সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মিথ্যা থেকে বাঁচার উপায়

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১০:৫৭ এএম, ১ মার্চ ২০১৯ শুক্রবার

মানুষের মধ্যে কিছু বদ ও খারাপ অভ্যাস আছে যেগুলো বাদ দিলে মিথ্যার হাত থেকে বাঁচা যাবে। যেমন-

 

(১) শ্রুত বিষয় যাচাইবিহীন প্রচার না করা : মানুষের মধ্যে একটি স্বাভাবিক প্রবণতা আছে যে, অন্যের নিকট থেকে শোনা বিষয় যাচাই-বাছাই ছাড়াই প্রচার করা। অথচ এটি মিথ্যাবাদী হওয়ার অন্যতম কারণ। কেননা মানুষের কাছ থেকে শোনা কথা সত্য নাও হতে পারে। তাই মিথ্যা থেকে
বাঁচতে হলে শোনা কথা যাচাই না করে প্রচার করা যাবে না।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো লোকের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে (যাচাই না করে) তাই বলে বেড়ায়’।  

(২) মন্দ ধারণা না করা : কোনো বিষয়ে সঠিক কিছু না জেনে শুধু ধারণা ও অনুমানের ভিত্তিতে কথা ও কাজের কারণে সমাজে হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। ফলে অনেক পরিবারে ও সংসারে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। তাই মহান আল্লাহ বল, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা অধিক ধারণা হতে বিরত থাক। নিশ্চয়ই
কিছু কিছু ধারণা পাপ’ (হুজুরাত ৪৯/১৩)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা কারো সম্পর্কে (মন্দ) ধারণা থেকে বেঁচে থাক। কেননা আনুমানিক ধারণা বড় ধরনের মিথ্যা’।

(৩) মিথ্যাবাদীকে নেতা হিসাবে গ্রণ না করা : মিথ্যাবাদীকে নেতা হিসাবে গ্রহণ করলে তার প্রভাব অনুসারীদের উপর পড়বে। ফলে অনুসারীরাও মিথ্যায় অভ্যস্ত হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং তুমি মিথ্যাবাদীদের অনুসরণ করো না’ (ক্বালাম ৬৮/৮)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা মুনাফিককে নেতা হিসাবে গ্রহণ কর না। কেননা মুনাফিক যদি নেতা হয়, তাহলে তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে অসন্তুষ্ট করলে।’

(৪) ওয়াদা পালন করা ও আমানত রক্ষা করা : ওয়াদা রক্ষা করা ও আমানত পূর্ণ করা মিথ্যা থেকে বাঁচার অন্যতম মাধ্যম। এর দ্বারা মানুষ ধ্বংসাত্মক পরিণতি থেকে বাঁচতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ওয়াদা পূর্ণ করো। কেননা ওয়াদা সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে (বনী ইসরাঈল ১৭/৩৪)।

(৫) শিশুকে ধোঁকা না দেয়া : পিতা-মাতা বা অন্য কেউ শিশুদেরকে সান্তনা দেয়ার উদ্দেশ্যে কোনো কিছু দেয়ার আশ্বাস দিলে অবশ্যই তাকে তা দিতে হবে। অন্যথা সে মিথ্যুকদের অন্তভুর্ক্ত হবে। 
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার বাচ্চাকে বলল, এসো, নাও। অতঃপর তাকে তা দিল না
তবে সে মিথ্যুক হবে।’  

(৬) অধিক ওয়াদা করা হতে বিরত থাকা : ওয়াদা পালন না করা মুনাফিকের আলামত। তাই অধিক পরিমাণে ওয়াদা করার অভ্যাস পরিহার করা উচিত। তাহলে মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হবে। 
আল-আদাবুশ শারঈয়্যাহ’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘যে মিথ্যাকে ভয় করে সে ওয়াদা কম করে। দু’টি কাজ মিথ্যা থেকে নিরাপদ থাকতে পারে না। অধিক পরিমাণে ওয়াদা করা ও বেশি বেশি ওযর পেশ করা।’  
(৭) ঠাট্টা ও কৌতুক বর্জন করা : ইসলামী শরী‘আতে নির্দোষ কৌতুক নিষিদ্ধ নয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) সত্য কথা ও বাস্তব বিষয় নিয়ে কৌতুক ও রসিকতা করেছেন। কিন্তু মিথ্যা, ঘৃণ্য বা তিরস্কারমূলক ঠাট্টা ও কৌতুক হারাম। অনেকে মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা হাস্যকর কথা বলে থাকে।
মিথ্যা থেকে দূরে থাকতে ওগুলো সর্বোতভাবে বর্জন করা আবশ্যক। 

 

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সেই ব্যক্তির জন্য ধ্বংস নিশ্চিত যে মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা কথা বলে। তার জন্য ধ্বংস, তার জন্য ধ্বংস’। তিনি আরো বলেন, ‘আমি তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নিয়ে দিতে যামিন, যে তর্ক পরিহার করে হক্ব হলেও। আর একটি ঘর জান্নাতের মাঝামাঝিতে নিয়ে দিতে যামিন, যে মিথ্যা পরিহার করে কৌতুক করে হলেও এবং আরো একটি ঘর জান্নাতের সর্বোচ্চ নিয়ে দিতে যামিন, যে তার চরিত্রকে সুন্দর করবে।’
  
(৮) স্বল্পভাষী হওয়া : মিথ্যা থেকে বাঁচার অন্যতম পথ হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় কথা ত্যাগ করা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো
কথা বলে অন্যথা চুপ থাকে’।
  
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, মিথ্যাই সব অধঃপতন, অশান্তি ও অধঃগতির মূল। ইহকাল ও পরকালে মিথ্যা মানুষকে ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত করে। বর্তমানে মিথ্যার সয়লাব চলছে। দিশেহারা জাতি অধঃপতনের অতল তলে তলিয়ে যাচ্ছে। জাতির উত্তরণের জন্য সর্বস্তরে সততা ও
সত্যবাদিতার চর্চা হওয়া জরুরি।   

 

মহান রাব্বুল আরামিন আল্লাহ আমাদেরকে সত্যবাদিতা অবলম্বন করার এবং মিথ্যার ধ্বংসাত্মক প্রভাব থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক্ব দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন।

সূত্র: আবুদাঊদ হা/৪৯৭৭; মিশকাত হা/৪৭৮০, হাদীছ ছহীহ। আহমাদ হা/৯৮৩৫; ছহীহাহ হা/৭৪৮। আল-আদাবুশ শারঈয়্যাহ, ১/৬৯; গৃহীতঃ মাসিক আত-তাহরীক ১১/৩ ডিসেম্বর ২০০৭, পৃ. ৩১। বুখারী হা/৬১২৯; মুসলিম হা/২১৫০; মিশকাত হা/৪৮৮৪। তিরমিযী হা/২৩১৫; মিশকাত হা/৩৮৩৪; গায়াতুল মারাম হা/৩৭৬, হাদীছ হাসান। আবূদাঊদ হা/৪৮০০; ছহীহাহ হা/২৭৩। বুখারী হা/৬০১৮; মুসলিম হা/৪৭; তিরমিযী হা/১৯৬৭।

মানুষের মধ্যে কিছু বদ ও খারাপ অভ্যাস আছে যেগুলো বাদ দিলে মিথ্যার হাত থেকে বাঁচা যাবে। যেমন-

(১) শ্রুত বিষয় যাচাইবিহীন প্রচার না করা : মানুষের মধ্যে একটি স্বাভাবিক প্রবণতা আছে যে, অন্যের নিকট থেকে শোনা বিষয় যাচাই-বাছাই ছাড়াই প্রচার করা। অথচ এটি মিথ্যাবাদী হওয়ার অন্যতম কারণ। কেননা মানুষের কাছ থেকে শোনা কথা সত্য নাও হতে পারে। তাই মিথ্যা থেকে
বাঁচতে হলে শোনা কথা যাচাই না করে প্রচার করা যাবে না।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো লোকের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে (যাচাই না করে) তাই বলে বেড়ায়’।  

(২) মন্দ ধারণা না করা : কোনো বিষয়ে সঠিক কিছু না জেনে শুধু ধারণা ও অনুমানের ভিত্তিতে কথা ও কাজের কারণে সমাজে হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। ফলে অনেক পরিবারে ও সংসারে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। তাই মহান আল্লাহ বল, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা অধিক ধারণা হতে বিরত থাক। নিশ্চয়ই
কিছু কিছু ধারণা পাপ’ (হুজুরাত ৪৯/১৩)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা কারো সম্পর্কে (মন্দ) ধারণা থেকে বেঁচে থাক। কেননা আনুমানিক ধারণা বড় ধরনের মিথ্যা’।

(৩) মিথ্যাবাদীকে নেতা হিসাবে গ্রণ না করা : মিথ্যাবাদীকে নেতা হিসাবে গ্রহণ করলে তার প্রভাব অনুসারীদের উপর পড়বে। ফলে অনুসারীরাও মিথ্যায় অভ্যস্ত হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং তুমি মিথ্যাবাদীদের অনুসরণ করো না’ (ক্বালাম ৬৮/৮)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা মুনাফিককে নেতা হিসাবে গ্রহণ কর না। কেননা মুনাফিক যদি নেতা হয়, তাহলে তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে অসন্তুষ্ট করলে।’

(৪) ওয়াদা পালন করা ও আমানত রক্ষা করা : ওয়াদা রক্ষা করা ও আমানত পূর্ণ করা মিথ্যা থেকে বাঁচার অন্যতম মাধ্যম। এর দ্বারা মানুষ ধ্বংসাত্মক পরিণতি থেকে বাঁচতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ওয়াদা পূর্ণ করো। কেননা ওয়াদা সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে (বনী ইসরাঈল ১৭/৩৪)।

(৫) শিশুকে ধোঁকা না দেয়া : পিতা-মাতা বা অন্য কেউ শিশুদেরকে সান্তনা দেয়ার উদ্দেশ্যে কোনো কিছু দেয়ার আশ্বাস দিলে অবশ্যই তাকে তা দিতে হবে। অন্যথা সে মিথ্যুকদের অন্তভুর্ক্ত হবে। 
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার বাচ্চাকে বলল, এসো, নাও। অতঃপর তাকে তা দিল না
তবে সে মিথ্যুক হবে।’  

(৬) অধিক ওয়াদা করা হতে বিরত থাকা : ওয়াদা পালন না করা মুনাফিকের আলামত। তাই অধিক পরিমাণে ওয়াদা করার অভ্যাস পরিহার করা উচিত। তাহলে মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হবে। 
আল-আদাবুশ শারঈয়্যাহ’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘যে মিথ্যাকে ভয় করে সে ওয়াদা কম করে। দু’টি কাজ মিথ্যা থেকে নিরাপদ থাকতে পারে না। অধিক পরিমাণে ওয়াদা করা ও বেশি বেশি ওযর পেশ করা।’  
(৭) ঠাট্টা ও কৌতুক বর্জন করা : ইসলামী শরী‘আতে নির্দোষ কৌতুক নিষিদ্ধ নয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) সত্য কথা ও বাস্তব বিষয় নিয়ে কৌতুক ও রসিকতা করেছেন। কিন্তু মিথ্যা, ঘৃণ্য বা তিরস্কারমূলক ঠাট্টা ও কৌতুক হারাম। অনেকে মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা হাস্যকর কথা বলে থাকে।
মিথ্যা থেকে দূরে থাকতে ওগুলো সর্বোতভাবে বর্জন করা আবশ্যক। 

 

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সেই ব্যক্তির জন্য ধ্বংস নিশ্চিত যে মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা কথা বলে। তার জন্য ধ্বংস, তার জন্য ধ্বংস’। তিনি আরো বলেন, ‘আমি তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নিয়ে দিতে যামিন, যে তর্ক পরিহার করে হক্ব হলেও। আর একটি ঘর জান্নাতের মাঝামাঝিতে নিয়ে দিতে যামিন, যে মিথ্যা পরিহার করে কৌতুক করে হলেও এবং আরো একটি ঘর জান্নাতের সর্বোচ্চ নিয়ে দিতে যামিন, যে তার চরিত্রকে সুন্দর করবে।’
  
(৮) স্বল্পভাষী হওয়া : মিথ্যা থেকে বাঁচার অন্যতম পথ হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় কথা ত্যাগ করা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো
কথা বলে অন্যথা চুপ থাকে’।
  
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, মিথ্যাই সব অধঃপতন, অশান্তি ও অধঃগতির মূল। ইহকাল ও পরকালে মিথ্যা মানুষকে ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত করে। বর্তমানে মিথ্যার সয়লাব চলছে। দিশেহারা জাতি অধঃপতনের অতল তলে তলিয়ে যাচ্ছে। জাতির উত্তরণের জন্য সর্বস্তরে সততা ও
সত্যবাদিতার চর্চা হওয়া জরুরি।   

 

মহান রাব্বুল আরামিন আল্লাহ আমাদেরকে সত্যবাদিতা অবলম্বন করার এবং মিথ্যার ধ্বংসাত্মক প্রভাব থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক্ব দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন।

সূত্র: আবুদাঊদ হা/৪৯৭৭; মিশকাত হা/৪৭৮০, হাদীছ ছহীহ। আহমাদ হা/৯৮৩৫; ছহীহাহ হা/৭৪৮। আল-আদাবুশ শারঈয়্যাহ, ১/৬৯; গৃহীতঃ মাসিক আত-তাহরীক ১১/৩ ডিসেম্বর ২০০৭, পৃ. ৩১। বুখারী হা/৬১২৯; মুসলিম হা/২১৫০; মিশকাত হা/৪৮৮৪। তিরমিযী হা/২৩১৫; মিশকাত হা/৩৮৩৪; গায়াতুল মারাম হা/৩৭৬, হাদীছ হাসান। আবূদাঊদ হা/৪৮০০; ছহীহাহ হা/২৭৩। বুখারী হা/৬০১৮; মুসলিম হা/৪৭; তিরমিযী হা/১৯৬৭।