ধর্ম ও বিজ্ঞানে মানব সৃষ্টির রহস্য
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৪:২৬ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ সোমবার
বিজ্ঞান বলে আমাদের উৎপত্তি বানর থেকে কিন্তু আমরা জানি মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টিকর্তা।
স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের মনে এখন প্রশ্ন জাগতে পারে তাহলে বিজ্ঞান কী ভুল? না কী আমরা যে বিজ্ঞান জানি সেটি ভুল? আসুন ধর্ম এবং বিজ্ঞানের আদলে জেনে নেই মানব সৃষ্টির রহস্য!
পবিত্র কোরআনে হতে আমরা জানতে পারি হজরত আদম (আলাইহিস সালাম) বিশ্ব ইতিহাসে প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী হিসেবে আল্লাহ পাক আদম (আ.)-কে নিজ দু'হাত দ্বারা সরাসরি সৃষ্টি করেন। মাটির সকল উপাদানের সার নির্যাস একত্রিত করে আঠালো ও পোড়ামাটির ন্যায় শুষ্ক মাটির তৈরী সুন্দরতম অবয়বে রূহ ফুঁকে দিয়ে আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আদম (আ.) এর পাজর থেকে তার স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করেন। আর এ কারণেই স্ত্রী জাতি স্বভাবগত ভাবেই পুরুষ জাতির অনুগামী ও পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট। অতঃপর স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে একই নিয়মে মানব বংশ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে কোরআন-এর বর্ণনা অনুযায়ী।
সে দিন থেকে মানুষ পূর্ণ চেতনা ও জ্ঞান সম্পন্ন সভ্য মানুষ হিসাবেই যাত্রারম্ভ করেছে এবং আজো সেভাবেই তা অব্যাহত রয়েছে। অতএব গুহামানব, বন্যমানব, আদিম মানব ইত্যাদি বলে অসভ্য যুগ থেকে সভ্য যুগে মানুষের উত্তরণ ঘটেছে বলে কিছু কিছু ঐতিহাসিক যেসব কথা শুনে থাকেন, তা সবকিছু কল্পনা ব্যতীত কিছুই নয়।
সূচনা থেকে এযাবৎ এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় মানুষ কখনোই মানুষ ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। উনবিংশ শতাব্দীতে এসে চার্লস ডারউইন বলে মানুষ বানর বা উত্নকের উদ্বর্তিত রূপ। যে বিবর্তনবাদ' (Theory of Evolution) পেশ করেছেন, তা বর্তমানে একটি মৃত মতবাদ মাত্র এবং তা প্রায় সকল বিজ্ঞানী কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
প্রথম মানুষ আদি পিতা হজরত আদম (আ.)-কে আল্লাহ সব বিষয়ের জ্ঞান ও যোগ্যতা দান করেন এবং বিশ্বে আল্লাহর খেলাফত পরিচালনার মর্যাদায় অভিষিক্ত করেন। সঙ্গে সঙ্গে সকল সৃষ্ট বস্তুকে করে দেন মানুষের অনুগত।
মানব সৃষ্টির রহস্য:
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারিমে বলেন,
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلاَئِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِّن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ
فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِي فَقَعُواْ لَهُ سَاجِدِينَ
‘স্মরণ কর সেই সময়ের কথা, যখন তোমার প্রভু ফেরেশতাদের বললেন, আমি মিশ্রিত পচা কাঁদার শুকনো মাটি দিয়ে ‘মানুষ’ সৃষ্টি করব। অতঃপর যখন আমি তার অবয়ব পূর্ণভাবে তৈরী করে ফেলব ও তাতে আমি আমার রূহ ফুঁকে দেব তখন তোমরা তার প্রতি সিজদায় পড়ে যাবে’ (হিজর ১৫/২৮-২৯)।’
অন্যত্র বলেছেন,
هُوَ الَّذِي يُصَوِّرُكُمْ فِي الأَرْحَامِ كَيْفَ يَشَاء لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
‘তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদেরকে মাতৃগর্ভে আকার-আকৃতি দান করেছেন যেমন তিনি চেয়েছেন। তিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। তিনি মহা পরাক্রান্ত ও মহাবিজ্ঞানী (আল ইমরান ০৬)
উপরোক্ত আয়াতগুলোতে আদম সৃষ্টির পর্যায় বের করা হয়েছে। প্রথমে মাটি দ্বারা অবয়ব নির্মাণ, অতঃপর তার আকার-আকৃতি গঠন ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সমূহে শক্তির আনুপতিক হার নির্ধারণ ও পরস্পরের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান এবং সবশেষে তাতে রূহ সঞ্চার করে আদমকে অস্তিত্ব দান। অতঃপর আদমের অবয়ব (পাঁজর) থেকে কিছু অংশ নিয়ে তার জোড়া বা স্ত্রী সৃষ্টি করা। সৃষ্টির সূচনা পর্বের এই কাজগুলো আল্লাহ সরাসরি নিজ হাতে করেছেন (ছোয়াদ ৩৮/৭৫)।
অতঃপর এই পুরুষ ও নারী স্বামী-স্ত্রী হিসাবে বসবাস করে প্রথম যে যমজ সন্তান জন্ম দেয়, তারাই হলো মানুষের মাধ্যমে সৃষ্ট পৃথিবীর প্রথম মানব যুগল। তারপর থেকে এযাবত স্বামী-স্ত্রীর মিলনে মানুষের বংশ বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শুধু মানুষ নয়, উদ্ভিদরাজি, জীবজন্ত ও প্রাণীকুলের সৃষ্টি হয়েছে মাটি থেকে।
মৃত্তিকাজাত সকল প্রাণীর জীবনের প্রথম ও মূল একক হচ্ছে প্রোটোপ্লাজম' । যাকে বলা হয় ‘আদি প্রাণসত্তা। এ থেকেই সকল প্রাণী সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য বিজ্ঞানী মরিস বুকাইলী একে বোম্ব সেল বলে অভিহিত করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে মাটির সকল প্রকারের রাসায়নিক উপাদান। মানুষের জীবন বীজে প্রচুর পরিমাণে চারটি উপাদান পাওয়া যায়। অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ও হাইড্রোজেন। আর আটটি পাওয়া যায় সাধারণভাবে সমপরিমাণে সেগুলি হলো- ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ক্লোরিন, সালফার ও আয়রন।
আরো আটটি পদার্থ পাওয়া যায় স্বল্প পরিমাণে তা হলো: সিলিকন, মোলিবডেনাম, ফুরাইন, কোবাল্ট, ম্যাঙ্গানিজ, আয়োডিন, কপার ও যিংক। কিন্তু এই সব উপাদান সংমিশ্রিত করে জীবনের কণা তথা ‘প্রোটোপ্লাজম’ তৈরী করা সম্ভব নয়। জনৈক বিজ্ঞানী দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এসব মৌল উপাদান সংমিশ্রিত করতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। এই সংমিশ্রণ ও তাতে জীবন সঞ্চার আল্লাহ ব্যতীত কারো পক্ষে সম্ভব নয়। বিজ্ঞান এক্ষেত্রে মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছে।