মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সূরা কাহফে বর্ণিত চার ঘটনা, চার শিক্ষা

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৪:২৮ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার

সূরা আল-কাহফ পবিত্র কুরআনের ১৮তম সূরা। এই সূরায় আল্লাহ তাআলা চারটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। এই চারটি ঘটনার মধ্যেই আমাদের জন্য রয়েছে একটি করে মৌলিক শিক্ষা। এ নিবন্ধে সংক্ষেপে সেই চারটি ঘটনা সংশ্লিষ্ট শিক্ষাসহ বর্ণনা করা হল।

১. আসহাবে কাহফ বা গুহাবাসীদের ঘটনা- বিশ্বাসের পরীক্ষা

এটি একদল যুবকের ঘটনা যারা নিজেদের ঈমানকে রক্ষার জন্য নিজেদের ঘর ছেড়ে একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করে পর্বতের গুহাবাসী হয়েছিল। গুহায় আশ্রয় নেওয়ার পর তারা ঘুমিয়ে পড়লে আল্লাহ তাদেরকে ৩০০ বছর ঘুমের মধ্যে রাখেন।

৩০০ বছর পর ঘুম থেকে তারা জেগে তাদের মধ্যে একজনকে শহর থেকে খাবার আনার জন্য পাঠালেন। তারা চিন্তা করেছিলেন, তারা হয়তো একদিন বা তার থেকে কম সময় ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন।

খাবার আনতে যাওয়া ব্যক্তি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শহরের বাজারে যান, যাতে করে কেউ তাকে চিনে তার ক্ষতি করতে না পারে। কিন্তু তিনি নিজেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একদল মানুষের মাঝে আবিষ্কার করেন এবং দোকানদার তার কাছে পুরাতন মুদ্রা পেয়ে তাকে পাকড়াও করে, মুদ্রা গুলো তিনি কোথায় পেয়েছেন জানতে চেয়ে। 

মূলত এই ঘটনাতে দেখানো হয়েছে, আল্লাহ তার উপর ভরসাকারী বান্দাদেরকে কি করে চরম প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করেন।

বাইবেলে এই ঘটনাটি এফসুসের সাত ঘুমন্ত ব্যক্তি শিরোনামে বর্ণিত হয়েছে। কুরআনে এ সম্পর্কে বলা হয়,

“আপনি কি ধারণা করেন যে, গুহা ও গর্তের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলীর মধ্যে বিস্ময়কর ছিল? যখন যুবকরা পাহাড়ের গুহায় আশ্রয়গ্রহণ করে তখন দোআ করে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে নিজের কাছ থেকে রহমত দান করুন এবং আমাদের জন্যে আমাদের কাজ সঠিকভাবে পূর্ণ করুন। তখন আমি কয়েক বছরের জন্যে গুহায় তাদের কানের উপর নিদ্রার পর্দা ফেলে দেই।” (সূরা কাহফ, আয়াত: ৯-১১)

২. দুই বাগানের মালিকের ঘটনা- সম্পদের পরীক্ষা

“আপনি তাদের কাছে দুই ব্যক্তির উদাহরণ বর্ণনা করুন। আমি তাদের একজনকে দুটি আঙ্গুরের বাগান দিয়েছি এবং এ দুটিকে খেজুর গাছ দ্বারা পরিবেষ্টিত করেছি এবং দুইয়ের মাঝখানে করেছি শস্যক্ষেত্র। উভয় বাগানই ফলদান করে এবং তা থেকে কিছুই হ্রাস করত না এবং উভয়ের ফাঁকে ফাঁকে আমি নহর প্রবাহিত করেছি। সে ফল পেল। অতঃপর কথা প্রসঙ্গে সঙ্গীকে বলল, আমার ধন-সম্পদ তোমার চাইতে বেশী এবং জনবলে আমি অধিক শক্তিশালী।” (সূরা কাহফ, আয়াত: ৩২-৩৪)

ধনবান লোকটি তার সম্পদের জন্য আল্লাহর শোকর করতে ভুলে গিয়ে নিজেই অহংকারে নিমজ্জিত হয়েছিল। ফলে আল্লাহ তার বাগানকে ধ্বংস করে দেন।

এই ঘটনা তাদের জন্য শিক্ষণীয়, যারা দুনিয়ার সম্পদ পেয়ে আল্লাহকে ভুলে যায় এবং অহংকারে লিপ্ত হয়।

৩. মুসা ও খিজির (আ.) এর ঘটনা- জ্ঞানের পরীক্ষা

হাদীসে এসেছে, একবার হযরত মুসা (আ.) বনী ইসরাইলের সমাবেশে তাদের হেদয়াতের জন্য কথা বলছিলেন। এসময় তাকে প্রশ্ন করা হল, দুনিয়া সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি কে। তিনি জবাব দিয়েছিলেন, “আমি।” মুসা (আ.) এর উত্তরের জন্য আল্লাহ তাকে তিরস্কার করেন এবং বলেন, দুই সমুদ্রের সংযোগস্থলে তার চেয়ে অধিক  জ্ঞানী আল্লাহর এক বান্দা আছে। মুসা (আ.) তার সাথে সাক্ষাত করার ইচ্ছা প্রকাশ করলে আল্লাহ তখন তার বান্দা খিজির (আ.) এর সাথে সাক্ষাতের জন্য নির্দেশনা দান করেন।

কুরআনে বলা হয়েছে,

“অতঃপর তাঁরা আমার বান্দাদের মধ্যে এমন একজনের সাক্ষাত পেলেন, যাকে আমি আমার পক্ষ থেকে রহমত দান করেছিলাম ও আমার পক্ষ থেকে দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান। মূসা তাঁকে বললেন, আমি কি এ শর্তে আপনার অনুসরণ করতে পারি যে, সত্যপথের যে জ্ঞান আপনাকে শেখানো হয়েছে, তা থেকে আমাকে কিছু শিক্ষা দেবেন?” (সূরা কাহফ, আয়াত: ৬৫-৬৬)

এখানে মূলত আল্লাহ জ্ঞানের প্রকাশে বিনীত হতে এবং তা নিয়ে কখনো অহংকারের প্রকাশ থেকে দূরে থাকার শিক্ষা প্রদান করেছেন।

৪. যুলকারনাইনের ঘটনা- ক্ষমতার পরীক্ষা

কুরআনে বর্ণিত যুলকারনাইন একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন, যিনি পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিশাল এক সাম্রাজ্যের অধিপতি ছিলেন। কুরআনে তার তিনটি অভিযানের কথা বর্ণিত আছে।

কুরআনে বর্ণিত তার শেষ অভিযানে তিনি দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী একটি স্থানে এসে উপস্থিত হন। সেখানকার অধিবাসীরা তাকে জানায়, দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী গিরিপথ ধরে দুইটি অসভ্য জাতি ইয়াজুজ ও মাজুজের লোকেরা এসে তাদের লুটপাট করে। তারা ইয়াজুজ-মাজুজের আক্রমন থেকে বাঁচার জন্য যুলকারনাইনের সাহায্য চায়। যুলকারনাইন তাদেরকে সাহায্য করার জন্য সম্মত হন।

যুলকারনাইন কখনোই তার ক্ষমতার জন্য গর্বিত ছিলেন না। ইয়াজুজ-মাজুজের আক্রমনের বিরুদ্ধে দুই পাহাড়ের মাঝে তার প্রাচীর তৈরির পর তার বক্তব্য থেকে প্রকাশ পায় আল্লাহর প্রতি তার ভরসা ও আনুগত্য।

“যুলকারনাইন বললেন, এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ। যখন আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুত সময় আসবে, তখন তিনি একে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন এবং আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুতি সত্য।” (সূরা কাহফ, আয়াত: ৯৮)

রাসূল (সা.) সূরা কাহফ পাঠ করার জন্য অধিক গুরুত্ব প্রদান করেছেন।

তিনি ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি প্রতি শুক্রবার সূরা কাহফ পাঠ করবে, তবে পরবর্তী শুক্রবার পর্যন্ত আল্লাহ তাকে নূর প্রদান করবেন।” (সুনানে বাইহাকী)

রাসূল (সা.) আরও ইরশাদ করেন, “যে সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্ত করবে, সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পাবে।” (মুসলিম)

রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে প্রতি সপ্তাহে সূরা কাহফ তিলাওয়াত করার এবং এথেকে শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।