবে আন্তর্জাতিক শক্তির ভূমিকায় সতর্কতা বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম প্রশ্ন তোলেন, বঙ্গোপসাগর বা সিতওয়ে দিয়ে রুট খোলা গেলে বাংলাদেশকে কেন জড়ানো হচ্ছে? অন্যদিকে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. বায়েজিদ সরোয়ার বলেন, মানবিক করিডরের মাধ্যমে আপাতত অনুপ্রবেশ কমলেও যুদ্ধক্ষেত্রে এর মাধ্যমে নিরাপত্তা সংকট দেখা দিতে পারে, যেমনটি বসনিয়া বা ইউক্রেনে দেখা গেছে।

আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রাখাইন যাওয়ার পর মানবিক সংকট তীব্র হয় এবং জাতিসংঘ একে দুর্ভিক্ষ-সদৃশ পরিস্থিতি হিসেবে উল্লেখ করে। এর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সেমিনারে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহফুজুর রহমান মানবিক করিডরের প্রস্তাব দেন। মানবাধিকার সংস্থা ফরটিফাই রাইটস ও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও এ বিষয়ে সমর্থন দেন। খলিলুর রহমান জানান, বাংলাদেশই একমাত্র ব্যবহারযোগ্য চ্যানেল এবং জাতিসংঘ বাংলাদেশ, আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে একটি নতুন মাত্রা যোগ করে জামায়াতে ইসলামীর একটি প্রস্তাব। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক পেং জিউবিনের নেতৃত্বে ঢাকায় সফররত একটি চীনা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে দলটি আরাকানে রোহিঙ্গা সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দেয়। দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় তারা বিষয়টি তাদের সরকারের কাছে তুলে ধরবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।