বিপদগ্রস্ত বান্দা ও আল্লাহর সাহায্য
নিউজ ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৪:৪৪ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার
এক সুখী ব্যক্তির প্রতিদিনের কাজ ছিল সে সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর দরবারে বলতো, হে পরওয়ারদেগার! এই সময়ে আমার কোন চিন্তা বা পেরেশানি নেই। আমি অসুস্থও নই আর না ক্লান্ত। এটা সেই সময় যখন অধিকাংশ মানুষ আপনাকে ভুলে যায়। কিন্তু হে আমার মাওলা! আমি এই সময়েও আপনাকে স্মরণ করেই চলেছি। এবং কোন অসুস্থ বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ব্যক্তির চেয়ে আপনাকে বেশি ডাকছি, আপনার প্রশংসাসহ তাসবীহ পাঠ করছি, আপনার শুকরিয়া আদায় করছি।
কিছুদিন পর এই এই ব্যক্তি এক কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলো – যার সমাধান তার আয়ত্তের মধ্যে ছিল না। এখন সে সকাল-সন্ধ্যা এভাবে দুআ করতে শুরু করলো যে, “আমি সেই সুখী ব্যক্তি, যে তার সুখের সময়ে আপনাকে ভুলেনি, আপনার স্মরণ ও ইবাদতই ছিল তার জীবন। এখন আমি সমস্যায় নিপতিত হয়েছি। আমাকে সাহায্য করুন।” এরপর কিছুকালের মধ্যেই অলৌকিকভাবে তার সমস্যার সমাধান হয়ে গেল।
এই ঘটনা শোনার পর উর্দু ভাষার চিরায়ত কবি মুমিন খানের এক অনন্য কবিতার দুটি চরণ মনে পড়ে গেল। যাতে সে তার মাহবুব(প্রিয়)কে বলছিল –
جسے آپ گنتے تھے آشنا، جسے آپ کہتے تھے باوفا
میں وہی ہوں مومن مبتلا تمھیں یاد ہو کہ نہ یاد ہو
“যাকে আপনি অনুগত গণ্য করতেন, যাকে আপনি বলতেন বিশ্বস্ত,
আমিই সেই পরীক্ষায় নিপতিত মুমিন – আপনার মনে থাকুক আর নাই বা থাকুক।”
হাকিম মুমিন খান মুমিনের সেই কবিতায় উদ্দিষ্ট মাহবুব হয়তো তাকে ভুলে গিয়েছিলো। কিন্তু বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক যিনি, তিনি তো কিছুই ভুলেন না। বিশেষত যে সকল লোককে তিনি একবার ‘অনুগত’ বলে দিয়েছেন আর যাদেরকে একবার নিজের বিশ্বস্তদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন, তাদের সকল বিপদ-মুসিবতে তিনি তাদের সাথেই দাঁড়ান। জীবনের সকল সমস্যা তাদের উপর সহজ করে দেন। সর্বাবস্থায় তাদের সাহায্য করেন। কখনো তাঁর প্রজ্ঞার দাবী অনুযায়ী যদি কাঠিন্যতা দেনও, তবু তিনি তাদের অন্তরে প্রশান্তি নাযিল করে চিন্তার স্থিরতা থেকে বঞ্চিত হতে দেন না।
তিনি মুসিবতে তাকে আহ্বানকারী প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে এই মুআমালাই করেন। কিন্তু ওই সকল লোকের সাথে এই মুআমালাই বিশেষভাবে করা হয় যারা সুখ ও আনন্দের সময়গুলোতে তাদের দয়াময় রবকে ভুলে না। এমন মুমিন যখন কোন কঠিন সমস্যায় নিপতিত হয়ে যায়, তখন তাকে দয়াময় আল্লাহর কাছে এই কথা বলার প্রয়োজন হয় না যে-
میں وہی ہوں مومن مبتلا تمھیں یاد ہو کہ نہ یاد ہو
“আমিই সেই পরীক্ষায় নিপতিত মুমিন – আপনার মনে থাকুক আর নাই বা থাকুক”
বরং তাঁর মুআমালা এই হয় যে, তাঁর সমস্ত সমস্যাকে আল্লাহ তাআলা অস্তিত্বে আসার আগেই সমাধানের বন্দোবস্ত করে দেন। কখনো এই সম্ভবনা থাকে যে, তাঁর প্রজ্ঞার অধীনে সেই মুমিনের কল্যাণেই সমস্যাটা সমাধান হতে কিছু সময় নেয়। কিন্তু এমনিতেই কোন মুমিনকে নিরাশ্রয়ে অসহায় ছেড়ে দেওয়া হয় না। আর এটা কীভাবেই বা সম্ভব? যে দয়াময় অকৃতজ্ঞ নাফরমানদেরকেই সাহায্য থেকে বঞ্চিত করেন না, তিনি নিজের একান্ত অনুগতদের কী করে ভুলে যেতে পারেন!
আল্লাহর এই বৈশিষ্ট্যই তাকে বান্দার দৃষ্টিতে সৃষ্টিকুলের সবচে’ প্রিয়তম করে দেয়। নিশ্চয় কেবল আল্লাহই এই জিনিসের যোগ্য যে সবকিছুর উপরে তাঁকেই ভালোবাসা হবে।
দয়াময় আল্লাহ বলেন,
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبِادِيْ عَنِّيْ فَإِنِّيْ قَرِيْبٌ. أُجِيْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ. فَلْيَسْتَجِيْبُوْ لِيْ وَلْيُؤْمِنُوْا بِيْ لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُوْنَ
‘আর আমার বান্দারা যখন আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যপারে, আমি তো রয়েছি সন্নিকটেই। আমি বান্দার প্রার্থনা কবুল করি, যখন সে আমাকে আহ্বান করে। কাজেই তারা যেন আমার হুকুম মেনে চলে এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে। যাতে তারা সঠিক পথের দিশা লাভ করতে পারে।’ (সুরা বাকারা:১৮৬)