শোকেসে সাজানো কোরআন
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৪:৩৬ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ সোমবার
মানুষের অনেক সঙ্গী-সাথী থাকে। তবে মুমিনের সঙ্গী হল কোরআন। মুমিন তার জীবনের সব সমস্যার সমাধান কোরআনে খোঁজেন।
তারা কোরআনে সমস্যাগুলোর সমাধান পেয়েও যান। কোরআনকে আঁকড়ে ধরার বিনিময়ে মুমিন বান্দা আল্লাহর পক্ষ থেকে দুনিয়া ও আখেরাতে অনেক নেয়ামতপ্রাপ্ত হন।
কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে মানুষ! তোমাদের প্রভুর তরফ থেকে তোমাদের কাছে একটি উজ্জ্বল প্রমাণ এসেছে এবং আমিই তোমাদের কাছে উজ্জ্বল জ্যোতি অবতীর্ণ করেছি। অতঃপর যারা ইমান আনল তাকে শক্ত করে আঁকড়ে থাকল, আল্লাহ পাক তাদের অচিরেই তার অফুরন্ত দয়া-অনুগ্রহে প্রবেশ করাবেন এবং তাদের তিনি সঠিক পথে পরিচালিত করবেন। (সূরা নিসা, আয়াত : ১৭৪-১৭৫)। সমাজে অনেক বিষয় নিয়ে তর্কবিতর্ক হতে পারে।
ভিন্ন মত-পথ থাকতে পারে। যারা তর্কবিতর্ক করে তাদেরও কোনো না কোনো একটি বিশ্বাস থাকতে পারে। সব মত-পথের বাধা অতিক্রম করার সহজ উপায় হল কোরআনকে জানা। কোরআনকে বন্ধু হিসেবে নেয়া। কোরআনের আয়াতগুলোর শানেনুজুল জানা ও বোঝার চেষ্টা করা।
কোরআন শুধু সওয়াবের উদ্দেশ্যে তেলাওয়াত করলে কোরআনের প্রকৃত স্বাদ ও নেয়ামত উপলব্ধি করা যায় না। কোরআন মুমিনকে শুধু সহজ-সরল পথই দেখায় না বরং পথের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেয়।
কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আমি আপনার ওপর এ (কিতাব) এ জন্যই অবতীর্ণ করেছি যেন আপনি তাদের সামনে সে বিষয়গুলো সুস্পষ্ট করে পেশ করতে পারেন, (যে বিষয়ের মধ্যে) তারা মতানৈক্য করেছে, বস্তুত এ (কিতাব) হচ্ছে ইমানদারদের হেদায়াত ও আল্লাহর অনুগ্রহ স্বরূপ।’ (সূরা নাহল, আয়াত : ৬৪)।
দুনিয়াবি মায়া জঞ্জালের বেড়াজালে পড়ে ইমানে দৃঢ় থাকা কঠিন। চারদিকে এখন ফেতনা ও মতানৈক্যের ছড়াছড়ি। কোরআনকে বাক্সবন্দি করে ব্যক্তিগত মত ও বিভিন্ন কিতাবাদি রেফারেন্সের প্রাধান্য দেয়া যেন একটি আচারে পরিণত হয়েছে।
কোরআনের বাইরে যে কোনো বিষয় ও রেফারেন্স সম্পর্কে মুমিনকে সতর্ক থাকতে হবে। এখন ইমান দৃঢ় রাখা অনেকটা আগুনের কয়লা হাতের মুঠোয় রাখার মতো।
কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্যই এ কোরআন এমন এক পথের নির্দেশনা দেয় যা অতি মজবুত এবং যেসব ইমানদার মানুষ নেক আমল করে, এ (কিতাব) তাদের (এ) সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য (আল্লাহর কাছে) এক মহাপ্রতিদান রয়েছে।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৯)।
সৃষ্টি জগতের ছোট-বড় সব ঘটনার প্রমাণাদি কোরআনে বর্ণনা করা হয়েছে। মুমিনের কাজ শুধু কোরআনকে দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী করা। কোরআনকে বন্ধু বানাতে পারলে জান্নাতের পথে, রবের পথে যাওয়ার আর কোনো বাধা থাকবে না।
কেউ যখন কোরআনের বন্ধু হয় তখন পুরো দুনিয়া তার হাতের মুঠোয় চলে আসে। কোরআনের বন্ধুকে কারও কাছে কোনো কিছুর জন্য হাত পাততে হয় না। সাহায্য-সহায়তা চাইতে হয় না। কোরআনই তার মুমিন বন্ধুকে পথ বাতলে দেয়। কারআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আসমান ও জমিনে এমন কোনো গোপন রহস্য নেই যা সুস্পষ্ট গ্রন্থে নেই’ (সূরা নাহল, আয়াত : ৭৫)। এরশাদ হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে এ (কোরআন) হচ্ছে ইমানদারের জন্য হেদায়াত ও রহমত’। (সূরা নাহল, আয়াত : ৭৭)।
প্রতিদিন বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে একে অপরের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে। একটু উপদেশ নেয়ার জন্য বন্ধুদের কাছে হাই হ্যালো করে। অথচ ঘরের এক কোণে শোকেসে সুন্দর গিলাপ দিয়ে কোরআন মোড়ানো রয়েছে। সুন্দর কাচের গ্লাসের ভেতর মোড়ানো কোরআন খুলেও দেখে না।
অথচ উকিল মোক্তার ডাক্তার কবিরাজের কাছে দৌড়াদৌড়ি হইহুল্লোড়ের কমতি নেই। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আমি (নিশ্চয়ই) উপদেশ গ্রহণ করার জন্য এ কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি, কে আছে তোমাদের মাঝে এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার’। (সূরা কামার, আয়াত : ১৭)। সুতরাং কোরআনকে বন্ধু বানানোর জন্য আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন। (আমিন)।