সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সন্তানের প্রতি লোকমান হাকীমের ১১ উপদেশ (দ্বিতীয় পর্ব)

ডেস্ক রিপোর্ট

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০১:৫৬ পিএম, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার

আমাদের কোমলমতি শিশুরাই পৃথিবীর ভবিষ্যৎ। শিশুদের বাল্যকালের শিক্ষা-দীক্ষা যদি ভালো হয়, তবে আশা করা যায় তাদের ভবিষ্যৎ ও আগামী পৃথিবীর বিনির্মাণ ভালো হবে। দেশ, জাতি, সমাজ নির্বিশেষে পুরো পৃথিবী তাদের দ্বারা লাভবান ও উপকৃত হবে। এজন্য শিশুদের শিক্ষা, তালিম, তরবিয়ত ও তাদের চরিত্রবান করে গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্ব দেয়া অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

এ কারণেই আমরা কুরআনে কারীমে দেখতে পাই যে, মহান আল্লাহ তাআলা শিক্ষণীয় ও উপদেশমূলক অনেক ঘটনা বর্ণনা করেছেন, তন্মধ্যে সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার দায়িত্ব সম্পর্কেও বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে লোকমান হাকিমের ঘটনা সমুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ ঘটনায় লোকমান হাকিম তার ছেলেকে যে উপদেশ দেন, তা এতই সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য যে, মহান আল্লাহ তাআলা তা কুরআন কারীমে সবিস্তারে উল্লেখ করেছেন। কিয়ামত পর্যন্ত অনাগত উম্মত এটা তিলাওয়াত করবে এবং কিয়ামত পর্যন্ত এ উপদেশ হবে উম্মাহর সকল সদস্যের জন্য আদর্শ। আলহামদুলিল্লাহ, এ নিবন্ধে  কুরআনের সে আলোচনাই পাঠকদের জন্য তাফসিরে ইবনে কাসিরের ব্যখ্যাসহ দুই পর্বে আনা হয়েছে। প্রথম পর্ব প্রকাশের পর আজ পঞ্চম উপদেশ থেকে দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশ করা হচ্ছে— প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন...

পঞ্চম উপদেশ:

লোকমান হাকিম তার ছেলেকে নামায কায়েমের উপদেশ দেন। মহান আল্লাহ তাআলা তার বর্ণনা দিয়ে বলেন,

يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ

অর্থাৎ, “হে আমার প্রিয় বৎস সালাত কায়েম কর”,

তুমি সালাতকে তার ওয়াজিবসমূহ ও রোকনসমূহ সহ আদায় কর।

ষষ্ঠ উপদেশ:

وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ

অর্থাৎ “তুমি ভালো কাজের আদেশ দাও এবং মন্দ কাজ হতে মানুষকে নিষেধ কর।”

বিনম্র ভাষায় তাদের দাওয়াত দাও, যাদের তুমি দাওয়াত দেবে তাদের সাথে কোন প্রকার কঠোরতা করো না।

সপ্তম উপদেশ:

আল্লাহ বলেন- وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ

“যে তোমাকে কষ্ট দেয় তার উপর তুমি ধৈর্য ধারণ কর।”

আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, যারা ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং খারাপ ও মন্দ কাজ হতে মানুষকে নিষেধ করবে তাকে অবশ্যই কষ্টের সম্মুখীন হতে হবে এবং অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে। যখন পরীক্ষার সম্মুখীন হবে তখন তোমার করণীয় হল, ধৈর্যধারণ করা ও ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। রাসূল সা. বলেন,

«المؤمن الذي يخالط الناس ويصبر على أذاهم ، أفضل من المؤمن الذي لا يخالط الناس ولا يصبر على أذاهم».

“যে ঈমানদার মানুষের সাথে উঠা-বসা ও লেনদেন করে এবং তারা যে সব কষ্ট দেয়. তার উপর ধৈর্য ধারণ করে, সে— যে মুমিন মানুষের সাথে উঠা-বসা বা লেনদেন করে না এবং কোন কষ্ট বা পরীক্ষার সম্মুখীন হয় না—তার থেকে উত্তম।”

إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ

অর্থ, “নিশ্চয় এগুলো অন্যতম সংকল্পের কাজ।” –সূরা লোকমান: ১৭

অর্থাৎ, মানুষ তোমাকে যে কষ্ট দেয়, তার উপর ধৈর্য ধারণ করা অন্যতম দৃঢ় প্রত্যয়ের কাজ।

অষ্টম উপদেশ:

وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ

অর্থ, “আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না।”

আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. বলেন, ‘যখন তুমি কথা বল অথবা তোমার সাথে মানুষ কথা বলে, তখন তুমি মানুষকে ঘৃণা করে অথবা তাদের উপর অহংকার করে, তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখবে না। তাদের সাথে হাস্যোজ্জ্বল হয়ে কথা বলবে। তাদের জন্য উদার হবে এবং তাদের প্রতি বিনয়ী হবে।’

নবম উপদেশ:

আল্লাহ তাআলা বলেন: وَلا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحاً

“অহংকার ও হঠকারিতা প্রদর্শন করে জমিনে হাঁটা চলা করবে না।”

কারণ, এ ধরনের কাজের কারণে আল্লাহ তোমাকে অপছন্দ করবে। এ কারণেই মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ

“নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক, অহংকারীকে পছন্দ করেন না।” –সূরা লোকমান: ১৮

অর্থাৎ যারা নিজেকে বড় মনে করে এবং অন্যদের উপর বড়াই করে, মহান আল্লাহ তাআলা তাদের পছন্দ করে না।

দশম উপদেশ:

নমনীয় হয়ে হাঁটা চলা করা। মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনে করীমে বলেন:

وَاقْصِدْ فِي مَشْيِكَ

“আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর।”

তুমি তোমার চলাচলে স্বাভাবিক চলাচল কর। খুব দ্রুত হাঁটবে না আবার একেবারে মন্থর গতিতেও না। মধ্যম পন্থায় চলাচল করবে। তোমার চলাচলে যেন কোন প্রকার সীমালঙ্ঘন না হয়।

একাদশ উপদেশ:

নরম সূরে কথা বলা। লোকমান হাকীম তার ছেলেকে নরম সূরে কথা বলতে আদেশ দেন। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَاغْضُضْ مِن صَوْتِكَ

“তোমার আওয়াজ নিচু কর।”

আর কথায় কোন তুমি কোন প্রকার বাড়াবাড়ি করবে না। বিনা প্রয়োজনে তুমি তোমার আওয়াজকে উঁচু করো না। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّ أَنكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيرِ

“নিশ্চয় সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল, গাধার আওয়াজ।”

আল্লামা মুজাহিদ বলেন, ‘সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল, গাধার আওয়াজ। অর্থাৎ, মানুষ যখন বিকট আওয়াজে কথা বলে, তখন তার আওয়াজ গাধার আওয়াজের সাদৃশ্য হয়। আর এ ধরনের বিকট আওয়াজ মহান আল্লাহ তাআলার নিকট একেবারেই অপছন্দনীয়।