নেকির কাজে কষ্ট স্বীকার করাও ইবাদত
নিউজ ডেক্স
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০১:৫২ পিএম, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ শুক্রবার
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা স্বীয় নবীকে বলেন,
فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا
‘নিশ্চয় কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি রয়েছে।’
إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا
‘নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।’
فَإِذَا فَرَغْتَ فَانصَبْ
‘অতএব, যখন অবসর পান পরিশ্রম করুন।’
وَإِلَى رَبِّكَ فَارْغَبْ
‘এবং আপনার পালনকর্তার প্রতি মনোনিবেশ করুন।’ (সূরা: আল ইনশিরাহ, আয়াত: ৫-৮)
কষ্টের সঙ্গে পুর্ণভাবে ওজু করা, এশা ও ফজরের জামাতে যোগদান করা, শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়া, কষ্টের সময় ও সচ্ছলতার সময় আল্লাহর পথে ব্যয় করাকে হাদীছে সর্বোত্তম আমল বলা হয়েছে।
এভাবে যারা আল্লাহর পথে কষ্ট করে, আল্লাহ তাদেরকে দ্রুত সরল পথ প্রদর্শন করেন। যেমন তিনি বলেন,
وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ
‘পক্ষান্তরে যারা আমার পথে প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে অবশ্যই আমার পথ সমূহের
দিকে পরিচালিত করব। আর আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মশীলদের সঙ্গে থাকেন’ (সূরা: আনকাবূত, আয়াত: ২৯/৬৯)।
নফল ইবাদত বেশি বেশি করা:
আল্লাহ স্বীয় নবীকে বলেন,
وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَّكَ عَسَى أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا
‘আর রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদের ছালাত আদায় করবে। এটি তোমার জন্য অতিরিক্ত। নিঃসন্দেহে তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রশংসিত স্থানে উঠাবেন’ (সূরা: ইসরা, আয়াত: ৭৯)।
শুধু তাই নয়,
إِنَّ رَبَّكَ يَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُومُ أَدْنَى مِن ثُلُثَيِ اللَّيْلِ وَنِصْفَهُ وَثُلُثَهُ وَطَائِفَةٌ مِّنَ الَّذِينَ مَعَكَ وَاللَّهُ يُقَدِّرُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ عَلِمَ أَن لَّن تُحْصُوهُ فَتَابَ عَلَيْكُمْ فَاقْرَؤُوا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ عَلِمَ أَن سَيَكُونُ مِنكُم مَّرْضَى وَآخَرُونَ يَضْرِبُونَ فِي الْأَرْضِ يَبْتَغُونَ مِن فَضْلِ اللَّهِ وَآخَرُونَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَاقْرَؤُوا مَا تَيَسَّرَ مِنْهُ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَقْرِضُوا اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنفُسِكُم مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِندَ اللَّهِ هُوَ خَيْرًا وَأَعْظَمَ أَجْرًا وَاسْتَغْفِرُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
‘আপনার পালনকর্তা জানেন, আপনি এবাদতের জন্যে দন্ডায়মান হন রাত্রির প্রায় দু’তৃতীয়াংশ, অর্ধাংশ ও তৃতীয়াংশ এবং আপনার সঙ্গীদের একটি দলও দন্ডায়মান হয়। আল্লাহ দিবা ও রাত্রি পরিমাপ করেন। তিনি জানেন, তোমরা এর পূর্ণ হিসাব রাখতে পার না। অতএব তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমা পরায়ন হয়েছেন। কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ, ততটুকু আবৃত্তি কর। তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হবে, কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশে-বিদেশে যাবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে জেহাদে লিপ্ত হবে। কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ ততটুকু আবৃত্তি কর। তোমরা নামাজ কায়েম কর, জাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। তোমরা নিজেদের জন্যে যা কিছু অগ্রে পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে উত্তম আকারে এবং পুরস্কার হিসেবে বর্ধিতরূপে পাবে। তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সূরা: মুযযাম্মিল, আয়াত: ২০)
হজরত আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো প্রিয় বান্দার সঙ্গে দুশমনী করল, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিলাম। আমি যেসব বিষয় ফরজ করেছি, তার মাধ্যমে আমার নৈকট্য অনুসন্ধানের চাইতে প্রিয়তর অন্য কিছু
আমার কাছে নেই। বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে সর্বদা আমার নৈকট্য হাসিলের চেষ্টায় থাকে, যতক্ষণ না আমি তাকে ভালোবাসি। অতঃপর যখন আমি তাকে ভালোবাসি, তখন আমিই তার কান হয়ে যাই...। সেকারণে কোনো সংকটে পড়লেই রাসূলুল্লাহ (সা.) নফল সালাতে লিপ্ত হতেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘বান্দা নফল ইবাদত সমূহের মাধ্যমে সর্বদা আমার নৈকট্য হাসিলের চেষ্টায় থাকে, যতক্ষণ না আমি তাকে ভালবাসি। অতঃপর যখন আমি তাকে ভালোবাসি, তখন আমিই তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে, চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে, পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে চলে। তখন সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, অবশ্যই আমি তাকে
তা দান করি। যদি সে আমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে, আমি তাকে অবশ্যই আশ্রয় প্রদান করি’...।
কোরআন অনুধাবন করা:
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاء وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ وَلاَ يَزِيدُ الظَّالِمِينَ إَلاَّ خَسَارًا
‘আমি কোরআনে এমন বিষয় নাজিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। গোনাহগারদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়।’ (সূরা: বনী ইসরাঈল, আয়াত: ৮২)
তিনি বলেন,
أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَى قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا
‘তারা কী কোরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা করে না? না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?’ (সূরা: মুহাম্মাদ, আয়াত: ২৪)।
কোরআনের আযাব বা রহমতের আয়াত আসলে রাসূলুল্লাহ (সা.) ভয়ে কাঁদতেন ও খুশীতে দোয়া পড়তেন’। যিনি যাকে ভালোবাসেন, তিনি তার কথা শুনতে ভালোবাসেন। যিনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসেন, তিনি অবশ্যই কোরআন ও হাদীছ শুনতে ও বুঝতে ভালোবাসবেন। যিনি এগুরো বুঝেন, স্বয়ং আল্লাহ ও রাসূল (সা.) যেন তার সঙ্গে কথা বলেন। এই অনুধাবন নিয়ে যিনি কোরআন-হাদীছ পাঠ করেন, তিনি যে স্বাদ পান, তা তুলনাহীন।
পাপের নিকটবর্তী না হওয়া:
আল্লাহ বলেন,
قُلْ تَعَالَوْاْ أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ أَلاَّ تُشْرِكُواْ بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَلاَ تَقْتُلُواْ أَوْلاَدَكُم مِّنْ إمْلاَقٍ نَّحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَإِيَّاهُمْ وَلاَ تَقْرَبُواْ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَلاَ تَقْتُلُواْ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللّهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
‘আপনি বলুনঃ এস, আমি তোমাদেরকে ওইসব বিষয় পাঠ করে শুনাই, যেগুলো তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন। তা এই যে, আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে অংশীদার করো না, পিতা-মাতার সঙ্গে সদয় ব্যবহার করো স্বীয় সন্তানদেরকে দারিদ্রের কারণে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে ও তাদেরকে আহার দেই, নির্লজ্জতার কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য, যাকে হত্যা করা আল্লাহ হারাম করেছেন, তাকে হত্যা করো না; কিন্তু ন্যায়ভাবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা বুঝ।’ (সূরা: আন‘আম, আয়াত: ১৫১)
অধিকাংশ ক্ষেত্রে আল্লাহ ‘তোমরা নিকটবর্তী হয়ো না’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। কেননা পাপের নিকটবর্তী না হলে কেউ পাপ করতে পারে না। আর যেসব কাজ পাপের নিকটবর্তী করে, তা থেকে দূরে থাকলে কেউ পাপ করার সুযোগই পাবে না। যেমন হাদীছে চোখের, কানের, হাতের, হৃদয়ের যেনার কথা এসেছে। এগুলো থেকে বিরত থাকলে আসল যেনা থেকে অবশ্যই দূরে থাকা সম্ভব।
পাপের প্রতি প্রলুব্ধ করার জন্য বহু ধরনের প্রযুক্তি এ যুগে বের হয়েছে। সেসব থেকে সাধ্যমত দূরে থাকার মাধ্যমেই পাপ থেকে দূরে থাকা সম্ভব হবে।
সূত্র:
বুখারী হা/৬৫০২, ‘হৃদয় গলানো’ অধ্যায়-৮১, ‘নম্রতা‘ অনুচ্ছেদ-৩৮;
মিশকাত হা/২২৬৬ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘আলাহর স্মরণ ও তাঁর নৈকট্য লাভ’ অনুচ্ছে-১।
আবুদাঊদ হা/১৩১৯; মিশকাত হা/১৩২৫; ছহীহুল জামে হা/৪৭০৩।
বুখারী হা/৬৫০২; মিশকাত হা/২২৬৬।
তিরমিযী হা/২৬২; মিশকাত হা/৮৮১।