মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কেন আমরা এই পৃথিবীতে?

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৪:৩২ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার

যেখানে একজন জাগতিক সুখ-সমৃদ্ধি লাভের আশায় অনন্তর কষ্ট করেই যাচ্ছে সেখানে অপরজন পরকালীন অনন্ত জীবনের সুখ-সমৃদ্ধি-সাফল্যের সন্ধানে জীবন-সংগ্রামে নিয়োজিত। এ দুইয়ের মাঝে আসলে তেমন কোন তফাৎ নেই। যদি দু’জনকেই দেখি তবে দেখবো উভয়েই একটি সুন্দর জীবন লাভ করেছেন। কিন্তু কুরআনে বলা হয়েছে তাদের মাঝে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। ইরশাদ হয়েছে-

“ঈমানদার ব্যক্তি কি অবাধ্যের অনুরূপ? তারা সমান নয়।” (সূরা সেজদাহ :১৮)

এ কথা সত্য যে একজন অমুসলিম নিজেকে সুনির্দিষ্ট কিছু আকাঙ্ক্ষার জালে জড়িয়ে রাখে তাই সে কোনভাবেই একজন মুমিনের সমকক্ষ হতে পারে না। হয়ত একজন অমুসলিম দেখতে পারে এ দুনিয়ার জীবনে তার কোন কিছুই অপূর্ণ নেই তবুও তার এ সকল আয়োজন ক্ষণস্থায়ী এক সুখের নাম ছাড়া আর কিছুই নয়। 

আল্লাহ তাআলা বলেন,

“যে কেউ ইহকাল কামনা করে, আমি সেসব লোককে যা ইচ্ছা সত্ত্বর দিয়ে দেই। অতঃপর তাদের জন্যে জাহান্নাম নির্ধারণ করি। ওরা তাতে নিন্দিত-বিতাড়িত অবস্থায় প্রবেশ করবে। (সূরা বনী ইসরাইল :১৮) 

অন্যদিকে একজন প্রকৃত মুমিনের ক্ষেত্রে, যদি এ জগতের সুখগুলো হাতে এসে ধরা দেয় সে উপলব্ধি করতে পারে আসলে এগুলো প্রকৃত সুখ নয় বরং পরকালে আল্লাহর দেয়া পুরস্কার জান্নাত হচ্ছে প্রকৃত সুখের স্থান।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

“নিশ্চয় আল্লাহর কাছে যা আছে, তা উত্তম তোমাদের জন্যে, যদি তোমরা জ্ঞানী হও। তোমাদের কাছে যা আছে নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং আল্লাহর কাছে যা আছে, কখনও তা শেষ হবে না। যারা সবর করে, আমি তাদেরকে প্রাপ্য প্রতিদান দেব তাদের উত্তম কর্মের প্রতিদান স্বরূপ যা তারা করত।” (সূরা নাহল :৯৫-৯৬)

জীবন সমন্ধে এই যে উপলব্ধি, এ উপলব্ধিই মূলত একজন মুমিনের সবচে বড় গোপন শক্তি হিসেবে কাজ করে। এই শক্তিই তাকে প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর করে দুনিয়ার যমিনে চলার শক্তি যোগায়। সুরা বনী ইসরাইলে আল্লাহ বলেছেন,  

“আর যারা পরকাল কামনা করে এবং মুমিন অবস্থায় তার জন্য যথাযথ চেষ্টা-সাধনা করে, এমন লোকদের চেষ্টা বৃথা যায় না।” (সূরা বনী ইসরাইল:১৯)

তাই আখিরাত প্রস্তুতির কাজ এখনি শুরু করুন। যেখানে আপনি সমপরিমাণ কাজের বিনিময়ে অফুরন্ত নেয়ামত লাভ করতে পারেন সেখানে কেন আপনি অযথা সময় ও শ্রম এমন কিছুর পিছনে ব্যয় করছেন যা খুবই ক্ষণস্থায়ী?

আপনার কাছে যা আছে তা দিয়েই পরকালীন জীবনের পাথেয় সংগ্রহ শুরু করুন, তবে মনে রাখবেন পাথেয়ই আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়, আল্লাহ আমাদের যে নিয়ামত দান করেছেন, দেহ, মন, শিক্ষা ও সম্পদ সব কিছু দিয়ে পরকালীন পাথেয় উপার্জনের একটিই উদ্দেশ্য আর তা হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও জান্নাত লাভ। 

মনে রাখবেন আপনার ব্যক্তিগত যত অর্জন ও জীবনের সাধনা সবকিছুর ফলাফল আখেরাতেই পাওয়া যাবে, তবে সেই আখেরাতের সঞ্চয় এ দুনিয়াতেই করতে হবে। এমনকি আমরা যদি রাসূল স. ও তাঁর সাহাবাদের জীবনের বৃহৎ অর্জনের দিকে তাকাই তাহলেও দেখব সব কিছুই এ দুনিয়াতেই অর্জিত হয়েছে।

রাসূল স. এবং তাঁর সাহাবাগণ দুনিয়াকে কেন্দ্র করেই পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন ফলে তাদের নাম চিরঅম্লান হয়ে  রয়েছেন একই জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাড়িয়েও তারা আখেরাতের পুরস্কারকেই বেছে নিয়েছেন। জীবনের চাওয়া পাওয়ার মাঝে কিভাবে সমতা বিধান করতে হয় তারা বাস্তব সাক্ষ্য রেখে গিয়েছেন।

পরকালিন জীবনের বাস্তবতা

সাহাবারা যখন রাসূল (সা.) এর পাশে বসে আখেরাতের আলোচনা শুনতেন, আখেরাত তাদের কাছে বাস্তব হয়ে ধরা দিত। তিনি এমনভাবে বর্ণনা করতেন কখনো মনে হতো তিনি কোন প্রাপ্তি ধরতে যাচ্ছেন আবার অনেক সময় মনে হতো তিনি কোন কিছু থেকে নিজেকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। 

এ অবস্থা দেখে যখন কেউ প্রশ্ন করতো, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন, যখন আমি কথা বলি, যেন আমি জান্নাত ও এর ফলমূল চোখের সামনে দেখতে পাই। যা আমি দেখতে পাই তা থেকে কিছু পেতে আমি চেষ্টা করি। তিনি আরও বলেছেন, যদি আমি তা ধরতে পারতাম তবে তা এ পৃথিবীর সর্বকালের মানুষের জন্য যথেষ্ট হতো।  

একইভাবে যখন তিনি জাহান্নাম নিয়ে আলোচনা করতেন, জাহান্নামকে চোখের সামনে দেখে তা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতেন।

এরকম আরও অনেক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাহাবাগণ জীবনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, চেতনা, মূল্যবোধ, চরিত্র, কাজকর্মসহ সকল ক্ষেত্রেই এক আমূল পরিবর্তন সাধন করেছিলেন এবং একটি উদ্দেশ্য সামনে রেখেই পথ চলেছেন, আর তা হল মহান স্রষ্টার সাথে সাক্ষাৎ লাভ। 

এভাবেই আমরা আল্লাহর কুরআন ও রাসূল (সা.) এর সুন্নাহ মোতাবেক জীবন যাপন করে নিজেদের জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য স্থির করে তা অর্জনে চেষ্টা করতে পারি।