বুধবার   ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২০ ১৪৩১   ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিয়া সুন্নী দ্বন্দ্বের আদ্যোপান্ত

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০১:২৩ পিএম, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার

শিয়া ও সুন্নি মুসলিমদের মাঝে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোতে মতের মিল থাকলেও বেশ কিছু দিকে মতভেদ রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ইসলাম ধর্ম কোনো ধরনের ভেদাভেদ সমর্থন করে না। শিয়া সুন্নি পার্থক্য যতটা না ধর্মীয় তার চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক এবং ক্ষমতার। শেষ অব্দি এই দুই মাজহাবের মধ্যে পার্থক্য তৈরি হওয়ার পেছনে যে কারণগুলো দায়ী তা সকলেরই জানা প্রয়োজন-

 

বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৬০ কোটি মুসলিম রয়েছে এবং এদের মধ্যে অধিকাংশ মুসলমান সুন্নি মতাদর্শের। আরবি সুন্নি শব্দটি এসেছে সুন্নাহ থেকে। এর অর্থ রীতি, প্রথা, আচরণ, বিধান ইত্যাদি। সাহাবীরা হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী, কর্ম এবং নির্দেশগুলো পূর্ণরূপে অনুসরণ করেছিলেন বলে তাদের অনুসারীরাই সুন্নি হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে, শিয়া শব্দের অর্থ দল। হযরত আলীর অনুসারীরা শিয়াত-ই-আলী বা আলীর দল নামে পরিচিত। শিয়া মাজহাব প্রথমে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। শিয়া মতবাদের মূল ভিত্তি হলো আলী এবং তার বংশধরেরাই হবে খিলাফতের মূল দাবিদার। তারা মনে করে নেতৃত্ব নির্বাচনের কোনো অধিকারই মানুষের নেই শুধুমাত্র আল্লাহই পারেন মানুষের নেতা নির্বাচন করতে। তাদের ধারণা ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই হজরত আলী (রাঃ)কে খিলাফতের জন্য মনোনীত করে গিয়েছিলেন।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিয়া মতাদর্শীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও ইরান এবং ইরাকে শিয়ারা বেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ তাছাড়া বাহারাইন, সিরিয়া এবং ইয়ামেনেও অনেক শিয়া অনুসারী বাস করে। হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হিজরতের পর মক্কার ইহুদিরা খুশি হলেও মদিনার ইহুদিরা বিষয়টি ভাল চোখে দেখেনি। মদিনার ইহুদিদের নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করতে থাকে। হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের পর ইসলামী বিশ্বে নেতৃত্বের প্রশ্নে মুসলমানরা দুই অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে তাদের মধ্যে এক অংশ নেতা হিসেবে চেয়েছিল হযরত আবু বক্করকে এবং অন্য আরেক দলের সমর্থন  ছিল হজরত আলীর (রাঃ) প্রতি। অধিকাংশ মুসলমানের সমর্থনের ভিত্তিতে হযরত আবু বক্কর ইসলামের প্রথম খলিফা নির্বাচিত হন। এরপর ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর ইহুদিদের ষড়যন্ত্রের কারণে ফিরাজ নামক এক আততায়ীর হাতে নিহত হন।

 

এরপর তৃতীয় খলিফা হিসেবে নিযুক্ত হন হযরত ওসমান (রাঃ)। কিন্তু এর মধ্যেই হজরত উমরের হত্যাকে কেন্দ্র করে মুসলিমরা বিভ্রান্ত ও দ্বিধায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। তৎকালীন ইহুদি নেতা সাবার ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা মুসলিমদের গোপন খবর পাওয়ার জন্য লোক দেখানো ইসলাম গ্রহণ করেন। পরিকল্পনা মতো আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা নিজেকে অতীব ধর্মপ্রাণ মুসলিম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে থাকে সে-ই প্রথম প্রচারণা শুরু করে যে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র পর হজরত আলী খেলাফতের জন্য বেশি যোগ্য। সেইসঙ্গে সে ইসলামের প্রথম তিন খলিফা হজরত আবু বকর হযরত, উমর এবং হজরত ওসমান এর বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে থাকে। অপপ্রচারের ফলে তৎকালীন ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমানকেও হত্যা করা হয়। এরপর হযরত আলীর অনুসারীরা দাবি করতে থাকে যেন তাদের নেতাকে খলিফা নির্বাচিত করা হয়।

প্রথমে হজরত আলী খলিফা হতে না চাইলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে তিনি খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ইসলাম ধর্মের সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় ইসলামে শিয়া সুন্নি বলে কোনো শাখা ছিল না মূলত ইসলাম ধর্মে অনুপ্রবেশকারী কিছু ব্যক্তি রাজনীতি এবং ক্ষমতা চর্চার জন্য ধর্মের নামে এ ভেদাভেদ তৈরি করে। মধ্যপ্রাচ্যে সুদীর্ঘ কাল থেকে চলমান একটি সংকট হলো ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব। ব্রিটিশরা মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদিদের উপনিবেশ গড়ে তুলতে সক্রিয় সাহায্য করার মাধ্যমে ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটায় যে দ্বন্দ্বে এখনো তিলে তিলে পুড়ে মরছে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি।