বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১   ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পাঁচ অবস্থার আগে পাঁচ অবস্থার মূল্যায়ন করুন 

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৫:৫৯ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার

পাঁচ জিনিসের পূর্বে পাঁচ জিনিসের মূল্যায়ন সম্পর্কিত হাদিসটি পুরো উম্মতের প্রতি আল্লাহর রাসুল (সা.) এর নসিহত এবং বিশেষ অসিয়ত। যেন উম্মতের প্রতিটি সদস্য সৌভাগ্যবান, সফল  ও সর্বাঙ্গীণ সুন্দর জীবন লাভ করতে পারে। নবীজি (সা.) বলেন,

اغتنمْ خمسًا قبل خمسٍ شبابَك قبل هرمكَ وصحتَك قبل سَقمِكَ وغناكَ قبل فقرِك وفراغَك قبل شغلِك وحياتَكَ قبل موتِكَ

পাঁচ জিনিসের পূর্বে পাঁচ জিনিসকে মূল্যায়ন করো। ১. যৌবনকে মূল্যায়ন করো বার্ধক্যের আগে। ২. সুস্থতাকে মূল্যায়ন করো অসুস্থতা আসার আগে। ৩. সচ্ছলতাকে মূল্যায়ন করো দারিদ্র্যতা আসার আগে। ৪. অবসরকে মূল্যায়ন করো ব্যস্ততা আসার আগে। ৫. এবং জীবনকে মূল্যায়ন করো মৃত্যু আসার আগে।

হাদিসের ব্যাখ্যা

. যৌবনের মূল্যায়ন বার্ধক্যের আগে

মুমিনের উপর আবশ্যক যে, সে মহান আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর যৌবন ও শক্তির সদ্ব্যবহার করবে। সে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করবে, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে বাঁধা প্রদান করবে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নাহ অনুসারে জীবনকে পরিচালনা করবে। আর এসবকিছু করবে বার্ধক্য আসার আগে – যখন সে ইবাদত আদায়ে অক্ষম হয়ে পড়বে।

প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, যৌবনকাল ইবাদতে কাটানো যুবক সেই সাত ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে মহান আল্লাহ কেয়ামতের কঠিন অবস্থায় তাঁর আরশের ছায়াতলে স্থান দান করবেন আর সেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া অন্য কোন ছায়া থাকবে না। 

. সুস্থতার মূল্যায়ন অসুস্থতার আগে

সুস্থতাকে বান্দার প্রতি আল্লাহর বিশাল নেয়ামত হিসেবে অভিহিত করা হয়। একজন অসুস্থ ব্যক্তির অসুস্থতার কারনে তার নিজেকে চালানোই তার জন্য কঠিন হয়ে যায়। অন্য কোন কাজ করা তার জন্য অচিন্তনীয়।

রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার দিনটি পারিবারিক নিরাপত্তাবোধ ও সুস্থতার মধ্য দিয়ে শুরু করতে পারলো এবং নিজের দিনটিকে কাজে লাগাতে পারলো সে যেন সমগ্র দুনিয়া অধিকার করলো।” (তিরমিযি)

. সচ্ছলতার মূল্যায়ন দারিদ্র্যতার আগে

দুনিয়াতে সম্পদ যেরূপ আমাদের জন্য একটি পরীক্ষার উপকরণ, তেমনি এটিও আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি নিয়ামত যদি তার সঠিক ব্যবহার হয়। একজন স্বচ্ছল সম্পদশালী ব্যক্তি একজন অসচ্ছল সম্পদহীন ব্যক্তির তুলনায় সমাজের মানুষকে অধিক সহায়তা প্রদান করতে পারে। মানুষকে সহায়তার বিনিময়ে আল্লাহ ঐ সম্পদশালী ব্যক্তির জন্য কুরআনে উত্তম পুরষ্কারের কথা ঘোষণা করেছেন। কুরআনে আল্লাহ বলেন,

“এমন কে আছে যে, আল্লাহকে করজ দেবে, উত্তম করজ; অতঃপর আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ-বহুগুণ বৃদ্ধি করে দিবেন। আল্লাহই সংকোচিত করেন এবং তিনিই প্রশস্ততা দান করেন এবং তাঁরই নিকট তোমরা সবাই ফিরে যাবে।” (সূরা বাকারা, আয়াত: ২৪৫)

. অবসরের মূল্যায়ন ব্যস্ততার আগে

ইসলামে অলস সময় কাটানোকে সম্পূর্ণভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আমাদের অবসরকে সবসময় আমাদের নিজেদের জন্য এবং সমাজের অন্যান্য লোকের উপকারের জন্য কাজে লাগানো উচিত।

রাসূল (সা.) বলেছেন, “দুইটি নেয়ামত অধিকাংশ লোকেই (অবহেলায়) হারায়; স্বাস্থ্য এবং ভালো কাজের জন্য অবসর সময়।” (বুখারী)

. জীবনের মূল্যায়ন মৃত্যুর আগে

আমরা সকলেই মৃত্যুবরণ করবো। এটির কোন প্রকার ব্যতিক্রমই সম্ভব হবেনা। কিন্তু দুনিয়ার এই জীবনকে আমরা এমনভাবে কাজে লাগাতে পারি যাতে করে তা আমাদের জন্য আখেরাতের অনন্তজীবনে উপকারে আসে।

কুরআনে বলা হয়েছে, “যদি আপনি দেখতেন যখন অপরাধীরা তাদের পালনকর্তার সামনে নতশির হয়ে বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা দেখলাম ও শ্রবণ করলাম। এখন আমাদেরকে পাঠিয়ে দিন, আমরা সৎকর্ম করব। আমরা দৃঢ়বিশ্বাসী হয়ে গেছি।” (সূরা সাজদা, আয়াত: ১২)

সুতরাং, সময় চলে যাবার আগেই আমাদের কাজে লাগানো জরুরী। মহান আল্লাহ আমাদেরকে উপলব্ধি করে কাজে পরিণত করার তাওফিক দান করুন। আমীন।