অন্যের দোষ চর্চাকারী একজন ক্ষতিকর মানুষ
নিউজ ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৪:৪৫ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার
যদি কোনো মুসলমান অন্যের পাপের কথা জেনে গিয়ে থাকে তবে তার উচিৎ তা গোপন রাখা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি দুনিয়ায় একজন মুসলমানের একটা কষ্ট দূর করবে, হাশরের দিন আল্লাহও তার একটা কষ্ট দূর করে দিবেন; যে একজন ঋণগ্রস্তকে ঋণমুক্ত করবে, আল্লাহ তার দুনিয়া আর আখেরাত দুটোই সহজ করে দিবেন; আর যে ব্যক্তি একজন মুসলিমের দোষ গোপন রাখবে, দুনিয়া আর আখেরাত দুই জায়গাতেই আল্লাহ তার দোষ গোপন রাখবেন।” (সহীহ মুসলিম)
আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত,
“রাসূল (সা.) একবার মিম্বরে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে বললেন, “হে লোকেরা, যারা কিনা ইসলামকে শুধুমাত্র মুখে গ্রহন করেছ কিন্তু অন্তরে ঈমান আনোনি এখনো, তোমরা মুসলমানদের অনিষ্ট করা থেকে বিরত থাক, বিরত থাকো তাদের ঠাট্টা করা থেকে, আর বিরত থাকো তাদের ভুলত্রুটি বলে বেড়ানো থেকে, কারন যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের দোষ অন্বেষণ করে বেড়ায় আল্লাহও তার দোষ অন্বেষণ করবেন এবং তা জনসমক্ষে প্রকাশ করে দিবেন, এমনকি যদি নিভৃতে কোন এক গৃহকোণেও পাপটি সংঘটিত হয়ে থাকে।” (সহীহ্ আল জামে’)
ইমাম নববী (র.) লিখেছেন, “এই হাদিস থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, শুধুমাত্র মুনাফিক আর দুর্বল ঈমানের লোকেরাই মানুষের দোষ খুঁজে বেড়ায় এবং তা প্রকাশ করে বেড়ায়...”
লজ্জা আর অপমানের ভয় অনেকসময় মানুষকে অনেক খারাপ কাজ করা থেকে বিরত রাখে। হতে পারে এই ভয়টাই একদিন তাকে আল্লাহ্র দিকে নিয়ে যাবে, যখন সে তার ভুল বুঝতে পারবে এবং তার কৃত অপরাধের জন্য আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা চাইবে। কিন্তু যখন তার অপরাধ জনসমক্ষে প্রকাশ করে দেওয়া হয় তখন সেই ভয়টা আর তার মাঝে কাজ করে না। সে তখন ভাবতে থাকে, ‘কি হবে আর ভাল থেকে, ক্ষতি যা হবার তা তো হয়েই গেছে, লোকজন তো জেনেই গেছে ইতোমধ্যে’, তখন সে প্রকাশ্যে পাপ কাজে লিপ্ত হতে থাকবে।
তাছাড়া বারবার পাপের কথা বলতে থাকলে মানুষের অন্তর থেকে পাপের ভয় দূর হয়ে যায়। তখন পাপকে আর পাপ বলেই মনে হয় না। যে অন্যের পাপের কথা বলে বেড়াতে লজ্জাবোধ করে না, একই পাপে লিপ্ত হওয়া তার জন্য অসম্ভব কিছু নয়। কেননা, পাপ যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি গীবত করাও পাপ আর তাও নিষিদ্ধ। অতএব, যে এই নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকছে না সে সুযোগ পেলে যে ওই গুনাহটিতে লিপ্ত হবে না – এটা মোটেও বলা যায় না। এভাবেই সমাজে পাপ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তাই এ ধরণের লোক মানুষের জীবন ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর। প্রথমে তারই সংশোধন জরুরী।
তাই এক মুসলমান অন্য কোন মুসলমানকে পাপ করতে দেখলে তার উচিত তা গোপন রাখা। সেই পাপ প্রকাশ করে দিয়ে লোকজনকে পাপের দিকে ঠেলে দেওয়া তার জন্য সমীচীন নয়। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে শুধুমাত্র গুনাহগারদেরকেই সতর্ক করেননি, যারা গুনাহের কথা বলে বেড়ায় তাদেরকেও সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেন,
“যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার লাভ করুক, নিঃসন্দেহে ইহকাল ও পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না”। (সূরা নূর; ২৪:১৯)
সূরা নিসায় আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
“আল্লাহ কোন মন্দ বিষয় প্রকাশ করা পছন্দ করেন না। তবে কারো প্রতি যুলুম হয়ে থাকলে সে কথা ভিন্ন। আল্লাহ শ্রবণকারী, বিজ্ঞ”। (সূরা নিসা : ১৪৮)
ইবনে আব্বাস (রা.) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন,
“আল্লাহ পছন্দ করেন না যে, আমরা একে অন্যের বিরুদ্ধে বদ্দোয়া বা মন্দ বিষয় প্রকাশ করি, যদি না আমাদের উপর অন্যায় করা হয়। তবে যদি কারো উপর যুলুম করা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে এই ব্যাপারে আল্লাহ্র অনুমতি রয়েছে। তারপরও এই ব্যপারে ধৈর্য ধারণ করাই উত্তম।” (তফসীরে ইবনে কাসীর)