বুধবার   ২০ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৫ ১৪৩১   ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রজনীকান্তের জানা-অজানা ও সিনেমার যত লুক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১১:৫৩ এএম, ১২ মার্চ ২০১৯ মঙ্গলবার

জীবিকার টানে কী না করেছেন তিনি! এক সময় ছিলেন সামান্য ছুতার মিস্ত্রী। সেখান থেকে পেট চালানোর জন্য কখনো কুলি হয়েছেন, কখনো বাস হেল্পার, কখনো মুছি আবার কখনো ড্রাইভার হয়েছেন। সেই মানুষটিই পরবর্তীতে তামিল সিনেমার কিংবদন্তিতে পরিণত হবেন কে বা জানতো! 

বলছিলাম একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং সাংস্কৃতিক প্রতীক রজনীকান্তের কথা। যিনি চলচ্চিত্র জগতে অভিষেক করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত তামিল ‘অপূর্ব রাগাঙ্গাল’ শীর্ষক (১৯৭৫) পরিচালিত ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে, এর পরিচালক ছিলেন কে.বলচন্দ্র, যার উপদেশে তিনি সিনেমাতে নায়ক হয়েছিলেন।

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্রসহ অন্যান্য দেশের সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন। লম্বা ক্যারিয়ারে তিনি হিন্দি ও তামিল ছাড়াও ভারতের অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষায় ১৫০টিরও বেশি সিনেমায় কাজ করেছেন। একেকটা সিনেমায় এসেছেন একেক অবতারে। জীবনের অনেক রঙয়ের মত তিনি সিনেমাতেও এসেছেন অসংখ্য ভিন্নরুপে। সব মিশ্রণে এসে তিনি চমকে দিয়েছেন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে।

 

রজনীকান্তের শৈশব কেটেছে ভারতীয় শহর বেঙ্গালুরুতে। সে সময়টা তার কেটেছে অসচ্ছল জীবনের সাথে লড়াই করে। বেঙ্গালুরু মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের বাসের সহকারী হিসেবে কাজ করা অবস্থায় তিনি নাটকে অভিনয় করতেন। তিনি ১৯৭৩ সালে মাদ্রাজ আসেন “মাদ্রাজ ফিল্ম ইনিস্টিটিউট” থেকে অভিনয়ের উপর ডিপ্লোমা পড়ার জন্য। তামিল চলচ্চিত্রে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে করতে রজনীকান্ত একসময় অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। এর আগে নিম্নমানের আরো কত কী করেছেন তিনি।

এদিকে অভিনয়ে আসার পর থেকে ভারতীয় জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে তিনি “অভিনয় দেবতা” হিসেবে জনপ্রিয় হন। সিনেমায় তার আচরণ এবং সংলাপের ধরন তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। “শিবাজী” সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি ২৬০ মিলিয়ন (US$৩.৬২ মিলিয়ন) সম্মানী নেওয়ার পর জ্যাকি চ্যানের মত এশিয়ার সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক গ্রহণকারী তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

২০১৩ সালে, তিনি ছয়টি “তামিলনাডু স্টেট চলচ্চিত্র পুরস্কার” অর্জন করেন। যার মধ্যে চারটি সেরা অভিনেতা এবং বাকি দুইটি সেরা সহ-অভিনেতা হিসেবে বিশেষ পুরস্কার এবং ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতা পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ভারতের তৃতীয় বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণ অর্জন করেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি একজন স্বেচ্ছাসেবী উৎসাহদাতা এবং ড্রাভিডিয়ান রাজনীতিতে সেবা দানকারী হিসেবে পরিচিতি পান। এরপর জনপ্রিয় হয়ে তিনি লতা রাঙ্গাচড়িকে বিয়ে করেন (১৯৮১ সালে)। সে সময় এক আলোচনা সভায় তাদের প্রথম সাক্ষাত হয়। সেখান থেকে তাদের পরিচয় ও পরিণয় ঘটে। বর্তমানে তাদের পরিবারে দুই সন্তান বিদ্যামান।

 

শৈশবকাল: রজনীকান্ত ১৯৫০ সালে ১২ ডিসেম্বরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভারতের মিসোর রাজ্যের বেঙ্গালুরুতে একটি মারাঠি পরিবারে জন্ম নেন, যা বর্তমানে কার্নাটকের একটি অংশ হিসেবে ধরা হয়। তার নাম রাখা হয় ছত্রপতি শিবাজীর নাম অনুসারে। 

শিবাজী রাও গায়েকোয়াড, একজন যোদ্ধা এবং যিনি মারাঠি এবং কন্নড় ভাষার মানুষদের সিনেমায় আনেন। রজনীকান্তের পূর্বপুরুষরা মাভদি কাদি পাথার নামে একটি গ্রাম থেকে আসেন, যা বর্তমানে মহারাষ্ট্রের পুনে জেলার পুরান্দার তালুক নামের একটি স্থান। দুই বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন রজনীকান্তের বাবা। তার বাবা ১৯৫৬ সালে কাজ হতে অবসরগ্রহণ করেন। এরপর তার পরিবার হনুমান্থনগর নামক স্থানে স্থানান্তরিত হয় এবং সেখানে একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। ছয় বছর বয়সে, রজনীকান্ত “গাভিপুরাম সরকারি কন্নড় মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে” ভর্তি হন এবং সেখানে তার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন।

শিশু হিসেবে রজনীকান্ত ক্রিকেট, ফুটবল এবং বাস্কেটবল খেলতে অনেক আগ্রহী ছিলেন এবং অনেক দুষ্ট ছিলেন। ওই সময় তার ভাই তাকে রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃক স্থাপিত রামকৃষ্ণ মঠে নিয়ে যান। মঠে তিনি বেদ শিখতেন, ঐতিহ্যবাহী এবং ঐতিহাসিক গ্রন্থ, যা তার মনে ভীষণ প্রভাব ফেলে। আধ্মাতিক শীক্ষার সাথে, তিনি মাঠে নাটকে অভিনয়ও করা শুরু করেন। এরপর থেকে অভিনয়ের প্রতি তার অদম্য স্পৃহা জাগে এবং তিনি হিন্দু মহাকাব্য মহাভারত-এ “একলব্যহ” এর বন্ধুর চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। ওই সময় তার পরিবেশনা দর্শকের কাছ থেকে এবং কন্নড় কবি ডি.আর.বেন্দ্রের কাছ থেকে আলাদাভাবে প্রসংশা অর্জন করেন।

 

সময়ের সাথে তিনি যখন এগারো বছর বয়সে পা দেন তখন তার মা মারা যান। ষষ্ঠ শ্রেণি পড়া সম্পন্ন করার পর, রজনীকান্ত আচার্য্য পাঠশালা পাবলিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ওখান থেকে তিনি প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় কোর্স সম্পন্ন করেন। আচার্য্য পাঠশালায় পড়ার সময়, তিনি নাটকে অভিনয়ে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। এই রকম একটি উপলক্ষে তিনি কুরুক্ষেত্র নাটকের “দূর্যধন” চরিত্রে অভিনয় করেন। বিদ্যালয়ে পড়া সম্পন্নের পর তিনি বেঙ্গালুরু এবং মাদ্রাজ শহরে বিভিন্ন রকম কাজ করেন, এমনকি কুলি এবং মিস্ত্রীর কাজও করেন এবং পরিশেষে তিনি বেঙ্গালুরু ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের বাসের সহকারী হিসেবে নিয়োগ পান। তখনই কন্নড় স্টেজ নাটক রচয়িতা তোপী মুনিয়াপ্পা তাকে একটি পৌরাণিক চরিত্রে অভিনয়ের জন্যে প্রস্তাব দেন, এরপর থেকে তিনি কন্নড় নাটকে অভিনয় করেন। 

ওই সময়, সদ্য গঠিত মাদ্রাজ ফিল্ম ইউনিস্টিটিউটের বিভিন্ন অভিনয় কোর্স নিয়ে নির্মিত একটি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পরিচিত হয়ে তিনি অভিনয় করতে যান। যদিও তার পরিবার এই প্রতিষ্ঠানে যাওয়া পুরোপুরি সমর্থন করেনি তার বন্ধু এবং সহকর্মী তাকে ঐ প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্যে উৎসাহ প্রদান করে এবং তাকে এর জন্য আর্থিকভাবে সমর্থন দেয়। সেই প্রতিষ্ঠানে থাকাকালীন সময়ে তিনি স্টেজ নাটকে অভিনয় করতেন, ফলে তিনি তামিল চলচ্চিত্র পরিচালক কে.বলচান্দের নজর কাড়েন। পরিচালক তাকে তামিল ভাষা শিখতে পরামর্শ দেন এবং তিনি অতি দ্রুত সেই পরামর্শ অনুসরণ করেন।

আজ ডেইলি বাংলাদেশের পাঠকদের দেখাবো রজনীকান্তের অভিনীত বিভিন্ন সিনেমার নানা লুক, যেসব লুকে তিনি হাজির হয়েছিলেন। আগেই বলেছি লম্বা ক্যারিয়ারে তিনি হিন্দি, তামিল ছাড়াও ভারতের অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষায় ১৫০টিরও বেশি সিনেমায় কাজ করেছেন। একেকটা সিনেমায় এসেছেন একেক অবতারে।

ছবিতে দেখে নেয়া যাক তার সিনেমার বিভিন্ন লুক-