হাদীসবিজ্ঞান চর্চার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
নিউজ ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৬:১৭ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার
রাসূল (সা.) এর ইন্তেকালের পর মৌখিক বর্ণনার ভিত্তিতে রাসূল (সা.) এর হাদীস শিক্ষার চর্চা অব্যাহত থাকে। এতে করে প্রতিনিয়ত অসংখ্য বর্ণনাকারীর নাম রাসূল (সা.) এর হাদীস বর্ণনার সাথে যুক্ত হয়। এই অসংখ্য বর্ণনাকারীদের পরম্পরায় শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য একটি স্বতন্ত্র জ্ঞানশাখার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এই প্রয়োজন থেকেই উলুমুল হাদিস বা হাদীসবিজ্ঞানের উৎপত্তি ঘটে।
প্রাথমিক যুগের মুহাদ্দিসগণ তাদের হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে অধিক সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করতেন। কিন্তু হাদীসের বর্ণনায় বিশুদ্ধতার শ্রেণীভেদে তাদের কিছু পরিভাষা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন ছিল। সংগঠিত লিখনির মাধ্যমেই তাদের হাদীসবিজ্ঞান চর্চার সূচনা হয়েছিল। কিন্তু তা ছিল বিক্ষিপ্ত। উদাহরণস্বরূপ, ইমাম শাফেয়ীর আর-রিসালা, সহীহ মুসলিমের ভূমিকা এবং জামে তিরমিযি ইত্যাদি।
এর পরবর্তীযুগের বিশেষজ্ঞগণ প্রাচীন মুহাদ্দিসগণকে বিশেষত ইমাম বুখারীকে বিশেষভাবে অনুসরণ করেন। মূলত হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে বর্ণনার ধারাবাহিকতা রক্ষায় তার সতর্কতার মাপকাঠি হাদীস বিজ্ঞানের গবেষকদের দ্বারা অনসৃত হতে থাকে।
হাদীসবিজ্ঞানের সম্পূর্ণ বিষয়বস্তুকে প্রতিফলিত করে সর্বপ্রথম আদর্শ পরিভাষায় গ্রন্থ রচনার কৃতিত্ব প্রথম আর-রামহুলমুযীর (ই. ৩৬০ হি)।
পরবর্তী প্রয়াস আমরা লক্ষ্য করি আল-হাকীমের (ই. ৪০৫ হি) “মারেফাতু উলুমিল হাদীস গ্রন্থে”, যেখানে হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে প্রায় পঞ্চাশ প্রকার স্তর-বিন্যাস করা হয়। পরবর্তীতে আবু নুআইম আল-আসবাহানী (ই. ৪৩০ ঈসায়ী) একে আরও বিস্তৃত করেন।
খতীব আল-বাগদাদীর (ই. ৪৬৩ হি) “আল-কিফায়াহ ফী ইলমির রিওয়াইয়াহ” প্রকাশিত হওয়ার মাধ্যমে হাদীসবিজ্ঞানের চর্চা একটি সুশৃঙ্খল কাঠামোর উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তী যুগের বিশেষজ্ঞরা হাদীসবিজ্ঞানকে সুশৃঙ্খল কাঠামো দান করার জন্য তার কাছে ঋণী।
কাজী ইয়াদ আল-ইয়াহসুবি (ই. ৫৪৪ হি) এবং আবু হাফস আল-মায়ানজি (ই. ৫৮০ হি.) পরবর্তী সময়কার উল্লেখযোগ্য বিশেষজ্ঞ, যারা হাদীস বর্ণনায় বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য হাদীস বিজ্ঞান চর্চায় মৌলিক অবদান রেখেছেন। তাদের স্বীকৃত বর্ণনাসূত্র বর্তমানের বিশেষজ্ঞদের দ্বারাও ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এছাড়াও আরও যেসকল গ্রন্থ এই শাস্ত্রের বিকাশে অবদান রেখেছে তা হল–
১. ইমাম আন-নববীর আল-ইরশাদ, ২. ইবনে কাসীরের ইখতিসার উলুম আল-হাদীস, ৩. আল-যারাকাশীর নুকাত, ৪. আল-ইরাকীর আলফিয়াত আল-হাদীস, ৫. জালালুদ্দীন সূয়তীর আলফিয়াতুল হাদীস, ৬. তাহীর আল-জাযারীর তাওযাহ আন-নাযার ইত্যাদি।
এছাড়া বর্তমানেও হাদীসের বিশুদ্ধতা রক্ষায় আধুনিক বিশেষজ্ঞগণ নিরলস গবেষণা করে যাচ্ছেন। রাব্বুল আলামিন তাঁর শান অনুযায়ী তাদের প্রত্যেককে এই কাজের উত্তম প্রতিদান দান করবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ কবুল করুন। আমীন।