ইসলামে শিক্ষকের মর্যাদা
নিউজ ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৬:২৭ পিএম, ১৩ মার্চ ২০১৯ বুধবার
আমরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জন্যে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি। যারা আমাদের পড়ায় তারা আমাদের শিক্ষক।
শিক্ষার জন্য আমাদের শিক্ষকের সান্নিধ্যে আসার প্রয়োজন হয়। ইসলামে শিক্ষার এবং শিক্ষকের গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কী সমান হতে পারে?। (সূরা আল যুমার-৯)
শিক্ষার শেষ নেই। যে যত বেশি জ্ঞান অর্জন করেন, সে তত বেশি জ্ঞানী। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষা অর্জন করো।’ অর্থাৎ, একটি মানুষ জন্মের পর থেকেই তার শিক্ষার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে। একটি শিশু সে হাটতে শিখে, কথা বলতে শিখে, অন্যকে অনুকরণ করে ভালো-মন্দ চিনতে শিখে। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে আমৃত্যু। শেখার জন্য সেক্ষেত্রে ভালো পরিবেশ প্রয়োজন।
সামাজিকভাবে একজন শিক্ষক বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। ইসলাম ও শিক্ষক বা গুরুকে বেশ মর্যাদার দিয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের পরে ঐ ব্যক্তি সর্বপেক্ষা মহানুভব যে বিদ্যার্জন করে ও পরে তা প্রচার করে।’
শিক্ষকদের আল্লাহ ও রাসূলের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মান করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহর পরে, রাসূলের পরে ওই ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা মহানুভব যে জ্ঞানার্জন করে ও পরে তা প্রচার করে।’ (মিশকাত শরিফ)
একজন ভালো শিক্ষক বর্তমান সময়ের সব ঘটনা সম্পর্কে অবগত থাকেন এবং সে অনুযায়ী তার ছাত্রদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্যে দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। ইমাম তিরমিযী (রাহি.) আবূ উমামাহ আল বাহিলী (রা.)-র সূত্রে বর্ণনা করেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে দু’জন ব্যক্তির আলোচনা করা হলো তাদের একজন— আবিদ তথা ইবাদতমগ্ন ব্যক্তি, আরেকজন হলো শিক্ষিত ও জ্ঞানী।
তিনি বললেন, ইবাদতে মগ্ন ব্যক্তির চেয়ে শিক্ষিত ও জ্ঞানী লোকটির মর্যাদা, তোমাদের সাধারণ কারো চেয়ে আমার মর্যাদার মতো। তারপর তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষকে কল্যাণকর বিষয় শিক্ষা দেয় আল্লাহ তার ওপর অনুগ্রহ করেন। ফেরেশতা, আকাশ ও জমিনবাসী এমনকি গর্তের পিঁপড়া, পানির, মাছও তার জন্য দোয়া করে।’
শিক্ষকতা মহান পেশা যার প্রতিদান বিশাল। শিক্ষা ও শিক্ষককে উঁচু মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম।
শিক্ষকের সঙ্গে কোনো পরিস্থিতিতেই বেয়াদবি কিংবা খারাপ আচরণ করা উচিত নয়। সবসময় শিক্ষকদের সম্মান করা উচিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম শিক্ষকদের সম্মান করার তাগিদ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা জ্ঞান অর্জন কর! এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য আদব শিষ্টাচার শিখ। তাকে সম্মান কর যার থেকে তোমরা জ্ঞান অর্জন কর। (আল-মুজামুল আউসাত : ৬১৮৪)।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক ছাত্র বুঝে অথবা না বুঝে শিক্ষকের সঙ্গে বেয়াদবি করে ফেলে। যা গর্হিত কাজ। শিক্ষক পরের কথা, যার মধ্যে আল্লাহর ভয় থাকে, তার দ্বারা কখনো কোনো মানুষকে বিনা কারণে অপমান অথবা বেয়াদবি করা সম্ভব নয়। তবে সামাজিক অবক্ষয় এবং ইসলামী মূল্যবোধ না থাকার দরুন অনেক সময় এই ধরনের বাজে ঘটনা সংগঠিত হয়ে থাকে।
শিক্ষকতা অন্যতম সম্মানিত পেশা। শিক্ষকতার পদকে নবীজি (সা.) গৌরবের বলে উল্লেখ করেন। নবীজি (সা.) বলেছেন , ‘দুই ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো পদ-গৌরব লোভনীয় নয়। ১. ধনাঢ্য ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং তা সত পথে ব্যয় করার ক্ষমতা দিয়েছেন। ২. ওই ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ বিদ্যা দান করেছেন এবং সে অনুসারে সে কাজ করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়।’।
আমরা অনেক সময় দেখি সমাজে অনেকে শিক্ষকদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে এবং অনেকে সুযোগ পেলে বেয়াদবি করার চেষ্টা করে, অথচ এই ধরনের কাজ শুধুমাত্র নির্বোধ এবং নিকৃষ্ট শ্রেণীর মানুষের পক্ষে করা সম্ভব।
আল্লাহ তায়ালা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে আমাদের শিক্ষকরুপে প্রেরণ করেছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।’ মহানবীকে পৃথিবীতে সবার চেয়ে মর্যাদাবান করে পাঠানো হয়েছে। তিনি হচ্ছেন শিক্ষকদের শিক্ষক, গুরুর গুরু।
শিক্ষকরা মানুষ তৈরির কারিগর। শিক্ষকরা আমাদের গুরুজন। ইসলামে গুরুকে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দেয়ার নির্দেশ দেয়া আছে। গুরুজনকে সম্মান করার জন্য ইসলাম আদেশ করেছেন। যারা গুরুজনদের সন্মান করে না তারা রাসূল (সা.) এর দলভুক্ত নয়। হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত যে, “একদিন একজন বয়স্ক ব্যক্তি রাসূল (সা:) এর দরবারে উপস্থিত হলে উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম নিজ নিজ স্থান থেকে সরে জায়গা করে দিলেন, তখন রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ ও বড়দের সম্মান করে না সে আমাদের দলভুক্ত নয়”। (সুনানে তিরমিজি-১৯১৯)।
হজরত জায়েদ ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার তার সওয়ারিতে ওঠার জন্য রেকাবে যখন পা রাখতে যাবেন তখনি ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু রেকাবটি শক্ত করে ধরেন। হজরত জায়েদ ইবনে সাবিত তখন তাকে বললেন, ‘ হে আল্লাহর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চাচাতো ভাই! আপনি (রেকাব থেকে) হাত সরান। তখন ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘না’, আলেম ও বড়দের সঙ্গে এমন সম্মানসূচক আচরণই করতে হয়। এই ছিল সাহাবায়ে কেরাম ও আমাদের নবী রাসূলগণের শিক্ষকের প্রতি, গুরুর প্রতি এবং বড়দের প্রতি শ্রদ্ধার নমুনা।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। যুগে যুগে ইসলাম ও ইসলামী মনীষীগণ শিক্ষক ও গুরুজনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের শিক্ষা দিয়ে গেছেন। একজন শিক্ষক পারেন সামাজিক কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামি দূর করে সমাজকে আলোকিত করতে।