মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কোরআনের ব্যাখ্যায় জলবায়ু পরিবর্তন

ধর্ম ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৯:১৭ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার

‘জলবায়ু পরিবর্তন’ বিশ্বে আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ২০ বছরে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনে মারা গেছে ৫ লাখ ২৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৩ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

এর কারণ ও প্রতিকার নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা, লেখালেখি, বক্তৃতা-বিবৃতি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ উপস্থাপনে বিজ্ঞানীদের বক্তব্য- ভারসাম্যহীন পরিবেশের কারণেই জলবায়ুর এই নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটছে।

কিন্তু পরিবেশ তো এমন ছিল না। মানুষ আগমনের বহু আগ থেকেই রাব্বুল আলামিন তাঁর অপার নেয়ামতে প্রকৃতি ও পরিবেশকে ভরপুর করে রেখেছেন। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলায় সুশোভিত প্রকৃতি ও পরিবেশকে করেছেন মানুষের বাসযোগ্য।

পবিত্র কোরআনেও সে কথাই বলা হয়েছে, ‘তিনি (আল্লাহ) পৃথিবীকে তোমাদের জন্য বিছানা ও আকাশকে ছাদ করেছেন এবং আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করে তা দিয়ে তোমাদের জীবিকার ফলমূল উৎপাদন করেন। সুতরাং জেনেশুনে কাউকেও আল্লাহর সমকক্ষ দাঁড় করো না।’ (সূরা বাকারা : ২২)

মানুষ যেন সুস্থ, স্বাচ্ছন্দ্য ও সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারে, সে জন্য যা কিছুর প্রয়োজন, তার সবকিছুই তিনি বিছিয়ে দিয়েছেন এ বিশ্বলয়ের পরতে পরতে।

এই যে স্বচ্ছ পানি, আল্লাহতায়ালার এক অপার নেয়ামত। যা দিয়ে পিপাসা মিটাই ক্ষেত-ফসলে সিঞ্চন করি পানি। জীবজন্তুকে পান করাই।

যার ছোঁয়ায় সবুজাভ তরুলতা, গাছপালা সতেজ ফুল-ফল, বাগান ইত্যাদি। এসব তো পানি থেকেই সৃষ্টি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?’ (সূরা আম্বিয়া : ৩০)

পরিবেশকে মানুষের উপযোগী করার জন্যই এই পানির সৃষ্টি। তাই তো কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন। এই পানি থেকে তোমরা পান কর এবং এ থেকেই উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়, যাতে তোমাদের পশুচারণ কর।

এ পানি থেকে তোমাদের জন্য চাষ করেন ফসল, জয়তুন, খেজুর, আঙুর ও সব ধরনের ফল। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সূরা নাহল : ১০-১১)।

আজকের বিজ্ঞানও এ কথা স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন যে, বিশুদ্ধতার ক্ষেত্রে বৃষ্টির পানি অতুলনীয়।

একইভাবে আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা মানুষের সুস্থতার জন্য বাতাস সৃষ্টি করেছেন। যা থেকে মানুষ জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে অক্সিজেন গ্রহণ করে। আবার বাতাসকে বিশুদ্ধ করার জন্য তিনি প্রকৃতিতে বনায়নের ব্যবস্থা করেছেন আপন কুদরতে।

এই যে আলো-ছায়া, সাগর-নদী, পাহাড়-পর্বত, ঝর্ণাধারা, নির্মল বাতাস, ফুল-ফসল আর পত্র-পল্লবের অনুপম সৃজন, যার সমন্বয়ে আল্লাহতায়ালা মানুষকে একটি নয়নাভিরাম পরিবেশ উপহার দিয়েছেন।

সেই উপহারকেই মানুষ আজ আপন হাতে নষ্ট করে দিচ্ছে। অর্থাৎ পরিবেশকে দূষিত করে তুলছে। মানুষ নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, নদী ভরাট, পাহাড় কেটে, পানি অপচয় আর প্রযুক্তির বিষবাষ্প বাতাসে ছড়িয়ে দিয়ে সাধিত করছে জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন। ফলে পৃথিবী হয়ে পড়ছে বিপর্যস্ত।

এই বিপর্যয় কি মানুষই ডেকে আনছে না? আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ছড়িয়ে পড়েছে দুর্যোগ ও গোলযোগ, জলে ও স্থলে, মানুষেরই কর্মফলে।’ (সূরা রুম : ৪১)।

জলবায়ু পরিবর্তনে ভুক্তভোগী দেশেগুলোর ষষ্ঠ স্থানে আছে বাংলাদেশ। তাই আমাদের ভাবা দরকার এই দুর্যোগ থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যায়। আর এই রক্ষা বা প্রতিকারের পথই বাতলে দিয়েছে ইসলাম।

অর্থাৎ পরিবেশ দূষণের সবচেয়ে বড় যে কারণটি তা হচ্ছে পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা। ইসলাম বলে, ‘আল্লাহতায়ালা পরিচ্ছন্ন এবং পরিচ্ছন্নতাকে পছন্দ করেন।’ (তিরমিজি : ২৭৯৯)।

প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় এবং পরিবেশের প্রতি অত্যাচারের সীমা ছাড়িয়েছি আমরা। এই সীমা রাসায়নিক ধাতু ব্যবহারের বাড়াবাড়ি, তেমনি দেদার গাছপালা কাটা হচ্ছে।

ফলে সবুজ-শ্যামল স্থানগুলো মরুভূমি হচ্ছে। তাই ইসলাম অযথা গাছ কাটতে বারণ করার পাশাপাশি বেশি গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়েছে।

কেন না একটি পরিপূর্ণ বৃক্ষ বছরে ১৪ কেজি অক্সিজেন বিলিয়ে ২০ কেজি কার্বনডাই অক্সাইড শোষণ করে। গাছ লাগানোর প্রতি গুরুত্ব দিয়ে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কেয়ামত এসে গেছে, এমন অবস্থায় তোমাদের কারও হাতে যদি ছোট একটি খেজুরগাছ থাকে, তাহলে সে যেন গাছটি রোপণ করে দেয়।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১২৯০২; আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৪৭৯; মুসনাদে বাজজার, হাদিস : ৭৪০৮)

জলবায়ু পরিবর্তনের আরেকটি প্রধান কারণ পানি দূষণ। বিশুদ্ধ পানি অপচয়ের ফলে যেমন বিশুদ্ধ পানির সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে, অপর দিকে রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে পানি দূষণে পরিবেশ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে।

হাদিসে এসেছে, নবীজি (সা.) একবার হজরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সা’দ তখন ওজু করছিলেন। নবীজি তাকে বললেন, এ কেমন অপচয়? সা’দ জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাসূল! ওজুতেও (অধিক পানি ব্যবহার করলে) অপচয় হয় কী? উত্তরে নবীজি বলেন, হ্যাঁ, তুমি যদি প্রবহমান নদীতেও ওজু করে থাক! (মুসনাদে আহমাদ : ৬৭৬৮)।

পানিতে নাপাকি ফেলা বা দূষিত করাকে নবীজি (সা.) অপছন্দ করতেন।

অপর হাদিসে বলেছে, ‘তোমরা তিন অভিশপ্ত ব্যক্তি থেকে বেঁচে থাক যে পানির ঘাটে, রাস্তার ওপর ও গাছের ছায়ায় মলমূত্র ত্যাগ করে।’

(সুনানে আবু দাউদ : ২৬)

এমনিভাবে পরিবেশ রক্ষায় নবীজি অনেক পদ্ধতি শিখিয়েছেন। এসব অনুসরণ করলে জলবায়ুর পরিবর্তনের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাবে মানুষ।