মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তাকদিরে বিশ্বাস না করলে ঈমান থাকেনা

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০২:১৫ পিএম, ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ বৃহস্পতিবার

যখন কোনো ভালো বা মন্দ কিছু ঘটবে তখন তা আল্লাহ তায়ালার আদেশ এবং ইচ্ছায় হয়ে থাকে এই বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোনো কিছু সংঘটিত হওয়া সম্ভব নয় এবং আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক তা নির্ধারিত। তাকদির বা ভাগ্যে বিশ্বাস করা ঈমানের মূলস্তম্ভ তথা রোকন। যাতে বিশ্বাস না রাখলে ঈমান পরিপূর্ণ হবে না।

পৃথিবীতে যা কিছু ঘটছে এবং যা ঘটবে তা তাকদিরে লিপিবদ্ধ আছে। তাকদির নিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন শরীফে বলেন, ‘আমি প্রত্যেক বস্তুকে তাকদীর অনুযায়ী সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা ক্বামার, আয়াত: ৪৯)


 আল্লাহ তায়ালার বাণী থেকে বলা যায় তাকদিরে বিশ্বাস ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সূরা ফুরকানের ২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের অধিকারী; তিনি কোনো সন্তান গ্রহণ করেননি; সার্বভৌমত্বের তার কোনো শরিক নেই। তিনি তাবৎ কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে পরিমিত করেছেন যথাযথ অনুপাতে।’

আল্লাহ সমগ্র জগত সৃষ্টি করেছেন। সমস্ত কিছু আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে সৃষ্টি সংক্রান্ত যাবতীয় নিয়তি (তাকদীর) লাওহে-মাহফুজে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন’ (সহিহ মুসলিম: ২৬৫৩)

আল্লাহা তায়ালা আমাদের বোধশক্তি দিয়েছেন। আমরা কি করবো না করবো এবং তার ভালো মন্দের পার্থক্য নিরূপণের সামর্থ্য আল্লাহ তায়ালা আমাদের দিয়ে দিয়েছেন। পবিত্র কোরানে এসেছে, ‘আল্লাহ সব কিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সব কিছুর তত্ত্বাবধায়ক।’ (সূরা ৩৯ আয-যুমার, আয়াত: ৬২)

আল্লাহ তায়ালার কাছে আমরা যেকোনো শুভ কাজ আরম্ভ করার সময় সাহায্য চাইবো। আল্লাহ তায়ালার কাছ হতে কল্যাণ অর্জন এবং অকল্যাণ ও অনিষ্ট বর্জনের জন্যে দোয়া প্রার্থনা করবো। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ কর এবং একনিষ্ঠভাবে তাতে মগ্ন হও।’ (সূরা মুজাম্মিল, আয়াত: ৮)


 
তাকদির এমন এক রহস্যময় এবং গায়েবী বিষয় যে মহান আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত কেউ এই বিষয়ে অবগত নয়। মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর সৃষ্টিকূল হতে এই বিষয়টি গোপন রেখেছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আর গায়েবের চাবিকাঠি তাঁর কাছেই রয়েছে। তিনি ব্যতীত কেউই তা জানে না। স্থলভাগে ও সমুদ্রভাগে যা কিছু আছে, সবই তিনি জানেন। গাছের একটি পাতা ঝরলেও তা তিনি জানেন। মাটিতে লুক্কায়িত এমন কোনো শস্যদানা নেই বা সেখানে পতিত এমন কোনো সরস বা শুষ্ক ফল নেই, যা (আল্লাহর) সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই’ (সূরা: আন‘আম, আয়াত: ৫৯)

তাকদিরে বিশ্বাস স্থাপন করা একজন মুসলমানের জন্য অতীব জরুরি এবং তাকদিরে অবিশ্বাস করা কবিরা গুনাহ। যে ব্যক্তি তাকদিরে বিশ্বাস রাখে না সে মুসলমান নয়, কারণ তাকদিরে অবিশ্বাস স্থাপনকারীর ঈমান পরিপূর্ণ নয়। প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো বান্দাই মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না এই চারটি কথায় বিশ্বাস করবে, (১) এ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। তিনি আমাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন। (২) মৃত্যুতে বিশ্বাস করবে। (৩) মৃত্যুর পর পুনরুত্থানে বিশ্বাস করবে। (৪) তাক্বদীরে বিশ্বাস করবে।’

হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত জিবরাঈল (আ.) একবার মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে এই প্রশ্ন করেন যে, ঈমান কি? প্রত্যুত্তরে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ঈমান হচ্ছে আল্লাহর ওপরে তাঁর ফেরেশতার ওপরে, তাঁর রাসূলগণের ওপরে, তাঁর কিতাব সমূহের ওপরে, বিচার দিবসের ওপরে এবং তাক্বদীরের ভালো-মন্দের ওপরে বিশ্বাস রাখা।’

 
অর্থাৎ, একজন মুমিন অন্যান্য বিষয় সমূহের সঙ্গে তাকদিরেও বিশ্বাস রাখবে। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘ঈমানদারের জীবনাচার আশ্চর্য ধরনের। সব কিছুই তার জন্য কল্যাণকর। এ ব্যাপারটা ঈমানদার ছাড়া অন্য কারো জন্য হয় না। তার কাছে যদি কল্যাণ পৌঁছে, তাহলে সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। এটা তার কল্যাণ বহন করে। আর যদি তার কাছে দুঃখ-কষ্ট পৌঁছে, তাহলে সে ধৈর্য ধারণ করে। এটাও তার জন্য কল্যাণকর।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস: ২৯৯৯)

আমরা আমাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন করার জন্যে বেশি বেশি দোয়া এবং সাদকা করতে পারি। হজরত সওবান (রা.) থেকে বর্ণিত যে, হাদিসের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে, দোয়ার মাধ্যমে মানুষের যে তাকদির রয়েছে, সে তাকদিরের পরিবর্তন হয়ে থাকে। দোয়া করা একটি ইবাদত। আল্লাহ তায়ালার কাছে একাগ্রচিত্তে কিছু চাওয়াকে দোয়া বলে। আমাদের জীবনে অনেক কিছুই আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে না চেয়েও পেয়ে থাকি। আল্লাহ রাহমানুর রাহীম, আমাদের রহমত ও বরকত দিয়ে থাকে। আল্লাহর হুকুমের কখনো এক চুল পরিমাণ তারতম্য হয় না। দোয়া করা এবং আল্লাহর কাছে যে কোনো কিছু চাওয়ার জন্যে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন।

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আমার নিকট চাও আমি তোমাদেরকে দেব।’ আল্লাহর কাছে বান্দা কিছু চাইলে তিনি খুশি হন, হাদীসে এসেছে ‘আল্লাহর কাছে দোয়া অপেক্ষা অধিক প্রিয় জিনিস আর কিছুই নেই।’ আল্লাহ তায়ালার কাছে নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যেকোনো মুহূর্তে আল্লাহর কাছে দোয়া করা যেতে পারে। আল্লাহ বলেছেন, আমার কাছে দোয়া চাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট সময় নাই। যখন যে মুহূর্তে যার যা প্রয়োজন হবে তোমরা তাই আমার কাছে চাইবে।

তবে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে তা যদি বান্দার জন্যে উত্তম হয় তবে তা আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে দিয়ে থাকেন। আল্লাহর কাছে যদি বান্দা এমন কিছু চায়, যা বান্দার জন্যে ভালো নয়, তবে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাকে তা দেন না।