মেয়েদের বিয়ের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০২:০৬ পিএম, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ বুধবার
মেয়েদের বিয়ে নিয়ে একটি প্রতিবন্ধকতামূলক আইন আগে থেকেই ছিল। প্রাপ্তবয়স্ক ও প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও ১৮ বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া যেত না। আগের আইনে ছেলেদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বিয়ের বয়স ছিল ২১ বছর এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে সেটি ছিল ১৮ বছর। নারী অধিকারকর্মী ও এনজিও সংস্থাগুলো এর পক্ষে সরব ছিল। কিন্তু আলেমসমাজ ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে এটা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে এই আইন মেয়েদের বিয়ের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে এই আইনে সংস্কার আনা হয়েছে। এ উপলক্ষে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭’ প্রণয়ন করা হয়েছে। ১১ মার্চ ২০১৭ এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। এই আইনে ব্রিটিশ আমলে করা ‘চাইল্ড ম্যারিজ অ্যাক্ট ১৯২৯’ রহিতপূর্বক সময়োপযোগী করা হয়েছে। আইনের ১৯তম ধারায় বিশেষ বিধানে বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিধি দ্বারা নির্ধারিত কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে, আদালতের নির্দেশে এবং পিতা-মাতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতিক্রমে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে, বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।’ এই আইন পাস হওয়ায় আলেমসমাজের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। আলেমসমাজ মনে করেন, মেয়েদের স্বাস্থ্যহানির কথা চিন্তা করে বাল্যবিবাহে নিরুৎসাহী করা যায়। কিন্তু কিছুতেই ‘১৮-এর নিচে বিয়ে হবে না’—এমন আইন করা যায় না। কেননা এটি যেভাবে ইসলামী সংস্কৃতিবিরোধী, তেমনি হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতিবিরোধী। ১৯ শতকেও বাঙালি নারীদের ছোটবেলায় বিয়ে দেওয়া হতো। বাঙালির বিয়ের ইতিহাস বিষয়ে ‘বাংলাপিডিয়া’ লিখেছে : ‘১৯২১ সালের আদমশুমারিতে বিয়ের গড় বয়স মেয়েদের ১২ এবং ছেলেদের ১৩ বছর উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯২৯ সালে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন (Child Marriage Restraint Actপাস হয়। এ আইন অনুযায়ী ১৪ বছরের নিচের পাত্রী এবং ১৮ বছরের নিচের পাত্রের বিবাহ ছিল শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’
হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতিতে নারীদের বিয়ে কত বছর বয়সে হতো? ড. গোলাম মুরশিদ লিখেছেন, ‘দ্বারকানাথ ঠাকুর (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা) বিয়ে করেছিলেন ১৫ বছর বয়সে। চিন্তার দিক দিয়ে তিনি সে যুগের তুলনায় খুব আধুনিক থাকলেও তাঁর পুত্র দেবেন্দ্রনাথের বিয়ে দিয়েছিলেন ১৭ বছর বয়সে, পাত্রীর বয়স ছিল ১১।’ বাঙালি জাতির সবচেয়ে প্রাগ্রসর শিক্ষাবিদ হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়, তারা কত বছর বয়সী নারীদের বিয়ে করেছিলেন, ড. মুরশিদ লিখেছেন, বঙ্কিমচন্দ্র যাঁকে বিয়ে করেছিলেন, তাঁর বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর। দেবেন্দ্রনাথ ও বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর স্ত্রীর বয়স ছিল ছয় বছর। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রীর বয়স ছিল সাত বছর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের স্ত্রীর বয়স আট বছর, কেশব সেন এবং জ্যোতিরীন্দ্রনাথের ৯, শিবনাথ শাস্ত্রীর ১০ আর রাজনারায়ণ বসুর স্ত্রীর বয়স ছিল ১১ বছর। রবীন্দ্রনাথ ২৩ বছর বয়ছে মাত্র ১১ বছরের মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন।’ (দেখুন : হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, পৃষ্ঠা ২২০)
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১২ বা ১৩ বছর বয়সে তিন বছর বয়সী বঙ্গমাতাকে বিয়ে করেছেন। এটা ছিল পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা ৭)
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাঙালি সংস্কৃতি ও ইসলামী সংস্কৃতির সমন্বয় করে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭’ প্রণয়ন করেছেন।