পাঁচ উপায়ে দুঃখগুলোকে সুখে পরিণত করুন
নিউজ ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৪:৪২ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার
আপনি হয়ত কল্পনার জগতের বাইরেও বাস্তব জীবনে এমন অনেক মানুষ দেখেছেন যারা যে কোন ছোট কোন সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে বড় কোন সুবিধা লাভ করে থাকে, তারা অনেকটা পরশ পাথরের মত যাদের স্পর্শে একখন্ড পাথরও সোনায় পরিণত হয়।
একবার আমি এক ব্যবসায়ীর কথা শুনেছিলাম যিনি এমন এক এয়ারলাইন্স কোম্পানি কিনেছিলেন যা শুধু যে লসের মাঝেই ছিল তা নয় বরং এর সাথে বিরাট অংকের দেনার মাঝেও আটকে ছিল। তিনি এই প্রতিষ্ঠানটিকে এক মিলিয়ন ডলারে ক্রয় করে দ্রুতই তাকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত করেছিলেন।
এই গুণাবলি কি মানুষ জন্মলগ্ন থেকেই পায় না কি সময়ের সাথে সাথে কাজ ও দক্ষতার মাধ্যমে অর্জন করতে হয়? অন্য যে কোন গুণাবলীর মতই কিছু মানুষ আছে যারা স্রষ্টা প্রদত্ত প্রতিভা লাভ করলেও বিষয়টি এমন না যে আপনি তা লাভ করতে পারবেন না।
আসলে আমরা আমাদের জীবনকে মানসিক দ্বন্দ্বে আবদ্ধ রাখি বলেই সফলতা আমাদের ধরা দেয় না। এই সমস্যা দেউলিয়াত্ব কিংবা শারীরিক ক্ষতির চাইতেও মারাত্মক হয় ফলে তা আমাদের সংকুচিত করে ফেলে এবং আমাদের আচরণের তার প্রভাব দেখা দেয়। আসলেই কি হৃদয়ের এই ক্ষত মুছে তাকে সফলতায় রূপান্তর সম্ভব?
পূর্বসূরী জ্ঞানীগণ বলে গেছেন অবশ্যই সম্ভব তবে তার জন্য প্রয়োজন নিরলস প্রচেষ্টা ও ধৈর্য্য।
১. ধৈর্য্যের চারা রোপণ করুন
ধৈর্যের ফলাফল কত মিষ্ট হতে পারে তার পরিমাপ করা সম্ভব নয়।
“যারা সবরকারী, তারাই তাদের পুরস্কার পায় অগণিত।” (সূরা যুমার:১০)
আল্লাহ আমাদের সকলের সাথেই রয়েছেন তবে যারা ধৈর্যশীল তাদের সাথে আল্লাহর রয়েছে এক নিবিড় সখ্যতা।
“এবং ধৈর্যশীল হও ও অধ্যবস্যায় কর, নিশ্চয় আল্লাহর ধৈর্য্যশীলদের সাথেই আছেন।” (সূরা আনফাল :৪৬)
সত্য বলতে কি মানুষের সাথে রূঢ় আচরণ করা যতটা সহজ ধৈর্য্য ধারণ করা ততটাই কঠিন। তবে যদি আমরা প্রথম কয়েকটি কঠিন ধাপ পেরিয়ে যেতে পারি তবে অবশ্যই তা আমাদের জন্য সহজতর হয়ে যাবে।
আর যে সবর অবলম্বন করে আল্লাহ তাকে রহমতের চাদরে আবৃত করেন, এবং যে তার যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে আল্লাহ তাকে স্ব-নির্ভর করে দেন। ধৈর্য্যের চেয়ে মহামূল্যবান কোন পুরস্কার নেই। (বুখারী)
২. সহানুভূতির শিক্ষা
যখন কেউ আমাদের আঘাত করে এবং আমরা নিজেদের দিকে তাকাই, দেখতে পাই আমাদের অন্তরগুলো ব্যথাতুর হয়ে উঠে, আমরা রাগান্বিত হই। এই অবস্থাটা আমাদের জন্য সর্বাপেক্ষা কঠিন ও সহানুভূতি শিক্ষার অন্যতম উপায়।
এভাবেই আমরা নিজের মাধ্যমে অন্যকে বুঝতে পারি। আমাদের অন্তরগুলো যখন বেদনাহত, আমরা তখন অনুভব করি একই অবস্থানে অন্যের অবস্থা কি হতে পারে।
হতে পারে সময়ের চাকা আপনার দিকেও ঘুরতে পারে কিংবা এমনও হতে পারে আপনি নিজের অজান্তেই মানুষকে এমনভাবেই কষ্ট দিয়েছেন।
অন্যের কষ্টগুলো অনুভবের চেষ্টা করুন, তারাও যখন আপনার দ্বারা কখনো আঘাত পেয়েছিল ঠিক এমনি ছিল তাদের অনুভুতিগুলো। যদি এভাবে ভাবতে পারেন তবে নতুন এক শিক্ষা লাভ করতে পারবেন যা পরবর্তিতে আপনার ব্যথাতুর হৃদয়কে শান্ত করতে কাজে দিবে।
৩. আল্লাহতেই পূর্ণতা অন্বেষণ করুন
আল্লাহ ছাড়া আর কেউ পরিপূর্ণ নন। প্রতিটি মানুষেরই যেমন কিছু ভাল দিক রয়েছে ঠিক রয়েছে তেমন খারাপ দিক। অনেক সময় দেখবেন মানুষ আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে, যখন অসৎ ব্যক্তিবর্গ পরস্পর মিলিত হয় এ সমস্যা হতে বাধ্য।
যিনি সর্বদাই আপনার পাশে থাকেন, আপনাকে সর্বাপেক্ষা বুঝতে পারেন এবং আপনার মঙ্গল কামনা করেন তিনি একমাত্র আল্লাহ। আঘাত পেলেই বুঝতে পারা যায় মানুষ কতটুকু ত্রুটিপূর্ণ এবং আল্লাহ কত মহান এবং পরিপূর্ণ এক সত্তা, এতে আরও বুঝা যায় কাকে ভালবেসে তার উপর নির্ভরশীল হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
৪. ধৈর্য্যের সর্বোচ্চ স্তর পরিতৃপ্তির শিক্ষা নিন
যখন আপনি আল্লাহর উপর পরিপূর্ণরূপে নির্ভরশীল হবেন। অবশ্যই তখন তিনি আপনার প্রতি রহমত বর্ষণ করবেন এবং আপনার জন্য যা উত্তম তাই তিনি নির্ধারণ করবেন। এমন পরিস্থিতিতে আপনি শুধুমাত্র একজন ধৈর্য্যশীল হবেন না বরং শান্তিতেও থাকবেন। কোন গ্লানি আপনার সুখ কেড়ে নিতে পারবে না। আগে যে কারণে আপনি কষ্ট পেতেন সেই দুঃখগুলোই আজ আপনার আনন্দে রূপান্তরিত হয়েছে। এ হচ্ছে ঈমানের এক উচ্চতম স্তর, তবে তা অর্জন করা অসম্ভব নয়।
৫. আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলুন
যখন আপনি কষ্টে থাকেন এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন তখন সত্যিই দোয়াগুলো হৃদয়ের গভীর থেকে আসে। যদি আমরা নিয়মিত দোয়া করে যাই তবে অচিরেই আমরা সুন্দর অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারব। আমরা অনুভব করতে পারব আমাদের হৃদয়ের ব্যথার উপর ভিত্তি করেই আল্লাহর সাথে আমাদের এক গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠছে যা আমরা আর কখনো হারাতে চাইনা, এবং চাইনা আল্লাহর সাথে গড়ে উঠা সম্পর্কের ইতি ঘটুক। রাব্বে কারীম আপনার, আমার সহায় হোন।