সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রজব মাসের তিন বিদআত

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০২:২৭ পিএম, ১৫ মার্চ ২০১৯ শুক্রবার

রজব মাস আরবি ১২ মাসের অন্যতম সম্মানিত মাস। রজব মাস পবিত্র রমযানের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণের মাস। মহান আল্লাহ এ মাসের মর্যাদা ও পবিত্রতা রক্ষায় সবরকমের হানাহানি, মারামারি ও যুদ্ধবিগ্রহ বিশেষভাবে নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।

 

তবে মনে রাখতে হবে যে কুরআন ও হাদিসে এ মাসের জন্য বিশেষ কোনো নামায ও ইবাদতের পদ্ধতি বলে দেওয়া হয়নি। কিন্তু, সমাজে এ মাসকে কেন্দ্র করে মানুষের আবিষ্কৃত কিছু ইবাদত প্রচলিত আছে। তন্মধ্য হতে প্রধান তিনটি বিদআত নিয়ে এ নিবন্ধে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।  

রজব মাসে মানুষের আবিষ্কৃত ইবাদতগুলো এই -

প্রথমত: সালাতুর রাগায়েব। তা হচ্ছে প্রথম জুমায় বাদ মাগরিব সাতটি সালামের মাধ্যমে বারো রাকাত নামায আদায় করা। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতেহা পাঠের পর সূরা কদর তিনবার পাঠ করা এবং সূরা ইখলাস পাঠ করা বারো বার। নামায শেষ হবার পর সত্তুর বার দরুদ পাঠ করা, এরপর ইচ্ছামত দুআ করা।

সন্দেহ নেই ইবাদতের এ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে বিদআত, বর্জনীয়। এ সম্পর্কিত হাদিসটি সন্দেহাতীতভাবে মাওজু। আল্লামা ইবনুল জাওযি (রহ.) তার এক রচনায় ইমাম নববি (রহ.) এর বরাতে উল্লেখ করেন যে, “আলেমগন এ নামাযের কারাহাত প্রমাণ করেছেন, আল্লাহ তাআলা এর উদ্ভাবক ও উৎপাদককে ধ্বংস করুন। এটা নিশ্চয় বিদআত, সুতরাং, সর্বার্থে বর্জনীয়। তা নিশ্চয় পথভ্রষ্টতা, মূর্খতা-তাতে পালন করা এমন কিছু, যা বর্জনীয়। আলেমদের একটি বৃহৎ শ্রেণি একে ভ্রান্ত প্রমাণ করে নানা গ্রন্থ সংকলন করেছেন, এ নামায আদায়কারীকে পথভ্রষ্ট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।”

খাত্তাবী (রহ.) বলেন, সালাতুর রাগায়েব সংক্রান্ত হাদিসটি মিথ্যার অপলাপ বৈ কিছু নয়। হাফেজ ইবনে রজব (রহ.) বলেন, রজব মাসের সাথে বিশিষ্ট কোন নামায নেই। সালাতুর রাগায়েবের ফজিলত সংক্রান্ত যাবতীয় হাদিস মিথ্যা, ভ্রান্তিপ্রসূত- যা কোনোভাবেই শুদ্ধ হতে পারে না।

অধিকাংশ আলেমের সক্রিয় রায় অনুসারে এ নামায বিদআত। হিজরি চার শতকের পরে এ নামাযের অস্তিত্ব ইতিহাসে পাওয়া যায়, তাই আমরা দেখতে পাই, প্রথম যুগের আলেমগণ এ ব্যাপারে কিছুই উল্লেখ করেননি।

দ্বিতীয়ত: মধ্য রজবের নামায। এ সংক্রান্ত যাবতীয় হাদিস মওজু (বানোয়াট)।

তৃতীয়ত: মেরাজের রাত্রির নামায। তা রজবের সাতাশ তারিখে আদায় করা হয়। একে বলা হয় লাইলাতুল মেরাজের নামায। এ এমন বিদআতী নামায, যার কোন শরঈ ভিত্তি নেই। রজব মাসেই মেরাজ সংগঠিত হয়েছে-এ দাবিরও কোন জোড়ালো ভিত্তি পাওয়া যায় না।

আবু শামাহ (রহ.) বলেন, কিছু কিছু গল্পকার বলেছেন যে, রজব মাসেই মেরাজ সংগঠিত হয়েছে। সঠিক পথের অনুসারীদের কাছে এ নিশ্চিত বিভ্রান্তি, মিথ্যা-প্রসূত।

পক্ষান্তরে আবু ইসহাক উল্লেখ করেন যে, “রবিউল আউয়ালের সাতাশ তারিখে রাসূলের মেরাজ সংগঠিত হয়।”

যারা এ হাদিসের মাধ্যমে দলিল প্রদান করে নামায আদায় করেন যে, রাসূল বলেছেন, রজব মাসে এমন এক রাত্রি রয়েছে, যে রাতের আমলকারিকে একশ বছরের পুণ্য প্রদান করা হয়। তা হচ্ছে রজবের সাতাশ তারিখ। হাফেজ ইবনে হাজার, ইমাম বায়হাকী প্রমুখ আলেম একে দুর্বল হাদিস হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

উক্ত রাত্রির আরও বিদআতের মধ্যে রয়েছে, সম্মিলিতভাবে উদযাপন, মূমূর্ষ ব্যক্তিদের জিয়ারত, খাদ্যোৎসব-ইত্যাদি।

শায়েখ আলী ক্বারী বলেন, “সন্দেহ নেই, এ খুবই মন্দ বিদআত, গর্হিত কর্ম। কারণ, তাতে অকারণে সম্পদের অপচয় করা হয়, পৌত্তলিকদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ আচরণ করা হয়।”