সুপথ প্রাপ্তদের মাঝে যারা উত্তম
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৯:০০ পিএম, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ বুধবার
সৎপথ প্রাপ্ত মানুষেরা প্রধানত দুই প্রকার। একদল লোক যারা কেবল নিজেরা সৎকর্ম করে আর অপরদল যারা নিজেরা সৎকর্মশীল হওয়ার পাশাপাশি অন্যকেও সৎকর্মশীল হতে উৎসাহিত করে এবং সমাজে সৎকর্মকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রচেষ্টা চালায়।
ইসলামী পরিভাষায় প্রথম প্রকার লোকদের সালিহ (صالح) এবং দ্বিতীয় প্রকার লোকদের মুসলিহ (مصلح) নামে অভিহিত করা হয়।
নামগুলো একরকম শোনালেও দুটি দল একই ধরণের বাস্তবতার মুখোমুখি হয় না। সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিরা শুরু থেকেই অন্যান্য লোকের ভালবাসার পাত্র হলেও যারা নিজেরা সৎকর্ম করার পাশাপাশি অন্যকেও সৎকর্মশীল হওয়ার আহবান জানায়, মন্দ কাজ হতে বাঁধা প্রদান করে, তারা সমাজের কাছে প্রাথমিকভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের পাত্রে পরিণত হয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর দিকে লক্ষ্য করুন। নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে তিনি ছিলেন সবার প্রিয়পাত্র এবং তার সৎকর্মপরায়ণতার জন্য সকলেই তার প্রশংসা করত। কিন্তু যখনই তিনি নবুওয়াত পেলেন এবং সমাজকে সততা ও ন্যায়ের ভিত্তিতে গড়ে তোলার চেষ্টা শুরু করেন, তখন তার প্রশংসাকারী ব্যক্তিরাই তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেল।
যে সকল ব্যক্তি নিজেরা সৎকর্মপরায়ণ হওয়ার পাশাপাশি তাদের চারিপাশের সমাজকে সৎকর্ম ও ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন, তারা সর্বদাই আল্লাহর দৃষ্টিতে তাদের তুলনায় উত্তম হিসেবে বিবেচিত হবেন, যারা শুধু নিজেদের সৎকর্ম করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেন।
কুরআনে আল্লাহ বলেন,
لَّا يَسْتَوِي الْقَاعِدُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ غَيْرُ أُولِي الضَّرَرِ وَالْمُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ ۚ فَضَّلَ اللَّهُ الْمُجَاهِدِينَ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ عَلَى الْقَاعِدِينَ دَرَجَةً ۚ وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَىٰ ۚ وَفَضَّلَ اللَّهُ الْمُجَاهِدِينَ عَلَى الْقَاعِدِينَ أَجْرًا عَظِيمًا
“গৃহে উপবিষ্ট মুসলমান-যাদের কোন সঙ্গত ওযর নেই এবং ঐ মুসলমান যারা জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জেহাদ করে,-সমান নয়। যারা জান ও মাল দ্বারা জেহাদ করে, আল্লাহ তাদের পদমর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন গৃহে উপবিষ্টদের তুলনায় এবং প্রত্যেকের সাথেই আল্লাহ কল্যাণের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ মুজাহিদীনকে উপবিষ্টদের উপর মহান প্রতিদানে শ্রেষ্ঠ করেছেন।” –সূরা নিসা: ৯৫
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
وَمَا كَانَ رَبُّكَ لِيُهْلِكَ الْقُرَىٰ بِظُلْمٍ وَأَهْلُهَا مُصْلِحُونَ
“আর তোমার পালনকর্তা এমন নন যে, জনবসতিগুলোকে অন্যায়ভাবে ধ্বংস করে দেবেন, সেখানকার লোকেরা সৎকর্মের দিকে আহবানকারী।” –সূরা হুদ: ১১৭
উপরের আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, অন্যায় ও দুর্নীতিগ্রস্ত একটি সমাজকে আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত ধ্বংস করেন না, যতক্ষণ সেখানে একদল লোক সৎকর্মের দিকে আহবান জানাতে থাকেন।
কুরআনে কারীমের আয়াতটিতে আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণ (صالحون) ব্যক্তিদের কথা বলেননি, বরং তিনি বলেছেন সৎকাজের প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকারীদের (مصلحون) কথা।
সুতরাং শুধু নিজেদের সৎকর্মের মধ্যেই আমাদের সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়, বরং আমাদের উচিত অন্যকেও সৎকর্মের প্রতি উৎসাহিত করা। আল্লাহ আমাদের এই কাজে যোগ্য ও সফল করুন। আমীন।