বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে কোচিং’

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৬:৩২ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯ রোববার

শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘কোচিং’ পদ্ধতি বৈরী পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলে মত দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এবং অ্যামিকাস কিউরি ফিদা এম কামাল।

নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক দশজন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তারা এটা (কোচিং) করতে পারে না। এটা প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।’


কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা ও কোচিং বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে জারি করা রুলের শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে এ মতামত উপস্থাপন করেন তিনি।

রোববার (২৭ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে মোট পাঁচটি রিটের শুনানি হয়। শুনানি শেষে ৭ ফেব্রুয়ারি এসব রিটের ওপর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আদালত।

শুনানিতে দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। এক রিটকারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। অ্যামিকাস কিউরি ছিলেন ফিদা এম কামাল।

কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগে মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে ২০১৮ সালে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এ নোটিশ দেয়া হয়। এসব নোটিশ ও শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা-২০১২ নিয়ে শিক্ষকরা হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।

২০১৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই চিঠির কার্যকারিতা চার মাসের জন্য স্থগিতের পাশাপাশি রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

ওই আদেশের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালেই দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ দুটি আপিল করার অনুমতি চেয়ে লিভ টু আপিল করেন। ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি সেই আবেদনের শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১৮ সালের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চেকে এ রুলের নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছিল। আজ ওই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়।

হাইকোর্টে এ রুল নিষ্পত্তির জন্য সাবেক দুই অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফ ও ফিদা এম কামালকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেন।

ফিদা এম কামাল আজ শুনানিতে বলেন, ‘নীতিমালাটি (কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা-২০১২) স্বাধীন নয়। সরকারি কর্মচারী নীতিমালা ১৯৮৫ অনুযায়ী যেকোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে। বেসরকারি শিক্ষকরা যদি আইন ভঙ্গ করেন তাহলে কী হবে? শ্রেণি কক্ষের বাইরে কোচিং চলছে। ফলে ক্লাসকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। এটা শুধু পাস করার পদ্ধতি বাতলে দিচ্ছে। এমপিও, নন এমপিও এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্য করতে পারেন না।’

তখন আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, ‘সরকার চাইলে তাদের বিষয়ে (এমপিও, নন এমপিও এবং সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক) অন্যভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এ নীতিমালার দরকার ছিল না।’

আদালত এ সময় ফিদা এম কামালকে বলেন, ‘তাহলে আপনি পরামর্শ দিচ্ছেন, এই নীতিমালার অধীনে যেসব শিক্ষকরা রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে?’

ফিদা এম কামাল বলেন, ‘এটা একটা হোস্টাইল সিচ্যুয়েশন। নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক দশজন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারেন। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তারা এটা করতে পারে না। এটা প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর লেখার বরাত দিয়ে ফিদা এম কামাল বলেন, ‘শিক্ষা নাগরিকের অধিকার। কোনো রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক ছাড়া কোচিং বাণিজ্য চলতে পারে না। আমরা ক্লাসরুমের পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারছি না বলেই ব্যাঙের ছাতার মতো কোচিং সেন্টার গজিয়ে উঠছে।’

আদালত তখন বলে, ‘একজন শিক্ষার্থী যখন এসএসসিতে পড়ছে তখনই অভিভাবকরা তার মাথায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে- ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। ক্লাসরুমে মেডিকেল, বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যে পড়াশোনা সেটা দেয়া হয় না। ফলে শিক্ষার্থী কোচিংয়ে যাচ্ছে। সরকার ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ করছে না কেন?

ফিদা এম কামাল বলেন, ‘কোচিংয়ে গিয়ে শিক্ষার্থী পরীক্ষায় পাস করছে, কিন্তু শিক্ষিত হচ্ছে না। কারণ ক্লাসরুমের শিক্ষা দেয়া হয়। শিক্ষক সম্মানী পায় ক্লাসে শিক্ষা দেয়ার জন্য, কোচিং তার পেশা নয়। প্রাইভেট টিউশনকে নীতিমালায় অনুমোদন দেয়া আছে, কোচিংকে নয়। কোচিং তার অন্তর্নিহিত অধিকার নয়। সে শিক্ষা দেবে কিন্তু কোচ হতে পারবে না।’

শুনানির পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘কোচিং বাণিজ্য নিয়ে কয়েকটি রিটের ওপর আজকে রায়ের দিন ধার্য ছিল। এ মামলায় দুজন অ্যামিকাস কিউরি ছিলেন, একজন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফ, উনি উনার বক্তব্য আগেই শেষ করেছেন। আজকে আরেকজন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ফিদা এম কামাল তার বক্তব্য দিয়েছেন। উনি খুব বিশদভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, কোচিং বাণিজ্য হলে কী কী হতে পারে। আদৌ এটা এলাউ করা ঠিক কি-না। উনি আদালতের কাছে সময় চেয়েছেন লিখিত আর্গুমেন্ট দেয়ার জন্য। আদালত উনার কথা শুনে ৭ ফেব্রুয়ারি রায়ের জন্য দিন ধার্য করেছেন।