যে কারণে সেরা অলরাউন্ডার তিনি
নিউজ ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৩:২২ পিএম, ১৩ মার্চ ২০১৯ বুধবার
এক হাতে যার অনেক গুণ। যিনি রাঁধতেও জানেন, চুলও বাঁধতে জানেন তাকে তো নিঃসন্দেহে অলরাউন্ডার বলাই যায়! আরো একটু খোলাসা করে বলি, যিনি একাধারে পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা, স্ক্রিপ্ট রাইটার এবং প্লে-ব্যাক সিঙ্গার – তাকে তো আমরা সব কিছুতে পারদর্শী বলতে পারি। এমনই একজন হলেন বলিউড অভিনেতা ফারহান আহমেদ। যার নামের পাশে শুধু অলরাউন্ডার না, সেরা অলরাউন্ডার খেতাবটি-ই বেশি শোভা পাবে! অন্তত লেখকের চোখে তিনিই বলিউডের সেরা অলরাউন্ডার!
বলিউডে ফারহানের মতো বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়তো আরো অনেকেই আছেন কিন্তু তার মতো মিডিয়ার প্রত্যেকটা বিভাগে সমান পারদর্শী এমনই খুব কম জন-ই আছেন! তাই বলিউডের এই নায়ককে একালের সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে তুলনা করলে ভুল হবে না। মাত্র ১৭ বছর বয়সে যশ রাজ পরিচালিত ‘লামহে’ মুভিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন ফারহান। এরপর পরিচালক হিসেবে তার প্রথম অভিষেক ২০০১ সালে রিলিজ হওয়া ‘দিল চাহতা হ্যাঁয়’-র মাধ্যমে। বলা হয়ে থাকে, বিংশ শতকের হিন্দি সিনেমা নব্বইয়ের দশক পেরিয়ে নিজের আলাদা অস্তিত্ব তৈরি করেছিল এই সিনেমাটির মাধ্যমে।
‘দিল চাহতা হ্যাঁয়’ দর্শক-সমালোচকদের ভূয়সী প্রশংসা পাওয়ার পাশাপাশি বক্স অফিসেও বাজিমাত করেছিল। জিতেছিল একটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং দু’টি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড। এরপর পরপরই তিন বছরের বিরতি নিয়ে নেন পরিচালক। তারপর তিনি হৃতিক রোশন-প্রীতি জিনতাকে নিয়ে নির্মান করেন দ্বিতীয় সিনেমা ‘লক্ষ্য’। তবে এবার আর আগের মতো ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না। সমালোচক দ্বারা প্রশংসিত হলেও বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল সিনেমাটি। আর এর মাধ্যমে অনেকেই মনে করেছিল ফারহানকে দিয়ে আর হবে না।
কিন্তু ২০০৬ সালে সে ভুল ভেঙে দিয়েছিল ফারহান। বাবার লেখা বিখ্যাত ‘ডন’-এর রিমেক করেন তিনি এবং এখানেও সফল হন ফারহান। ২০১১ সালে ‘ডন’-এর সিক্যুয়েল ‘ডন টু’ পরিচালনা করেন। তবে এবার আর রিমেক নয়, মৌলিক গল্পের ‘ডন টু’ সে বছরের ব্যবসা সফল মুভিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল।
অভিনেতা ফারহান-এর পথচলা শুরু ২০০৮ সালে রিলিজ হওয়া মিউজিক্যাল-ড্রামা ‘রক অন’ দিয়ে! অথচ অভিষেক কাপুর যখন এই মুভির স্ক্রিপ্ট শোনাচ্ছিলেন তখনও তিনি জানতেন না যে, তাকে প্রযোজক নয় অভিনেতা হিসেবে চাচ্ছেন পরিচালক! প্রথম বারের মতো প্লে-ব্যাকও করেন এই মুভিতে। ‘রক অন’ বক্স অফিস সফলতা পাওয়ার পাশাপাশি জিতেছিলো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ফারহান পেয়েছিলেন সেরা নবাগত হিসেবে ফিল্মফেয়ার!
এর পরের বছর ফারহানের রিলিজ হওয়া ‘কার্তিক কলিং কার্তিক’-এ বলিউডের অন্যতম সেরা সাইকোলজিকাল থ্রিলার হিসেবে ধরা হয়। ২০১১ সালে ফারহান অভিনয় করেন বোন জয়া আখতার পরিচালিত ক্রিটিক্যাল-কমার্শিয়াল সাকসেস ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’-তে, যেটার জন্য সেরা পার্শ্বঅভিনেতা হিসেবেও তিনি জিতেছেন ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড।
রাকেশ ওম প্রকাশ মেহরার পরিচালনায় ২০১৩ সালে ফারহান ভারতীয় জীবন্ত কিংবদন্তি অ্যাথলেট মিলখা সিং রূপে দর্শকদের সামনে হাজির হন সেখানেও তিনি সফল। স্বয়ং মিলখা সিং তার অভিনয়ের প্রশংসা করে বলেছিলেন, ফারহান-কে দেখে আমার একবারও মনে হয়নি তিনি আসল মিলখা নন। আমি পর্দায় যেন নিজেকে নিজে দেখছি! এর মাধ্যমে মিলখা সিংয়ের মতো দর্শক-সমালোচকদের মনও জয় করতে সক্ষম হন ফারহান। ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ বক্স অফিসে সুপার হিট হয় এবং ৫৯ তম ফিল্মফেয়ারে সেরা সিনেমা, পরিচালক, অভিনেতা সহ মোট ছয়টি ক্যাটাগরিতে অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়।
‘ভাগ মিলখা ভাগ’-র পর ফারহান অভিনীত সর্বশেষ ৬টি সিনেমার কোনোটিই ব্যবসায়িক সফলতা না পেলেও তার অভিনয় বরাবরের মতোই প্রশংসিত হচ্ছে।
ফারহান এক সাথে এতকিছু করেন যে, যে কোনো সময়ই তিনি কোনো একটা বিভাগে তার সাফল্য দেখানই। এই যেমন, গেল ৬টা সিনেমায় তিনি অভিনেতা হিসেবে বানিজ্যিক ভাবে ব্যর্থ, আবার প্রযোজক হিসেবে তার সর্বশেষ কাজ ‘গোল্ড’-এ দারুন সফল। এজন্যই তো তিনি ভারতের বিনোদন জগতের অলরাউন্ডার!