মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বান্দার পাপ-পুণ্যে কি আল্লাহর কিছু হয়?

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৪:২৯ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার

শাইখ আহমদ ইবনে আতাউল্লাহ আল ইস্কান্দারি তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আল হিকাম’-এ বলেছেন, আপনার আনুগত্যে যেমন তাঁর কোন উপকার হয় না, ঠিক তেমনি আপনার অবাধ্যতায় তাঁর কোন ক্ষতিও হয়না। তিনি আপনাকে কাজের আদেশ কিংবা নিষেধ করেছেন শুধুমাত্র এ কারণে যে, আপনি যেন সেটা থেকে লাভবান হবেন।

আল্লাহ কখনো কারো মুখাপেক্ষী নন, তিনি সবার উপরে। তাই কারো আনুগত্যে আল্লাহর কোন লাভ হয় না। একইভাবে যদি সকল মানুষ পাপাচারে লিপ্ত হয় তাতেও আল্লাহর মর্যাদা কোন ঘাটতি হবে না। 

মানুষকে যে তিনি সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করেছেন, এতে মানুষের জন্যই রয়েছে অফুরন্ত প্রাপ্তি। তাই সকলের উচিত আল্লাহ প্রদত্ত এ নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা ও এ কথা সব সময় স্মরণ রাখা।

আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য অতীত ও বর্তমানে যে বিধান নাযিল করেছেন সে বিধানের অনুসারীদের জন্য রয়েছে সর্বোন্নত এক জীবন। এ বিষয়ে আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, 
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً ۖ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
“যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং যে ঈমানদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরস্কার দেব যা তারা করত। (সূরা নাহল: ৯৭)

এ জীবন বিধান অনুসরণের ফলে ব্যক্তি নিজে, তার অনুসারী ও সমাজের অন্যদের মাঝে এক বন্ধনের সূচনা করে।

যেহেতু মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ নিজেই আইন প্রণেতা সুতরাং তিনি অতীতেও কারো মুখাপেক্ষী ছিলেন না, বর্তমানেও নন এমনকি ভবিষ্যতে তিনি কখনো কোন সৃষ্টির উপর নির্ভরশীল হবেন না। আল্লাহ হয়ত কারো মুখাপেক্ষী হবেন ভাবনার চাইতে বরং সকল সৃষ্টিই তাঁর মুখাপেক্ষী এ বিষয়টিই অধিক যৌক্তিক ও বাস্তব সম্মত।

আল্লাহ বলেছেন,
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ . مَا أُرِيدُ مِنْهُم مِّن رِّزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَن يُطْعِمُونِ . إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ
আমি জ্বীন ও মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছি কেবল আমার ইবাদতের জন্যই। আমি তাদের কাছে জীবিকা চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে আহার করাবে। আল্লাহই তো সবার রিযিকদাতা, যিনি সকল শক্তির আধার, মহা পরাক্রমশালী। (সূরা যারিয়াত : ৫৬-৫৮)

 

মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ মানুষের চাহিদা, জীবিকা ও অন্যান্য প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখেই এ বিশ্ব চরাচর সৃজন করেছেন।

আমি যদি কলম দিয়ে আল্লাহর সৃষ্টি মহিমা লিখতে থাকি তবে খন্ডের পর খন্ড লিখে ফেললেও আমাদের জানা মহাবিশ্বে যা আছে আল্লাহর মহিমা লিখে শেষ করতে পারবো না। যেখানে পরিচিত মহাবিশ্বের বিষয়গুলোই জানতে পারছি না সেখানে অজানা মহাবিশ্ব সমন্ধে আমাদের কি অবস্থা।

এই পৃথিবীর বুকে যা লুকায়িত কিংবা যা পৃথিবীর মাটি ফুড়ে বেড়িয়ে আসছে সব কিছুই আল্লাহ মানুষের প্রয়োজন মেটাতে সৃষ্টি করেছেন।

একইভাবে শূন্যে মহাশূন্যে আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন যার দ্বারা মানুষ তার প্রয়োজন মোতাবেক সময় ও ঋতু ঠিক করে নিবে। যদি আল্লাহ এগুলো সৃষ্টি না করতেন তবে মরুতে কিংবা সাগরবক্ষে মানুষ পথ হারিয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হত।

সংক্ষেপে বলতে গেলে মানুষের ইচ্ছা, প্রয়োজন ও চাহিদা মেটাতে আল্লাহ এ মহাবিশ্বকে মানুষের সেবকরূপে সৃষ্টি করেছেন।

একইভাবে আল্লাহ মহাবিশ্বের সাথে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক গড়ার পদ্ধতি সম্বলিত ব্যবস্থাপত্রও আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন যেন তার মাধ্যমে মানুষে পৃথিবীর বুকে শান্তির নীড় গড়তে পারে।

আল্লাহর বিধান অনুসরণের মাধ্যমেই ব্যক্তি নিজের, অনুসারী ও মহাবিশ্বের সাথে এক সুদৃঢ় সম্পর্ক গড়তে পারবে। আল্লাহ বিধান নাযিলের মাধ্যমে আমাদের কোন উপদেশ দেননি বরং আমাদের জন্য হুকুম জারি করেছেন যার মাধ্যমে আমরা নিজেরাই লাভবান হতে পারি।

অতএব, আল্লাহর বিধি বিধান আমাদের জন্য মহান নেয়ামত ছাড়া আর কিছুই নয় এবং একই সাথে তাঁর বিধান মান্য করার মাধ্যমে আমরা ইহকালীন ও পরকালীন উভয় জাহানের সমৃদ্ধি ও মুক্তির পথ লাভ করতে পারি।