মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সৃষ্টিকে ভালোবাসলে স্রষ্টা খুশি হবেন

ধর্ম ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৯:৩৩ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার

ইরশাদ হচ্ছে, আমি তো আপাকে জগতের প্রতি রহমত রূপেই পাঠিয়েছি। আল কোরআন (২১:০৭)।

বাকহীন মাখলুকাতের প্রতিও ছিল তার অসীম ভালোবাসা। আমরা ছোট সময়ে, মায়ের চেহারার দিকে তাকিয়ে পড়েছি। গাছের পাতা ছিঁড়ব না, গাছকে কষ্ট দিব না। আমাদের মন তা আজও স্মরণ করিয়ে দেয় গাছের প্রতি থাকা রাসূল (সা.)-এর ভালোবাসা। হিংস্র প্রাণী সালাম দিত রহমতের নবীকে। বাঘ পাহারা দিত দয়াল নবীকে।

নবীর দুঃখে চোখের পানি ফেলত বনের সেই হরিণ। সাপ দেখতে চেয়েছিল নুর নবীর নুরের চেহারা মোবারক। আহ কি মায়া ছিল প্রাণীদের তার প্রতি। কী ছিল তার চেহারায়? যা দেখার জন্য ব্যাকুল ছিল প্রাণীরা। তার চেহারায় লুকিয়ে ছিল মায়া, ছিল মমতা। আমাদের নবীজি জীবজন্তু ও পশুপাখির দুঃখে ব্যথিত হতেন। তাদের কষ্টে বিচলিত হতেন। নবীজি মানুষের দুঃখ দূর করার জন্য যেমন পদক্ষেপ নিতেন, তেমনি জীবজন্তু পশুপাখির প্রতিও দয়া প্রদর্শন করতেন। উট ছিল মরুর বাহন। জাহাজও বলা হয়। রাসূল (সা.) একটি উটের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ক্ষুধায় উটটির পিঠ পেটের সঙ্গে লেগেছিল। এ দৃশ্য দেখে রহমতের নবীর মায়া হল। বললেন সাহাবিদের ডেকে, এসব বাকশক্তিহীন পশুদের ব্যাপারে আল্লাহতায়ালাকে ভয় কর। রাসূল (সা.) এক আনসার যুবকের বাগানে গেলে একটি উট তার মালিকের বিরুদ্ধে নালিশ জানাল।

মালিক সঠিকভাবে খাবার দেয় না। প্রচুর কাজ তাকে দিয়ে করিয়ে নেয়। সে ক্ষিদে পেটে দিন কাটায়। উটের চোখে পানি দেখে উটপ্রেমিক নবীর চোখে পানি এলো। উটের মাথা ও পিঠে রহমতের হাত বুলিয়ে দিলেন নবীজি। উটের কান্না তখনই বন্ধ হয়ে গেল। আনসার সাহাবিকে উটের প্রতি যন্তবান হতে বললেন। এ ছিলেন আমাদের দয়ার নবী। যিনি উটের ভাষা বুঝতেন। অভিভাবক মনে করে নবীজিকে দুঃখ জানাত উট। রহমতের আশা করত।

রহমতের নবী সাহাবিদের বলতেন, তোমরা ঘোড়ার কপালের পশম ঘাড়ের পশম ও লেজের পশম কেটেছেঁটে ফেল না। পাখিদেরও নবী ছিলেন আমাদের রাসূল (সা.)। পাখিরা রাসূল (সা.) কে ভালোবাসত। রাসূল (সা.) পাখিদের ভালোবাসতেন। এক সাহাবি মা পাখির বাসা থেকে ডিম ছিনিয়ে নিল। মা পাখিটা কান্না করছিল। কান্নার শব্দ প্রিয় নবী (সা.)-এর কানে এলো। রাসূল (সা.) বললেন, এই অসুন্দর কাজটি কে করেছে। সাহাবি ভয়ে দূরে দাঁড়িয়ে স্বীকার করলেন। নবীজি ডিমটি পাখির বাসায় রাখতে বললেন। ডিমটি দেখে মা পাখিটা কেঁদে দিল। এ দৃশ্য দেখে হাসি ফুটে উঠল নবী (সা.)-এর চেহারায়।

এভাবেই তিনি আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে ভালোবাসতে হবে পশুপাখিদের। কোনোরকম শখ বা ফুর্তির জন্য পশুকে অযথা হত্যা করতে নিষেধ করেছেন নবীজি। আজ আমরা পশুপাখি বিভিন্নভাবে হত্যা করছি। পাখিদের ডানা ভেঙে দেয়া হচ্ছে। পশুর শরীরে আগুন দিয়ে চিত্র এঁকে দেয়া হচ্ছে। কোনো একদিন রাসূল (সা.)-এর পাশ দিয়ে একটি গাধা যাচ্ছিল। তিনি দেখলেন গাধার মুখে জলন্ত লোহা দিয়ে দাগ দেয়া হয়েছে। রাসূল (সা.) এ অবস্থা দেখে বললেন, লানত যে তার মুখের এ অবস্থা করেছে। ব্যাঙ বধ করা, পিঁপড়াকে পুড়িয়ে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন তিনি।

যে কোনো প্রাণীকে ভালোবাসতে হবে। অযথা কষ্ট দিলে অবশ্যই এর শাস্তি ভোগ করতে হবে। রাসূল (সা.) এক স্ত্রী লোকের কাহিনী বললেন এভাবে, স্ত্রী লোকটি তার বিড়ালকে ভোখা রেখে শাস্তি দিত। পরবর্তী সময়ে আল্লাহ সেই স্ত্রী লোকটিকে ভীষণ আজাব দিলেন। আল্লাহর সৃষ্টির সব সৃষ্টিই আমাদের নবীকে মান্য করত। রাস্তার কুকুরটিকে পর্যন্ত রাসূল (সা.) দেখভাল করতে বলেছেন। আজ আমরা নবীর প্রেমিক দাবি করছি কখনও কি আল্লাহর সৃষ্টি প্রাণীদের জন্য কিছু রান্না করেছি।

রাস্তায় একটি বিড়াল বা বেওয়ারিশ কুকুর অসুস্থ হয় কিংবা ক্ষুধার যাত্রণায় ছোটাছুটি করে। আমরা দুই চোখ দিয়ে দেখে দেখে হেঁটে যাই। আর বলি কতদিন না খেয়ে রয়েছে কুকুরটি। আহ কতকষ্ট বেচারার। আমি এক হাতে চা অন্য হাতে রুটি খাচ্ছি। আমার হাতে থাকা একটু রুটি দিয়ে তার ক্ষুধা মিটাচ্ছি না। দোকানে বসে গল্প গুজবে ব্যস্ত আমি। বন্ধুদের নিয়ে দোকানে বসে অনেক খাবার খেলাম। দিয়েছি কি একটু প্রাণীদের? আল্লাহর সৃষ্টি এই প্রাণী তাকে ভালোবাসলে আল্লাহ খুশি হবেন। আমরা মানুষ হয়ে আজ মানুষকেই খাবার দিচ্ছি না। রাস্তায় ঘুমানো ব্যক্তিদের পাশ দিয়ে দামি জুতা পরে হেঁটে চলে যাচ্ছি। আনাহারিরা রাস্তায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে থাকে।

আমরা কখনও ভাবি না তাদের নিয়ে। আমরা পারি না তাদের পোশাক কিনে দিতে? হ্যাঁ পারি, সামর্থ্য রয়েছে। কিন্তু তাদের জন্য আমরা কিছুই করি না। আল্লাহ পারতেন আমাকে আনাহারি বানাতে। লোকে আমায় গরিব চোখে দেখত। আল্লাহ আমাদের সম্পদ দিয়েছেন। আমাদের উচিত আনাহারিদের ঘৃণা না করে মানুষ ভাবা। মানুষের প্রতি ভালোবাসা দেখান সবার উচিত। আল্লাহর সৃষ্টির সব মাখলুকাতের উপকার করা সবচেয়ে বড় ইবাদত। নবী যে ভালোবাসা মানুষ এবং জীবদের দিয়েছেন, সেই ভালোবাসা যেন আমরাও দিতে পারি। সৃষ্টিকে ভালোবাসলেই ভালোবাসা হবে স্রষ্টাকে। পশুপাখিদের ভালোবাসতে পারলে হতে পারব নবীপ্রেমিক।