সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

যাদু টোনা হারাম

নিউজ ডেক্স

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০১:৪৯ পিএম, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ শুক্রবার

যাদু-টোনা যেটাকে আরবীতে সেহর বলা হয় তার আসল অর্থ হলো কোনো কিছুর প্রকৃতি পরিবর্তন করে দেয়া। 

যখন যাদুকর যাদু করে তখন সে কোনো ঘটনা, বিষয়বস্তু বা যে কোনো কিছুকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বিপরীতভাবে উপস্থাপন করে এবং মিথ্যাকে সত্য ও সত্যকে মিথ্যারুপে দৃষ্টিগোচর করে দিয়েছে বলে মনে হতে পারে। মূল বিষয়বস্তু, হাকিকত বা ঘটনাকে যাদুকর পরিবর্তন করে ফেলছে বলে হয়। যা সম্পূর্ণ হারাম, মিথ্যাচার এবং ধোঁকাবাজি। 

অনেক যাদুকর আছে যারা তন্ত্র টোনার কুফর শিরক ও পাপাচারের প্রতি নির্ভর করে দুজন মানুষের মধ্যে সম্পর্ক তৈরী করা বা তাদের মাঝে সম্পর্ক ছিন্ন করার চেষ্টা করে। যারা এই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত তারা শয়তান অনিষ্টকারী জ্বীনকে সন্তুষ্ট করে কার্যসিদ্ধি করার চেষ্টা চালায়। যারা এই কাজকে পেশা হিসেবে নিয়েছে এবং যারা এই ঘৃণিত কাজের ওপর নির্ভর করে চলে, আস্থা রাখে তারা সকলেই গুনাহগার।

 

ইসলামের পরিভাষায়, যাদু করা কবিরা গুনাহ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যাদু-টোনার মাধ্যমে মানুষকে কষ্ট দেয়া হয়। জাদুকরের গুনাহ শবে কদর ও শবে বরাতের মহিমান্বিত রাতেও ক্ষমা করা হয় না। যে ব্যক্তি যাদু করে বা করবে বা যে এতে রাজি হবে সে কাফের বলে গন্য হবে। 

পবিত্র কোরআন এবং হাদিসের আলোকে জানা যায়, পৃথিবীতে প্রথম যাদু বিদ্যার সঙ্গে মানুষ পরিচিত হয়  হারুত ও মারুত নামে দুজন ফেরেশতার মাধ্যমে। আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারা’তে বলেছেন,

‘ঐ দুজন (হারূত- মারুত ফেরেস্তা) কাউকে যাদু শিক্ষা দিতেন না যতক্ষণ পর্যন্ত এই ক্থা না বলতেন- নিশ্চয় আমরা (তোমাদের জন্য) পরীক্ষা স্বরূপ। সুতরাং (আমাদের নিকট যাদু শিখে) কাফের হয়ো না।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১০২)

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাতটি কবীরাহ গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য বলেছেন। সাত কবিরা গুনাহর একটি কবিরা গুনাহ হচ্ছে যাদু টোনা করা। এতোটা ঘৃণিত এই কাজ, তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম যাদু- টোনাকারীদের কঠোর শাস্তির কথাও উল্লেখ করেছেন। 

 

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যাদুকরের শাস্তি হলো তরবারি দিয়ে হত্যা করা’ (তিরমিযী)।

এটি এমন জঘন্য কাজ যারা জাদুটোনাতে জড়িত হয়ে যায় এতে আস্থা রাখে তারা কুফরিতে জড়িয়ে যায় এবং এ থেকে মুক্তি ও পেতে পারে না। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, তিন শ্রেণীর মানুষ বেহেশ্তে প্রবেশ করতে পারবে না। তারা হলো, শরাবখোর বা মদ্যপায়ী , রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়তা ছিন্নকারী এবং যাদুর প্রতি আস্থা স্থাপনকারী। (হাদিসে মুসনাদে আহমদ)

নবী রাসূলদের সময়কালেও যাদু-টোনার প্রচলন ছিল। হজরত মুসা আলাইহিস সালাম যখন আল্লাহর মুজেজা পেয়েছিলেন তার বিপরীতে ফেরাউন বড় বড় যাদুকরদের ডেকে এনে যাদু দেখানোর নির্দেশ দিতেন। তবে আল্লাহর নবী হজরত মুসা আলাইহিস সালামের মুজেজার কাছে ওইসব যাদুকরদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতো। 

হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের কালেও যাদুবিদ্যা বিস্তার লাভ করেছিলো। সে সময় ইহুদীরা পথভ্রষ্ট শয়তান জ্বীনদের ব্যবহার করে জাদু-টোনার আশ্রয় নিতো। তবে নবী সুলাইমান আলাইহিস সালাম ও  জ্বীনদের ব্যবহার করে  কাজ করতেন যা কুফুরি ছিল না। তিনি ভালো কাজে এদের ব্যবহার করতেন। নবী সুলাইমান আলাইহিস সালামের সময়ে মানুষ এবং জ্বীনদের বেশ মেলামেশা ছিল।

 

পবিত্র কুরআনের এসেছে, ‘তারা বরং সেগুলো অনুসরণ করত, যা শয়তানরা সুলাইমানের রাজত্বের নামে মিথ্যা অপপ্রচার করত। সুলাইমান কোনোদিন কুফরী করেনি, বরং ওই শয়তানগুলোই কুফরী করেছিল। ওরা মানুষকে জাদু শিখিয়েছিল। বাবিল শহরে পাঠানো দুই ফেরেশতা হারুত এবং মারুতকে যা দিয়ে পাঠানো হয়েছিল, তা শিখিয়েছিল।’ (সূরা: আল-বাক্বারাহ, আয়াত ১০২)

সে সময় যারা এই শয়তানী কুফুরি কাজ করতো তারা এটা বলে বেড়াতো যে হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম ও একিই কাজ করতো। কিন্তু তাদের এই প্রচার ছিল ভুল। তাই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে এই বিষয়টি স্পষ্ট করে দেন।

বনি ইসরাইলেরা যাদু-টোনা করতো এবং তা তাদের সর্বনাশ করে। সে প্রসঙ্গটি কোরআনে এসেছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তারা শিখেছিল কীভাবে নিজেদের সর্বনাশ করা যায়, কিন্তু কীভাবে নিজেদের কল্যাণ করা যায় সেটা নয়। যদিও তারা খুব ভালোভাবে জানতো যে, এই জ্ঞান যে শিখবে, তার আখিরাত শেষ। কী জঘন্য কারণেই না তারা নিজেদের আত্মাকে বেঁচে দিয়েছিল- যদি তারা বুঝতো।’ (সূরা: আল বাক্বারাহ, আয়াত: ১০২)

আমাদের যাদু টোনা হতে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম। যাদু-টোনা হতে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্যে আল্লাহর সাহায্য যথেষ্ট। আল্লাহ তায়ালার ওপর যিনি ভরসা করেন, তার জন্যে আল্লাহর সাহায্যই যথেষ্ট। আল্লাহ তায়ালার ওপর একান্ত বিশ্বাস, তাওহীদ স্থাপন করতে হবে। আল্লাহর ক্ষমতা অসীম।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করলে কেউ তোমাদের পরাস্ত করতে পারবে না। আর তিনি যদি তোমাদেরকে একা ছেড়ে দেন, তাহলে কে আছে, যে তোমাকে সাহায্য করবে? যাদের ঈমান আছে তাদের উচিত শুধুমাত্র আল্লাহরই ওপর ভরসা করা।’ (সূরা আল-ইমরান, আয়াত: ৩:১৬০)

যাদু-টোনার ওপর আস্থা রাখা, নিজেকে জড়িয়ে ফেলা এবং যাদু-টোনা চর্চা করার পরিণতি অত্যন্ত ভয়ংকর। ইহজগত এবং পরজগতে তাদের কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। যাদুকর এবং যে তার দ্বারস্থ হয় তার কোনো ইবাদত এবং দোয়া কবুল হবে না। সাময়িক সাফল্য এলেও একসময় তাদের চরম ব্যর্থতা বরণ করে নিতে হবে। জান্নাত তাদের জন্যে হারাম হয়ে যায়।

সূরা ফাতিহা, সূরা ফালাক্ব এবং সূরা নাস পাঠে অশুভ দৃষ্টি, খারাপ প্রভাব, যাদু-টোনা হতে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। 

 

মহান রাব্বুল আরামিন আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখুন। আল্লাহুম্মা আমিন।