মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইবাদতের স্বাদ বৃদ্ধির উপায় (পর্ব- ১)

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৮:৩৪ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ শনিবার

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ

‘আমি জিন ও ইনসান সৃষ্টি করেছি কেবল এজন্য যে, তারা আমার ইবাদত করবে’ (যারিয়াত ৫১/৫৬)।

 

উপরের আয়াতে দু’টি বিষয় স্পষ্ট। (এক) মানুষ নিজ ইচ্ছায় ও নিজে নিজে সৃষ্টি হয়নি। বরং আল্লাহ ইচ্ছায় ও তাঁর প্রদত্ত বিধান ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্ট হয়েছে। (দুই) স্বীয় ইবাদতের জন্যই আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন।

মানুষ তার শৈশব কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব, বার্ধক্য সব স্তর পেরিয়ে এক সময় আল্লাহর হুকুমে মৃত্যুমুখে পতিত হবে। অতঃপর তাকে আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে তার সারা জীবনের কর্মের জবাবদিহি করতে হবে। বিচারে সে জান্নাতী হবে অথবা জাহান্নামী হবে।

মহান আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেছেন,

أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُونَ

‘তোমরা কি ভেবেছ যে, আমি তোমাদেরকে বৃথা সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার কাছে ফিরে আসবে না?’ (মুমিনূন ২৩/১১৫)

 

এর আগে জিনেরা এই পৃথিবীতে বসবাস করেছে। কিন্তু তারা এখানে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল। ফলে আল্লাহ তাদের সরিয়ে দিয়ে মানুষ সৃষ্টি করে তাদেরকে এ পৃথিবী আবাদ করার দায়িত্ব দিয়েছেন (বাক্বারাহ ২/৩০)।

যে ব্যক্তি যত সুন্দরভাবে আল্লাহর আনুগত্য করবে, তাঁর প্রতি যত বেশি ভয় ও ভালোবাসা নিয়ে ইবাদত করবে, সে তত বেশি সুন্দরভাবে পৃথিবীকে আবাদ করবে এবং এখানে তত বেশি আল্লাহর রহমত নেমে আসবে। মানব জীবন সুখী ও শান্তিময় হবে।

যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ

‘পুরুষ হোক নারী হোক মুমিন অবস্থায় যে সৎকর্ম সম্পাদন করে, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং অবশ্যই তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম অপেক্ষা উত্তম পুরস্কারে ভূষিত করব’ (নাহল ১৬/৯৭)।

 

আর মানুষ যত আনুগত্যহীন হবে ও আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালোবাসা থেকে বিমুখ হবে, তার জীবন তত বেশি অসুখী ও অশান্তিময় হবে।

যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى

‘আর যে ব্যক্তি আমার স্মরণ থেকে বিমুখ হবে, তার জীবন-জীবিকা সংকুচিত হবে এবং আমি তাকে ক্বিয়ামতের দিন অন্ধ করে উঠাব’ (ত্বোয়াহা ২০/১২৪)।

একজন ভক্তির সঙ্গে নেকীর আশায় পিতা-মাতা ও গুরুজনের আনুগত্য করে। আরেকজন স্রেফ নিয়ম রক্ষার জন্য সেটা করে, আরেকজন কপটতার সঙ্গে করে, এই তিনজনের মধ্যে কেবল প্রথম জন আনুগত্যের স্বাদ পায়। ইহকালে সে প্রশান্তি লাভ করে এবং পরকালে সে জান্নাত লাভে ধন্য হয়। পিতা-মাতা ও গুরুজনের চাইতে বহু বহু গুণ ঊর্ধের আনুগত্য ও ভক্তি পাওয়ার অধিকারী হলেন আল্লাহ। যিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা ও রূযীদাতা। অতএব তাঁর প্রতি আনুগত্যের পরিধি ও ভক্তির স্বাদ কত গভীর হওয়া উচিত, তা সহজে অনুমেয়।

 

সকল প্রশংসা ও সর্বোচ্চ কৃতজ্ঞতা কেবল তাঁর প্রতিই হওয়া কর্তব্য। আর সেজন্যই প্রতি ছালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ ফরজ করা হয়েছে। যার শুরুতে রয়েছে, الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ‘আলহামদুলিল্লাহ হি রব্বিল ‘আলামীন’ (কৃতজ্ঞতাপূর্ণ সব প্রশংসা জগত সমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য’)।

অতএব কৃতজ্ঞতাবোধ যার মধ্যে যত বেশি, সে তত বেশি আল্লাহর রহমত লাভ করে এবং ইহকালে ও পরকালে সুখী জীবন যাপন করে।

হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তিনটি বস্তু যার মধ্যে রয়েছে, সে তার মাধ্যমে ঈমানের স্বাদ পেয়েছে। (ক) যার নিকটে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সব কিছু হতে প্রিয়তর (খ) যে ব্যক্তি কাউকে স্রেফ আল্লাহর জন্য ভালোবাসে এবং (গ) যে ব্যক্তি কুফরীতে ফিরে যাওয়াকে এমন অপছন্দ করে, যা থেকে আল্লাহ তাকে মুক্তি দিয়েছেন, যেমন সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হতে অপছন্দ করে।

হজরত আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ওই ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পেয়েছে যে ব্যক্তি প্রতিপালক হিসাবে আল্লাহর ওপর, দ্বীন হিসেবে ইসলামের ওপর এবং রাসূল হিসাবে মুহাম্মাদ (সা.) এর ওপর সন্তুষ্ট হয়েছে’।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসার পরেই আসে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি ভালোবাসা। কেননা তাঁর মাধ্যমেই আখেরী যামানার মানুষ আল্লাহ ও তাঁর দ্বীনের সন্ধান পেয়েছে। তিনিই আল্লাহর সর্বশেষ বাণীবাহক ও আল্লাহর দ্বীনের বাস্তব রূপকার। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা যার যত বেশি, তিনি তত বেশি

সুন্দরভাবে আল্লাহর আনুগত্য করতে পারবেন ও তার স্বাদ অনুভব করবেন। সেকারণে তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ (প্রকৃত) মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকটে প্রিয়তর হব তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্তুতি ও সব মানুষ হতে।

সূত্র: বুখারী হা/১৬; মুসলিম হা/৪৩; মিশকাত হা/৮।

মুসলিম হা/৩৪; মিশকাত হা/৯।

বুখারী হা/১৫; মুসলিম হা/৪৪; মিশকাত হা/৭।

শব্দ- ৫৯৫