এসপির অভিযানে চাষাঢ়ায় ফুটপাত হকারমুক্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৩:২৬ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ রোববার
নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়া গোল চত্বরের আশেপাশের সকল হকার উচ্ছেদ করেছে পুলিশ প্রশাসন। শনিবার (১২ জানুয়ারি) যথারীতি হকাররা চত্বরের আশেপাশের ফুটপাতে বসার চেষ্টা করলে প্রশাসনের বাধায় সেসব গুটিয়ে নেয়। ফলে পরিষ্কার হয়ে যায় আশেপাশের ফুটপাতের জটলা।
প্রাথমিকভাবে পুলিশ সুপারের ঘোষণা ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা তেমন একটা আমলে নেয়নি। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার যথারীতি ফুটপাত দখল করেই চালিয়েছে ব্যবসা। তবে শনিবার প্রশাসনের কঠোর অবস্থানে চাক্ষুষ হয়েছে প্রশাসনের ভূমিকা।
শনিবার (১২ জানুয়ারি) সরজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে চাষাঢ়া ও বঙ্গবন্ধু সড়কে ফুটপাতে ব্যবসায়ীদের অবস্থান ছিল শূন্য। অন্যান্য দিন শহরের ব্যবসায়ীরা সকাল ১০ টা থেকে বসতে শুরু করলেও এদিন সকালে তাদের অবস্থান দেখতে পাওয়া যায়নি। ফলে পথচারীরা বেশ স্বাচ্ছন্দেই চলা ফেরা করতে পেরেছেন। যানজটের প্রভাবও ছিল অনেক কম। তবে বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে হকার নেতা রহিম মুন্সির নেতৃত্বে ফুটপাতে বসার চেষ্টা করে হকাররা। তবে সন্ধ্যা ৬টার পরেই প্রশাসনের বাঁধায় পসরা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়।
সেলিম নামে একজন ব্যবসায়ী জানান, আমরা বিকেলে বসার চেষ্টা করেছি। ১ ঘন্টার মাথায় আমাদের উঠে যেতে বলা হয়েছে। চাষাঢ়া গোলচত্বরের আশেপাশে ও শহীদ মিনারের আশেপাশে বসতে নিষেধ করা হয়েছে হকারদের। তবে বঙ্গবন্ধু সড়কের লুৎফা টাওয়ার থেকে শুরু করে অন্যত্র হকাররা ঠিকই ব্যবসা করছে। এখন পর্যন্ত আমরা কোথায় যাব সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোন নির্দেশনা পাইনি।
গত ১০ জানুয়ারী দুপুরে শহরের চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে শহীদ মিনারের চারদিকে অবৈধভাবে থাকা হকার, সিএনজি স্ট্যান্ড ও গাড়ি পার্কিংয়ের উচ্ছেদ ও জরিমানার নির্দেশ দেন। এসপি হারুন অর রশিদ বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পর নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করায় নাগরিক অনেক দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হয়নি। সেজন্য আমরা এ মুহূর্তে চাষাঢ়া ও মহিলা কলেজের আশেপাশের যানজট নিরসনে কাজ শুরু করেছি। পরবর্তীতে ধারাবাহিক ভাবে বঙ্গবন্ধু সড়কে করা হবে।
তিনি আরো বলেন, ভূমিদস্যু, মাদক ও যানজট নিরসনে কাজ করবো। জানুয়ারি মাস থাকবে যানজট মুক্ত, হকার মুক্ত এবং মাদক মুক্ত নারায়ণগঞ্জ হিসেবে। বাসযোগ্য করার জন্য যা যা করার প্রয়োজন তাই করবো। শহরের যানজট ও হকার মুক্ত করার জন্য জেলা প্রশাসন সহ জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে আমরা দ্রুত এ বিষয়ে কাজ করছি। পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ কোন কাজে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তার এমন বক্তব্যের পর শনিবার থেকে কার্যকর হতে শুরু করেছে প্রশাসনের তৎপরতা। এসপি হারুনের এহেন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই হকার ও অবৈধ স্ট্যান্ড ইস্যুতে নাগরিক দুর্ভোগে ভুগতে থাকা শহরবাসী। বিশেষ করে ২০১৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর বড় দিনের উৎসবের সময় তৎকালীন পুলিশ সুপার মঈনুল হক বড়দিনের উৎসবে যোগ দিতে আসলে তৎকালীন সদর মডেল থানার ওসি শাহীন শাহ পারভেজ একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সঙ্গে হকার ইস্যুতে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। ওই ঘটনার জের ধরে ওসিকে ক্লোজড করার পাশাপাশি গোটা নগরীতেই হকার ইস্যুতে কঠোর হন তৎকালীন পুলিশ সুপার সহ প্রশাসন।
এরপর হকাররা আন্দোলনে নামলে সহোদর এমপি সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমান হকারদের পক্ষ নেন। অপরদিকে হকার বিরোধী কঠোর অবস্থানেই ছিলেন নাসিকের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারী মেয়র আইভী সিটি করপোরেশনের জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং অনুগামী নেতাকর্মীসহ চাষাঢ়ায় সায়াম প¬াজার সামনে আসলে হকারদের সঙ্গে সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
এদিকে ওই ঘটনার পরে দীর্ঘদিন শহরের ফুটপাত দখলমুক্ত থাকলেও পুলিশ সুপার মঈনুল হকের বদলীর পরে আবারো দখল হয়ে যায় ফুটপাত। আবারো বহাল হয়ে যায় শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায় ৮টি অবৈধ স্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন মোড়ের অবৈধ স্ট্যান্ড। কিছু কিছু স্থানে ফুটপাত এমনভাবে দখল হয়েছে সেখানে সাধারণ মানুষের ফুটপাত দিয়ে চলার উপায় নেই। যেমন চাষাঢ়ায় সোনালী ব্যাংকের সামনে ফুটপাত যেমন দখল হয়েছে ঠিক তার সামনের সড়কেও রয়েছে অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ‘দৈনিক হিসেবে বঙ্গবন্ধু সড়কে সবচেয়ে বেশি হকার বসে। আর এই সড়কে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয়। যেকারণে এই ফুটপাতের চাঁদবাজির পরিমাণও বেশি। তার উপরে পুলিশি ও রাজনৈতিক বাধা পেরুতে গিয়ে সেই চাঁদার পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। এতে করে হকার নেতারা উপর মহলকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে ফের হকার বসাচ্ছেন। তবে এই মোটা অংকের টাকার যোগান দিতে হকারদের কাছ থেকে প্রতিদিন চাঁদাবাজি করে থাকে বিভিন্ন হকার নেতারা। এরপরই রয়েছে সিরাদ্দৌলা সড়ক ও নবাব সলিমুল¬াহ সড়ক। এই তিনটি সড়কে চাঁদাবাজির পরিমাণ একের হকারদের কাছে একের রকম। ফুটপাতে দোকানের পজিশন অনুযায়ী হকারদের চাঁদার পরিমাণ কম বেশি হয়ে থাকে। তবে পুলিশি ও রাজনৈতিক যত বাধা বিপত্তি আসে হকাদের কাঁধে এই চাঁদার পরিমাণ তত বাড়ে। তাই এ চাঁদার পরিমাণ গত কয়েক মাসে দুই থেক তিনগুণ পর্যন্ত বেড়েছে। তবে এই চাঁদা শুধুমাত্র হকারদের দিয়েই খান্ত করা যায়না তার সাথে নতুন করে আবার পুলিশ প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ফের ভাগ বসায়।
হকার সূত্র বলছে, ‘প্রতিদিন বিভিন্ন দোকানের পজিশন অনুযায়ী ১শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। যদিও বিগত দিনে সর্বোচ্চ ৫শ টাকা চাঁদা আদায়ের বিষয়টি জানা গেলেও সেই চাঁদার পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা হয়েছে। যদিও হকার নেতারা পুলিশ প্রশাসন সহ রাজনৈতিক বিভিন্ন আমলাদের কথা বলে হকার নেতারা এই টাকা হকারদের কাছ থেকে আদায় করলেও পরবর্তীতে আবারো পুলিশ প্রশাসনের কিছু আসাধু কর্মকর্তারা হকারদের কাছে ফের টাকা দাবি করে। আর হকাররা অনেকটা বাধ্য হয়ে সেই দাবিকৃত টাকা দেয়।’