যুদ্ধ বদলে দিতে আসছে ‘আত্মঘাতী’ ড্রোন
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০১:৩৪ পিএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার

বহু বছর আগে বিখ্যাত বন্দুক ‘একে ৪৭’ তৈরি করেছিল রাশিয়ার কালাশনিকভ কোম্পানি। যুদ্ধকে একেবারে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিল এই অস্ত্র।
অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি এবার ‘সুইসাইড ড্রোন’ বা আত্মঘাতী ড্রোন তৈরি করতে চলেছে, যা আবারও বদলে দিতে যাচ্ছে প্রচলিত সমর কৌশল।
এই সপ্তাহে আবুধাবির এক অস্ত্র প্রদর্শনীতে প্রথমবারের মতো এই আত্মঘাতী ড্রোন বা কেইউবি-র একটি ছোট সংস্করণ হাজির করেছে কালাশনিকভ গোষ্ঠী। দুই বছর পরপর আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে অংশ নেয় বিশ্বের সেরা অস্ত্র নির্মাণকারী সংস্থাগুলো।
কালাশনিকভ রাইফেলের মতোই যুদ্ধের ধরন বদলে দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে ‘দক্ষ ও অল্প দামের’ এই ড্রোনের। এটির নাম রাখা হয়েছে কালাশনিকভ ড্রোন বা কেইউবি-ইউএভি ড্রোন।
নির্মাতা সংস্থার দাবি, এই ড্রোন সমসাময়িক ড্রোনগুলোর তুলনায় সস্তা। যুদ্ধকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে যাবে এটি।
চার ফুট চওড়া এই ড্রোন প্রায় ৩ কেজি বিস্ফোরক সঙ্গে নিয়ে ঘণ্টায় ৮০ মাইল বেগে ৩০ মিনিট উড়তে পারবে।
একটা কফি টেবিলের আকারের এই ড্রোন লক্ষ্যবস্তুকে প্রায় ৬৪ কিলোমিটার দূরে নিক্ষেপ করতে সক্ষম।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ও ‘ড্রোনস অ্যান্ড টেরোরিজম’ বইয়ের লেখক নিকোলাস গ্রসম্যানের মতে, ‘এই অস্ত্র হাতে পেলে বড় আধুনিক সামরিক বাহিনী ও ছোট মাপের বাহিনীর মধ্যে ফাঁরাক মুছে যাবে।’
এটি একেবারে নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। এটির ‘হাইডিগ্রি অ্যাকিউরেসি’ বা অতি উচ্চমানের অভ্রান্ত ধ্বংস ক্ষমতা রয়েছে বলে মন্তব্য তার।
মার্কিন প্রযুক্তিতে তৈরি অস্ত্রের বদলে সিরিয়া ও আফগানিস্তানের সেনাদের জন্য সেকেন্ডহ্যান্ড কালাশনিকভ কিনেছে যুক্তরাষ্ট্রের পেন্টাগনও। প্রস্তুতকারক সংস্থা জানাচ্ছে, একে ৪৭-এর মতোই কালাশনিকভ ড্রোন বা কেইউবি-ও নিয়ন্ত্রণ করা খুব সহজ।
তবে, সুইসাইড ড্রোন যে নতুন তা নয়। সিরিয়ার মসুল ও রাকা দখলের সময়ে ইসলামিক স্টেট এই ধরনের ড্রোন ব্যবহার করেছিল। অবশ্য সেগুলো ছিল অন্যভাবে তৈরি।
সাধারণ ড্রোনে বিস্ফোরক বেঁধে এই সুইসাইড ড্রোন তৈরি করেছিল আইএস জঙ্গিরা। সিরিয়াতে রুশ বাহিনীকে এই ধরনের ড্রোন দিয়েই আঘাত হেনেছিল আইএস।
কম দাম, সহজ-সরল ব্যবহার পদ্ধতি, সর্বোপরি তুখোড় দক্ষতার জন্য খুব দ্রুত বিশ্বের অস্ত্রবাজার দখল করে নিয়েছিল কালাশনিকভ। কখনও সরকারের বিরুদ্ধে লড়তে, কখনও সরকারের হয়ে লড়তে এক কথায় বেছে নেয়া হয়েছে একে ৪৭।
সংস্থার দাবি, জিপিএস যুক্ত নতুন ধরনের কেইউবি ড্রোন হবে আরও দ্রুতগতিসম্পন্ন, নিখুঁত। প্রথম পর্যায়ের ড্রোনগুলোর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বিস্ফোরক বহনে সক্ষম এগুলো। তবে, এই ড্রোন কারা কিনতে পারবে, কাদের কিনতে দেয়া হবে, সেই রাজনীতি নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।
সন্ত্রাসবাদীদের হাতে এই ড্রোন-বোমা গেলে তা কতটা মারাত্মক, সেটা নিয়ে ভাবছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর উপরে হামলার জন্য এই ধরনের ড্রোন ব্যবহার হয় বলে দাবি তাদের।
কিছুদিন আগে লন্ডন, ডাবলিন, নিউইয়র্ক বিমানবন্দরের আশপাশে সন্দেহজনকভাবে ড্রোনের ঘোরাফেরা দেখে তড়িঘড়ি বন্ধ করে দেয়া হয় বিমানবন্দর। যা দেখে মনে করা হচ্ছে, ড্রোনের সাহায্যে হামলার হুমকি রুখতে প্রস্তুত নয় পশ্চিমা সেনারা।