বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১   ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নবজাতকের মায়েদের স্তনের পাঁচটি সমস্যা এবং তার সমাধান

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৪:০৯ পিএম, ৮ জানুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার

একটি শিশুর জন্মের সাথে সাথে আসলে একজন মায়েরও জন্ম হয়। যারা মা হয়েছেন তারা এ কথাটার অর্থ বুঝতে পারবেন খুব ভালো করে। মা যত কষ্টেই থাকুক তার শিশুর ভালোমন্দ না ভেবে উপায় নেই। প্রকৃতিই মা-সন্তানের বন্ধনকে এভাবে সৃষ্টি করেছে যে শিশুর জন্যই মা নিজেকে ভালো রাখেন। ছোট একটি শিশু, যাকে খাওয়ানো, পরিষ্কার করা, যত্নে রাখা সবই আসলে নির্ভর করে মায়ের উপরে। শিশু যতদিন মায়ের পেটে থাকে তখন তার খাওয়া নাভি দিয়ে সরাসরি শরীরে চলে যায়। কিন্তু ভূমিষ্ট হয়ার পর শিশুর মুখ দিয়ে খাবার গ্রহণের প্রয়োজন হয়। আর মায়ের দুধের বিকল্প কিছুই নেই এটা আমরা সবাই জানি। শিশুকে মায়ের বুকের দুধ ছাড়া অন্য কিছু এমনকি পানিও খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই শিশুর ছয় মাস বয়স অব্দি।

শিশুর জন্মের পর প্রথম প্রথম বুকের দুধ খাওয়ানো অনেক মায়ের জন্য কষ্টকর হয়ে থাকে। এটা অনেক সময় না জানার ফলেও হয়। বাচ্চার মুখে স্তন ঠেসে ধরে রাখলেই দুধ খাওয়া হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। স্তন্যপানের কিছু বিশেষ নিয়ম মেনে দুধ খাওয়ালে মা এবং শিশু উভয়ের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে তা। নতুবা নানা ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণ কিছু নিয়ম হলো, টাইট কাপড় না পড়া, যথেষ্ট আলো-বাতাস আছে এমন স্থানে বসে দুধ খাওয়ানো, বুকের দুধ শিশুর মুখে দেয়ার আগে শিশুকে কিছুক্ষণ বুকের সাথে চেপে ধরে রাখা, কিছুক্ষণ ডান স্তন কিছুক্ষণ বাম স্তনের দুধ খাওয়ানো, নিজেকে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। বুকের দুধ ছাড়া শিশুর আর কোনো বিকল্প খাবার নেই এবং মায়ের স্বাস্থের জন্যেও বুকের দুধ খাওয়ানো খুবই জরুরী। কিন্তু অনেক সময় এই দুধ খাওয়ানো নিয়েই কিছু সমস্যায় পড়েন মা। ব্রেস্টফিডিং নিয়ে যেসব সমস্যা খুবই পরিচিত তাদের মধ্যে কিছু সমস্যা আর সমাধান সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা হল এখানে।

ব্রেস্টফিডিং পেইন

যারা প্রথম মা হয়েছেন তাদের ভিতরেই এই ব্যথাটা বেশী হয়। বাচ্চার মুখে স্তন দেয়ার সাথে সাথেই এই ব্যথা শুরু হয়। বাচ্চা দুধ খাওয়া শুরু করলেই ব্যথাটা টের পাওয়া যায়। এটা হয় নিপল এর চামড়া ড্রাই থাকলে। বা দুধের পরিমাণ বেশী থাকলেও এমন হয়।

বাচ্চা দুধ খাওয়া শুরু করার মিনিটের ভিতরেই ব্যথা দূর হয়ে যায়। এতে ভয়ের কিছুই নেই। তবে যদি এরপরেও ব্যথা দূর না হয় তাহলে বাচ্চার মুখে একটি আঙুল ঢুকিয়ে স্তন বের করে নিয়ে আবার স্তন মুখে দিতে হবে। খেয়াল করতে হবে স্তনবৃন্তের (নিপলের পাশের কালো অংশকে স্তনবৃন্ত বলে) নীচের দিকটা যেন বাচ্চার মুখে বেশী থাকে উপরের অংশের চেয়ে। টাইট কাপড় পড়া পরিহার করতে হবে। সাবান ব্যবহার করা যাবে না স্তনে। স্তনকে হাইড্রেট রাখতে ল্যানোলিন বেজড ক্রীম বা লোশন ব্যবহার করতে পারেন।

ক্র্যাকড নিপল

অনেক মায়ের দুধের নিপল ফেটে যায় যা থেকে এমনকি রক্ত পর্যন্ত বের হয়। স্তন্যপান করানোর সময় এই সমস্যাটা অনেক কষ্টকর হয়। বিশেষ করে শিশু যখন দুধ খায় তখন প্রচন্ড জ্বালাপোড়া বোধ হয়। রক্ত বের হলে ব্যথার পরিমাণটাও অসহনীয় হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রেও বুকে পরিমানে বেশী দুধ থাকাই কারণ সাধারণত।

স্তন যথাসম্ভব মশ্চারাইজড রাখতে হবে। পরিষ্কার তো বটেই। শিশু দুশ খাওয়ার সময় যদি কিছু রক্ত তার মুখেও চলে যায় তাতে ক্ষতির কিছু নেই, এটা মনে রাখতে হবে। ব্যথার জন্য ব্যাথানাশক ওষুধ খাওয়া চলতে পারে এ সময়। ব্যথার কারণে দুধ না খাওয়ানোর সিধান্ত ভুল হবে। কারণ বেশী দুধ জমে গেলে তাতে ব্যথা বাড়বে। বাচ্চা দুধ খাওয়ার পর বুকের কিছু দুধ নিপলে লাগিয়ে রাখলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। বুকের দুধেই এমন কিছু উপাদান আছে যা এই ফাটা সারিয়ে তুলতে পারে। এ ক্ষেত্রেও ল্যানোলিন বেজড ক্রীম লাগানো যাবে নিপলে। তবে বাচ্চার মুখে দুধ দেয়ার আগে সেটা হালকা গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে মুছে নিতে হবে।

দুধ জমাট বাঁধা

এ সমস্যায় ভোগেন না এমন মা খুব কম আছেন। ঠিকমতো দুধ বের হতে না পারলেই দুধ জমাট বেঁধে যায়। হালকা জ্বর আসা বুক ভারি হয়ে যাওয়া এর লক্ষন। এতে মায়ের স্তনে ব্যথাও হয়। বাচ্চাকে দুধ দিতে গিয়েও পড়তে হয় ঝামেলায়

দুধ যেন ঠিকমতো বের হতে পারে সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম মেনে বাচ্চাকে দুধ দিতে হবে। হালকা গরম কাপড়ের সেক নিলে আরাম পাওয়া যাবে। হালকা ম্যাসাজ করলেও দুধের জমাট বাঁধা দূর হয়ে যায় অনেক সময়। কোনোভাবেই টাইট ব্রা পড়া যাবে না এ সময়। তারপরও যদি জ্বর বাড়ে এবং স্তন জমাট বেঁধে ভারি হয়েই থাকে তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করাই উচিত।

অপ্রতুল দুধ

অনেক মায়ের স্তনে বাচ্চার জন্য দুধ পরিমানে কম থাকে অর্থাৎ বাচ্চা যত চেষ্টাই করুক না কেন বুকের দুধ তার মুখে কম যায়। দুধ না পেলে বাচ্চা চিৎকার করে কান্নাকাটি করে। এবং তার ক্ষুদাও মেটে না।

বুকে দুধ কম থাকলে হাত দিয়ে দুধ পাম্প করার চেষ্টা করতে হবে। এটাই সবচেয়ে ভালো উপায় বুকে দুধ আনতে চাইলে। স্তনে দুধ এলে এভাবেই আসবে। প্রোটিন বা ক্যালোরির পরিমাণ বাড়িয়ে দিলেই বুকে দুধ আসবে এমন না বিষয়টা। তবে অবশ্যই সুষম খাবার খেতে হবে বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে চাইলে।

অধিক দুধ

অনেক মায়ের আবার প্রচুর দুধ থাকে স্তনে। একটি স্তন খাওয়ানোর সময় অন্য একটি থেকে দুধ পড়তে থাকে এমনটাও হয়। এতে করে অনেক সময় বাচ্চার চোখে নাকেও ছিটকে গিয়ে দুধ পড়তে পারে খেয়াল না করলে। মায়ের জন্য শরীর পরিষ্কার রাখা খুব জরুরী। এভাবে দুধ পড়লে শরীর স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে থাকে।

হরমোনাল কারণে দুধ কম বেশী হতে পারে। তাই দুধ বেশী হলে এটা কমানোর চেষ্টা করার প্রয়োজন নেই। তবে দুধ ছিটকে যেন বাচ্চার চোখে নাকে না যায় সেজন্য প্রয়োজনে আগে কিছুটা দুধ একটু গড়িয়ে পড়তে দিতে হবে। প্রবল গতিতে দুধ যেন শিশুর গলায় গিয়ে না লাগে সেজন্য সতর্কতার সাথে শিশুকে স্তন্যপান করানোর পরামর্শই দিয়ে থাকেন শিশু বিশেষজ্ঞরা।

শেষ কথা

 

শিশুর জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নেই এই কথাটা সব সমস্য মাথায় রাখতে হবে। কোনোভাবেই যেন শিশু এই দুধ খাওয়া থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মায়ের সুস্বাস্থ্য সন্তানের সুস্বাস্থ্য বুকের দুধ খাওয়ানোর উপর নির্ভত করে। প্রতিটি শিশুই মায়ের বুকের দুধ খেয়ে বেড়ে উঠুক!