‘তাদের সাথে যখন মূর্খরা কথা বলে, তারা বলে ‘সালাম’
নিউজ ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৪:৩৪ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার
সূরা ফুরকান পবিত্র কুরআনের ২৫ তম সূরা। এ সূরার ৭৭ টি আয়াতের শেষ ১৫ আয়াতে দয়াময় আল্লাহ তাঁর নেক বান্দাদের বৈশিষ্ট্য ও পুরস্কারের কথা আলোচনা করেছেন। তন্মধ্যে ৬৩ নং আয়াতটি বিশেষ বিবেচনায় বর্তমান সময়ের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক।
নেককার বান্দাদের বৈশিষ্ট্যাবলীর বর্ণনায় প্রথমেই আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴾ وَعِبَادُ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلَّذِينَ يَمۡشُونَ عَلَى ٱلۡأَرۡضِ هَوۡنٗا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ ٱلۡجَٰهِلُونَ قَالُواْ سَلَٰمٗا ﴿
‘আর রহমানের বান্দা তারাই, যারা জমীনের উপর বিনয়ী হয়ে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মূর্খরা কথা বলে তারা বলে ‘সালাম’। -সূরা ফুরকান: ৬৩
আল্লাহর বান্দা বিনয়ের সাথে বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ও আত্মমর্যাদার সাথে পথ চলবে। পথ চলতে গিয়ে মূর্খ ও নির্বোধদের সাতে কোন ধরনের আলোচনায় জড়িয়ে নিজের সময় নষ্ট করবে না। তাদের সাথে কোন ধরনের বিতর্কে জড়িয়ে পড়বে না। যদি এ ধরনের কেউ গায়ে পড়ে তার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয় এবং তাকে কোন ধরনের মন্দ কথা বলে, সে তাকে অনুরূপ মন্দ বলবে না, বরং বলবে ‘সালাম’।
এ সালামের অর্থ কী?
তাফসীরে ফতহুল কাদীরে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে-
لَيْسَ هَذَا السَّلَامُ مِنَ التَّسْلِيمِ إِنَّمَا هُوَ مِنَ التَّسَلُّمِ تَقُولُ الْعَرَبُ سَلَامًا: أَيْ: تَسَلُّمًا مِنْكَ، أَيْ: بَرَاءَةً مِنْكَ.
এই ‘সালাম’ অর্থ সালাম দেয়া নয় বরং এর অর্থ নিরাপদে এড়িয়ে যাওয়া। আরবরা বলে থাকে ‘সালাম’- মানে আমি তোমার থেকে দূরে সরে পড়লাম। (ফতহুল কাদীর, খ: ৪, পৃ: ৮৫)
ইমাম ইবনে কাসীর আয়াতের এ অংশের ব্যাখ্যায় বলেন-
إذا سفه عليهم الجهال بالقول السيء لم يقابلوهم عليه بمثله بل يعفون ويصفحون ولا يقولون إلا خيرا.
মূর্খ ও নির্বোধরা যদি আল্লাহর বান্দাদের সাথে মন্দ কথা বলে, আল্লাহর বান্দারা তাদের সাথে অনুরূপ মন্দ কথা বলে না। বরং ক্ষমা করে দেয় ও তাদের প্রতি উদারতা দেখায়। মন্দ কথার পরিবর্তে তারা বরং ভাল কথাই বলে।
এরপর ইমাম ইবনে কাসীর ইমাম আহমাদের সূত্রে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি হলো : রাসূল (সা.) এর সামনে এক লোক আরেক লোককে গালি দিল। যাকে গালি দেয়া হলো সে গালি দেয়া লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলল, তোমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। রাসূল (সা.) বললেন : ‘তোমাদের দু’জনের মাঝে একজন ফেরেশতা অবস্থান করছিলেন। যখনি এ লোকটি তোমাকে গালি দিচ্ছিল ফেরেশতা তোমার পক্ষ হয়ে তাকে বলছিলেন বরং এ গালি তোমারই প্রাপ্য। আর যখন তুমি তাকে বললে, তোমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক তখন তিনি (ফেরেশতা) বললেন, না বরং শান্তি তোমারই উপর বর্ষিত হোক। শান্তি তোমারই প্রাপ্য।’
(তাফসীরে ইবন কাসীর, খ: ৩, পৃ: ৩২৪-৩২৫)
আল্লাহর বান্দা মূর্খ ও নির্বোধ লোকদের সাথে নিজ থেকে তো কোন ধরণের বাক-বিতন্ডায় জড়াবে না, এমনকি তারা যদি গায়ে পড়ে তার সাথে ঝগড়া করে তার সাথে অশালীন কথা বলে অভদ্র আচরণ করে, তাহলে এ ক্ষেত্রে তার করণীয় হলো তাদেরকে এড়িয়ে চলা। আর এ এড়িয়ে চলা মোটেই দুর্বলতা প্রদর্শন নয়, বরং এর মাধ্যমে সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা পায় আর অনর্থক সময় নষ্ট হয় না। আল্লাহ তাঁর সর্বাধিক প্রিয় বান্দাহ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ হেদায়েতই দিয়েছিলেন :
وَاصْبِرْ عَلَى مَا يَقُولُونَ وَاهْجُرْهُمْ هَجْرًا جَمِيلًا
‘তারা (কাফেররা) যা বলে তাতে তুমি ধৈর্য ধারণ কর এবং সুন্দরভাবে তাদেরকে পরিহার করে চল।’ -সূরা মুযযাম্মিল:১০
রাসূল (সা.) কে আল্লাহ যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা তার অনুসারীদের জন্যও প্রযোজ্য। তাই যারাই আল্লাহর পথে চলে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার মর্যাদা অর্জন করতে চায়, তারা তাদের বিরোধীদের কঠোর সমালোচনা, অপবাদ, নিন্দা, অশালীন কথা, বিদ্রূপ, সাজানো ভিত্তিহীন কথায় ধৈর্য ধারণ করবে ও তাদের এ ধরনের আক্রমণকে এড়িয়ে চলবে। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।