শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রোগীর সেবা করার কিছু আদব

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৯:৪২ পিএম, ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ শুক্রবার

রোগীর সেবা একটি মহৎ গুণ। পারস্পরিক ভালোবাসা, হৃদ্যতা ও অনুপম সেতুবন্ধন গড়ার অনন্য মাধ্যম। ইসলাম এ বিষয়টির প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। নিম্নে এ সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা হলো।

সেবা-শুশ্রুষার বিধান ও ফজিলত: ‘ইয়াদাত’ এর সাধারণ অর্থ পরিচর্যা। তবে এটি বহুল ব্যবহৃত হয় রোগীর পরিচর্যা বা সেবার ক্ষেত্রে। (মওসুআতুল ফিকহিয়্যা: ৩১/৭৬)

অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করার হুকুম সম্পর্কে ফুকাহায়ে কেরামের বিভিন্ন মত রয়েছে। যথা: ১. সুন্নত ২. মোস্তাহাব ৩. ওয়াজিব ৪. সুন্নতে কেফায়া ও ৫. ফরজে কেফায়া। প্রণিধানযোগ্য মত হলো, যদি রোগীর দেখাশোনা করার কেউ থাকে তাহলে সুন্নত; অন্যথায় ওয়াজিব। (মেরকাত: ৩/১১২০) বোখারি শরিফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইবনে হজর আসকলানি (র.) বলেন, ‘ রোগীর সেবা-শুশ্রুষা মূলত মোস্তাহাব; কিন্তু কোনো কোনো সময় কিছু লোকদের ক্ষেত্রে তা ওয়াজিবের পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

 

সেবা-শুশ্রুষার কিছু আদব: ইসলামের অন্যান্য ইবাদতের মতো সেবা-শুশ্রুষারও স্বতন্ত্র কিছু আদব ও শিষ্টাচার রয়েছে। বর্তমানে মানুষ সেবা-শুশ্রুষার আদব সম্পর্কে জ্ঞান না রাখার কারণে রোগীকে সান্তনা ও মনোরঞ্জন দেয়ার পরিবর্তে কষ্টের কারণ হয়ে দঁড়ায়। নবী করিম (সা.) রোগী দেখার কিছু আদব উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন; সবার উচিৎ তার অনুসরণ করা। যেমন:

১. রোগী দেখতে গিয়ে সর্বপ্রথম সুস্থতার দোয়া করা ও তার সঙ্গে উত্তম কথা বলা। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘নবী করিম (সা.) এর আমল ছিল যখন কেউ অসুস্থ হতো তখন তিনি রোগীকে স্বীয় ডান হাত দ্বারা স্পর্শ করতেন এবং এ দোয়া পড়তেন, اذهب البأس رب الناس واشف انت الشافي لا شفاء الا شفاءك شفاء لا يغادر سقما (بخاري)

হজরত উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘অসুস্থ ও মৃতব্যক্তির ঘরে যাও এবং উত্তম কথা বলো। কেননা ফেরেশতারা তোমাদের কথার সঙ্গে ‘আমিন’ বলেন।’

এমনিভাবে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, ‘একবার আমি নবী করিম (সা.) এর কাছে গেলাম, তিনি তখন জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার তো দেখছি প্রচণ্ড জ্বর! নবিজী (সা.) বললেন, ‘তুমি ঠিক কথা বলছো। তোমাদের মধ্যে দু’জন ব্যক্তির সমপরিমাণ জ্বর আমার হয়।’ আমি বললাম, ‘এটা কি এজন্য হয় যে আপনার প্রতিদান (আমাদের তুলনায়) দ্বিগুণ?’ নবিজী (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ, মুসলমান যখন অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে কষ্ট পায়, তখন আল্লাহ তায়ালা এর পরিবর্তে তার গুনাহসমূহকে ঐভাবে মিটিয়ে দেন, যেভাবে গাছ তার পাতা ঝরিয়ে দেয়।’

২. অসুস্থ ব্যক্তির নিকট কম সময় অবস্থান করা:

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রোগী দেখার আদব হলো, তার কাছে অল্প সময় বসা ও শোরগোল না করা। (মিশকাত) নবী করিম (সা.) আরো বলেন, রোগী দেখার সময় কেবল এতটুকুই হওয়া উচিৎ, যতোটুকু সময় একটা উটকে দ্বিতীয়বার দোহন করার মাঝে অতিবাহিত হয় (অর্থাৎ খুব স্বল্প সময়)।’ হজরত সাইদ ইবনে মুসাইয়াব (রা.) বলেন, ‘সর্বোত্তম সেবা হলো রোগির নিকট থেকে খুব তাড়াতাড়ি চলে আসা।’ (মেশকাত)

এসকল হাদিসের প্রতি লক্ষ করে উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে ঐকমত্য ব্যক্ত করেছেন যে, রোগীর সেবা-শুশ্রুষা করতে গিয়ে এতোটুকু দেরি না করা, যার কারণে রোগীর কষ্ট হয়। মোল্লা আলি কারি (রহ.) কোনো কোনো আলেম থেকে বর্ণনা করেন, আমরা একবার প্রসিদ্ধ বুজুর্গ সরি সাকতি (রহ.) এর সেবা-শুশ্রুষার জন্য গেলাম। তার নিকট আমরা অনেকক্ষণ যাবত বসে থাকি। তিনি পেটের ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন অথচ আমরা সেখান থেকে উঠছিলাম না। শেষমেশ আমরা তাকে বললাম, ‘আমরা এখন উঠি, আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’ তিনি আমাদের জন্য এ দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি এদের অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করার আদব শিক্ষা দিন!’

৩. কেবল আল্লাহকে খুশি করার জন্য রোগীর সেবা করা:

রোগীর সেবাসহ সকল আমল কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য হওয়া উচিৎ। ব্যক্তি স্বার্থ, দুনিয়াবি লাভ বা লোকদেখানোর জন্যে কখনোই যেনো কোনো আমল না হয়। কারণ এগুলো আমলকে নষ্ট করে দেয়। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ ওই ব্যক্তির ওপর রহমত বর্ষণ করুন যিনি ফজরের নামাজ পড়ে মহান রবের সন্তুষ্টি লাভ ও পরকালের (উত্তম প্রতিদান) অর্জনের জন্য কোনো অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করার জন্য যায়। আল্লাহ তার প্রতি কদমে একটি নেকি দান করেন, একটি গুনাহ মাফ করে দেন। আর যখন সে অসুস্থ ব্যক্তির পাশে বসে, সে যেনো সওয়াবের সমুদ্রে ডুবে যায়।’

৪. অসুস্থ ব্যক্তিকে তার জন্য ক্ষতিকর নয় এমন পছন্দনীয় খাবার খাওয়ানো: অসুস্থাবস্থায় মুখের স্বাদ পরিবর্তন হয়ে যায়। এসময় সে মনের চাহিদা অনুযায়ী বিশেষ কিছু খেতে চায়। যদি সে খাবার অসুস্থ ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর না হয় এবং ডাক্তারও তা খেতে বারণ না করেন, তাহলে রোগিকে সে খাবার খেতে বাধা দেয়া যাবে না। বরং যেখান থেকেই সম্ভব হয়, তা জোগাড় করে রোগীকে খাওয়ানো উচিৎ। হজরত সালমান (র.) নবী করিম (সা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, ‘যে ব্যক্তি কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে তার পছন্দনীয় খাবার খাওয়াবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন।’

 

একবার নবী করিম (সা.) একজন রোগী দেখতে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার কন জিনিস খেতে মন চায়?’ সে বললো, ‘গন্দমের রুটি খেতে মন চাচ্ছে।’ নবী করিম (সা.) বললেন, ‘যার কাছে গন্দমের রুটি আছে, তার উচিৎ এ ভাইটির জন্য তা পাঠিয়ে দেয়া।’ অতপর নবী করিম (সা.) বললেন, ‘তোমাদের মধ্য থেকে কোনো রোগী যদি কোনো খাবার খেতে চায়, তাকে তা খাওয়ানো উচিৎ।’ (ইবনে মাজাহ)