মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কাউকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ ও উপহাস করার যে পরিণাম

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৬:২৪ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার

একটি কর্পোরেট অফিসে চাকুরী করেন আলতাব মিয়াঁ। একজন সরল-সহজ মানুষ। লোকটা একটু বেঁটে, একটু মোটাও। তাই অফিসে তার নাম হয়ে গেল আড়াই হাত। কলিগরা এই বলেই তাঁকে ডাকে। তিনি দিলে খুব ব্যথা পান। প্রথমে প্রতিবাদ করতেন। এখন তাও করেন না। বসকে বলেছিলেন। তিনি বললেন, বলুক না। ওসবে কান দিও না। ব্যাস, সবাই আড়াই হাত বলার সার্টিফিকেট পেয়ে গেল।

এটা একটা অফিসের চিত্র। এমন আরও বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন মানুষকে আবুল, মফিজ, রোহিঙ্গা – ইত্যাদি বলে ঘরে-বাইরে, বাসা-বাড়িতে ঠাট্টা-বিদ্রুপ, ব্যঙ্গ, অশ্লীল রঙ্গ-তামাশা করার শেষ যেন নেই। এক মুসলমান অপর মুসলমানকে নিয়ে উপহাস করছে। অথচ এ ধরনের  উপহাস, ঠাট্টা, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা ইসলামে সম্পূর্ণ নাজায়েয। কুরআনে বলা হয়েছে,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَومٌ مِّن قَوْمٍ عَسَى أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاء مِّن نِّسَاء عَسَى أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الاِسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ

“মুমিনগণ কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী অপর নারীকে যেন উপহাস না করে। কেননা সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এরূপ কাজ হতে তওবা না করে তারাই যালেম।” (সূরা হুজরাত : ১১) 

নাম বিকৃত করে বলা, আকার-আকৃতি নিয়ে ব্যঙ্গ করা সামাজিক অশান্তি সৃষ্টি করে। অনেক সময় এসব নিয়ে বড় ধরনের বিবাদ হয়। খুনোখুনিও হয়। আকার-আকৃতিতে মানুষের কোনো হাত নেই। আল্লাহপাক একমাত্র সৃষ্টিকর্তা। যাকে যে আকৃতিতে তিনি ভালো মনে করেছেন, সেভাবেই তাকে সৃষ্টি করেছেন। আকৃতি নিয়ে ব্যঙ্গ মানে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা। করপোরেট অফিসগুলোতে আধুনিকতা ও রসিকতার নামে অসভ্য কালচার গড়ে উঠেছে। কে কাকে কীভাবে হাসির পাত্র বানাবেন অহরহ সে চেষ্টাই চলে। 

রসিকতা অবশ্যই ইসলাম সমর্থন করে। মহানবী (সা.) রসিকতা করেছেন। হাদিস শরীফে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ সা. এর কাছে এক বৃদ্ধা এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি আমাকে জান্নাত দান করেন। তখন রাসুল সা. (রসিকতা করে) বললেন, হে অমুকের মা; জান্নাতে কোনো বৃদ্ধা প্রবেশ করবে না। পরে বৃদ্ধা মহিলাটি কাঁদতে কাঁদতে ফিরে যাচ্ছিল। তখন রাসুল সা. সাহাবাদের বললেন, তাকে গিয়ে বল, সে বৃদ্ধা হয়ে যাবে না; বরং সে তরুণী ও চিরকুমারী হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (শামায়েলে তিরমিজি : ২৪১) 

রসিকতা সত্য ও বাস্তবধর্মী হতে হবে। মিথ্যাচার বা কাউকে খাটো করার জন্য হবে না। স্বামী স্ত্রীর সঙ্গে রসিকতা করতে পারে। বাবা সন্তানদের সঙ্গে। এতে সম্পর্কে বৈচিত্র্য ও দৃঢ়তা আসে। বন্ধন হয় শক্ত। অথচ সমাজে হচ্ছে উল্টোটা। ভরা মসলিস। একজনকে নিয়ে কেউ ব্যঙ্গ করল। এমন কথা তার নামে বলা হলো যা সম্পূর্ণই মিথ্যা। সবাই হো হো করে হেসে লুটিয়ে পড়ল। লজ্জা আর অপমানে ওই ব্যক্তি তখন মুখ লুকায়। চোখে পানি এসে যায়। যারা এমন কাজ করে তাদের ধ্বংস অনিবার্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ধ্বংস ওই ব্যক্তির জন্য যে মানুষকে হাসানোর জন্য কথা বলে ও মিথ্যা বলে, তার ধ্বংস অনিবার্য, তার ধ্বংস অনিবার্য। (তিরমিজি : ২২৩৭)। 

আমরা যদি ধ্বংস হতে না চাই তাহলে কর্মক্ষেত্র, পরিবার, পারিবারিক অনুষ্ঠানসহ সামগ্রিক জীবনে কাউকে নিয়ে উপহাস, ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ধরনের কাজ কেউ করলে তাকে ইসলামি বিধি-বিধান বোঝাতে হবে। এটা অবশ্যই নেক কাজ। মানুষ হিসেবে এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।