হাদীসে বর্ণিত চিরন্তন মহৌষধ কালোজিরা
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৩:৪১ পিএম, ১৫ মার্চ ২০১৯ শুক্রবার
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে কালোজিরা সম্পর্কে বলতে শুনেছি,
شِفَاءٌ مِنْ كُلِّ دَاءٍ إِلَّا السَّامَ
“কালোজিরা সকল রোগের প্রতিষেধক, মৃত্যু ব্যতীত।” (বুখারী, হাদিস নং : ৫৬৮৮)
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর এই হাদীসের প্রেক্ষিতে শত শত বছর ধরে মুসলমানদের মধ্যে কালোজিরার ব্যবহার প্রচলিত রয়েছে।
বিশ্বজুড়ে কালোজিরার ব্যবহার তিন হাজার বছর থেকেই চালু আছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বর্ণিত ঔষধসমূহের মধ্যে কালোজিরার অবস্থান অন্যতম।
কুরআন ও হাদীসে বিভিন্ন ঔষধি উদ্ভিদ ও প্রাকৃতিক প্রতিষেধক সম্পর্কে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে। পরবর্তীতে ইবনে সিনা ও ইবনে রুশদ সহ অন্যান্য মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানী এগুলোর গুনাগুন বর্ণনা করে বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করেন।
কালোজিরাই একমাত্র প্রতিষেধক যার সম্পর্কে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে তা মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের প্রতিষেধক।
রাসুলুল্লাহ (সা.) এর আগে কালোজিরার ব্যবহার খুব একটা জনপ্রিয় ছিল না। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর হাতেই কালোজিরার ব্যবহার ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তার পরবর্তীতে কালোজিরা সম্পর্কে মুসলিম-অমুসলিম সকল চিকিৎসাবিজ্ঞানীই গবেষণা করেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) এর পূর্বে চিকিৎসাক্ষেত্রে চারশ প্রকারের ঔষধি উদ্ভিদের ব্যবহার প্রচলিত ছিল এবং গ্যালেন ও হিপোক্রেটাসের মত প্রাচীন চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের হাতে তা লিপিবদ্ধ হয়েছিল। সেখানে কালোজিরার ব্যবহার খুব প্রচলিত ছিল না।
রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সাথে সংশ্লিষ্টতার কারনে কালোজিরা ‘রাসূলের ঔষধ’ হিসেবে অধিক পরিচিতি লাভ করে।
কালোজিরার উপকারিতা বর্ণনাই শুধু নয়, রাসুলুল্লাহ (সা.) কালোজিরা ব্যবহারের নির্দেশনাও দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন হাদীসে এই নির্দেশনা পাওয়া যায়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) এর গুরুত্ব প্রদানের কারনে মুসলিম ইতিহাসে এমন কোন যুগ থাকেনি যখন মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা কালোজিরা নিয়ে গবেষণা করেননি।
কালোজিরার মধ্যে একশটিরও অধিক উপকারী উপাদান রয়েছে। ফ্যাটি এসিড, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেটসহ বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ কালোজিরার মধ্যে রয়েছে।
স্টেরোল বিশেষ করে বিটা-স্টেরোলে কালোজিরা বিশেষভাবে সমৃদ্ধ। বিভিন্ন পোকার আক্রমন প্রতিহত করতে এটি ব্যবহৃত হতে পারে।
ভারত উপমহাদেশে রান্নায় এটি বহুল ব্যবহৃত উপাদান। বিশেষ করে গরম মশলা ও পাঁচফোরনের সাথে মিশ্রিত হয়ে কালোজিরা বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া বায়ুনাশক ও ক্লান্তিনাশক ঔষধি হিসেবে এর ব্যবহার প্রচলিত আছে। পাশাপাশি গর্ভকালীন জটিলতা দূর করতে ও নবজাতকের জন্য মায়ের বুকে দুধ আসতে কালোজিরা ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সকল রোগের ঔষধ হলেও সতর্কতার সাথে কালোজিরার ব্যবহার করা উচিত। কেননা কালোজিরার মধ্যে ম্যালানথিন, নিজিলাইন, ট্যানিন সহ বিভিন্ন উপাদান রয়েছে, যেগুলো কালোজিরার অধিক ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং, কালোজিরার ব্যবহার পরিমিতভাবে করতে হবে।