ইসলামে শ্রমের মর্যাদা...
নিউজ ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৬:০৫ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন একজন শ্রমিকজীবি মানুষ। তিনি শ্রমবিমুখ সমাজকে অত্যন্ত ঘৃণা করতেন।
সাহাবী (রা.) গণ তার খিদমত করবেন আর তিনি তাঁদের খিদমত নেবেন- এ রকম শিক্ষা তিনি কখনো দেননি এবং তার জীবনে এর কোনো নজীর পাওয়া যায়নি।
একটা ঘটনা বলা যাক শ্রমের মর্যাদা সম্পর্কে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় সাহাবী (রা) গনদের নিয়ে এক সফরে বের হলেন। এক পর্যায়ে তাদের সবার বিশ্রামে করার সময় হলো। বিশ্রামের ঘাটি তৈরি করার জন্য এক এক জনকে এক একটা দায়িত্ব দেয়া হলো।
সকলে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত থাকছেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দেখা যাচ্ছিল না। হঠাৎ দেখা গেল তিনি জংগল থেকে কাঠ কেটে তা নিজে বহন করে নিয়ে আসছেন। সাহাবায়ে কিরাম (রা.) গণ তখন বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এটা আপনার জন্য কেমন হলো? আপনার জন্য শত শত নিবেদিত প্রাণ খাদেম থাকতে এরুপ জংগলে গিয়ে আপনার নিজের কাঠ কেটে আনার কি দরকার ছিল?
রাসূলুল্লাহ (সা.) সরল ভাষায় জবাব দিলেন- افلا اكون عبدا شكرا“আমি কি কৃতজ্ঞশীল বান্দা হব না ?” আমিও আল্লাহর বান্দা, তোমরাও আল্লাহর বান্দা। এই বান্দা হিসাবে আমরা সবাই সমান। আল্লাহ তায়ালা মেহেরবাণী করে আমার নিকট ওহী প্রেরণ করেছেন। এই নিয়ামত প্রাপ্তির পরে আমারতো আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আরো বেশি আদায় করতে হবে। সুতরাং আমি আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যই তোমাদের সঙ্গে কাজে শরীক হচ্ছি।
অপর একটি ঘটনা থেকে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এক সাহাবী আসলেন এবং তিনি বললেন, হুজুর! আমি ক্ষুদা ও পিপাসায় কাতর, আমাকে কিছু দান করুন। হুজুর (সা.)
জিজ্ঞেস করলেন, তোমার ঘরে কি কিছুই নেই? সাহাবী জবাব দিলেন, আমার ঘরে শুধুমাত্র একটা দামী বাটি আছে। হুজুর (সা.) বললেন, ঠিক আছে সেটা বিক্রি কর। তিনি সেটা বিক্রি করলেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বিক্রয়লব্ধ টাকার কিয়দংশ দ্বারা আটার রুটি কিনে তার বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন। বাকি অংশ তার হাতে দিয়ে বললেন যাও, এর দ্বারা একটা কুঠার কিনে নিয়ে এসো। হাদীস শরীফে এভাবেও বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাত মুবারকে দিয়ে কুঠারের হাতল লাগিয়ে বললেন, যাও এ নিয়ে জংগলে গিয়ে কাঠ কেটে
তা বিক্রি কর।
কিছুদিন পর সেই সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সা.) এর খিদমতে আসলেন তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কি রকম তোমার অবস্থা? তিনি বললেন, হুজুর! আল্লাহর রহমতে আমি বেশ ভালো আছি। আমি আমার শ্রমের বিনিময়ে যা কিছু পেয়েছি তাতে নিত্যদিনের প্রয়োজন মিটিয়ে এখনো আমার হাতে কিছু জমা আছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত পাতাকে এত ঘৃণা করতেন যে, সাহাবায়ে কিরাম (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন ঈমানের জন্য বয়ান দিতেন, তেমনি ভাবে এ বয়ান দিতেন যে, কোনো মানুষের কাছে হাতপাতা যাবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই তালীমের প্রভাব সাহাবীদের ওপর এ রকম পড়েছিল যে, কোনো এক সাহাবী উঠের পিঠে চড়ে যাচ্ছিলেন এমন অবস্থায় তার হাতের চাবুকটা নিচে পড়ে গেল। তার পাশে থাকা সাহাবীকে তিনি বললেন না যে আমার চাবুকটি উঠিয়ে দিন। বরং সে সাহাবী উঠ থেকে নেমে নিজ হাতে চাবুকটি উঠালেন। তাখন অপর সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন, এত কষ্ট কেন করলে? আমাকে বললেই তো হতো। সাহাবী জবাব দিলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ওয়াদা করেছি যে আমরা কোনো ব্যাপারে কারোর কাছে হাত পাতব না। রাসূল (সা.) শ্রম দিয়ে জীবিকা অর্জনের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে বলেন,
ﻣَﺎ ﺃَﻛَﻞَ ﺃَﺣَﺪٌ ﻃَﻌَﺎﻣًﺎ ﻗَﻂُّ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻣِﻦْ ﺃَﻥْ ﻳَﺄْﻛُﻞَ ﻣِﻦْ ﻋَﻤَﻞِ ﻳَﺪَﻳْﻪِ، ﻭَﺇِﻥَّ ﻧَﺒِﻰَّ ﺍﻟﻠﻪِ ﺩَﺍﻭﺩَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺄْﻛُﻞُ ﻣِﻦْ ﻋَﻤَﻞِ ﻳَﺪَﻳْﻪ
‘কারোর জন্য নিজ হাতের উপার্জন অপেক্ষা উত্তম আহার্য বা খাদ্য আর নেই। আল্লাহর নবী দাঊদ (আ.) নিজ হাতের কামাই খেতেন’। (বুখারী, মিশকাত হা/২৭৫৯ )
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি অর্থোপার্জন করে, পরিশ্রম করে সে ব্যাক্তি আল্লাহর বন্ধু। বুখারী শরীফে আছে “হজরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজের হাতে বকরীর দুধ দোহন করতেন। নিজের হাতে নিজের জুতা সেলাই করতেন। নিজের হাতে কাপড়-চোপড় ছিড়লে তা সেলাই করতেন। তিনি হাট-বাজার করতেন।
হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) আরো বলেন, রাসূলে করীম (সা.) এমনকি আমার গৃহস্থলীর কাজেও সাহায্য করতেন । যে জাতি বিমুখ হবে সে জাতির মধ্যে দরিদ্রতা ক্ষুধা ও অর্থাভাব দেখা দিবে। আর যার মধ্যে দরিদ্রতা দেখা দিবে, অভাব দেখা দিবে, তার অনেক সময় ঈমান রক্ষা করা মুশকিল হয়ে পড়ে।
আমরা দেখতে পাই আমাদের সমাজের মধ্যে এক শ্রেণীর লোক আছে তাদের গায়ের জামা, পোশাক এত মূল্যবান যে, সেগুলো বিক্রি করে যে টাকা হয়, তাতে তার ওপর জাকাত বা ফিতরা ওয়াজিব হয়ে যায়। অথচ তিনি অকাতরে গরীবের হক কুড়িয়ে নিচ্ছেন। অর্থাৎ তিনি জাকাত ফিতরা দিচ্ছেন না।
কিছু স্বাস্থ্যবান পুরুষ বিনা কারণে অকারণে লোকের কাছে হাত পাততে লজ্জাবোধ করে না। আমাদের অনেকের ইসলাম সম্পর্কে ধারণা যে, ইসলাম শুধু আখিরাতের কথাই জানব শুনব দুনিয়ার হাজারো ভুলের কথা জানব না, এ ধারণা একেবারেই ভ্রান্ত ধারণা।
ইসলাম হচ্ছে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের ধর্ম। অর্থাৎ, মানুষের পার্থিব কাজও চলবে আল্লাহর আনুগত্যের ভেতর দিয়ে, আর আখিরাতের কাজও চলবে তার আনুগত্যের ভেতর দিয়ে।